ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজিবির লিখিত অভিযোগ, বেড়া সরায়নি বিএসএফ

আন্তর্জাতিক আইন না মেনে পাঁচবিবির পূর্ব উচনা ঘোনাপাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পরবর্তীতে পতাকা বৈঠকে দেওয়া আশ্বাসের পরও বুধবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্ত থেকে কাঁটাতারের বেড়া ও খুঁটি সরানো শুরু করেনি তারা। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ভারত সীমান্তের ভেতরে নতুন করে খুঁটি ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ভোরে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে হাটখোলা ক্যাম্পের আওতাধীন পূর্ব উচনা ঘোনাপাড়া এলাকায় ২৮১ পিলারের সাব ৩৪, ৩৫ ও ৩৫ সাব পিলারে বিএসএফএফ সদস্যরা শূন্য রেখা থেকে প্রায় ২০ গজের মধ্যে কাটা তারের বেড়ার কাজ শুরু করে। এটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের লঙ্ঘন। সকালে জমিতে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ঘোনাপাড়া সীমান্তের বাসিন্দারা নির্মাণকাজ দেখতে পেয়ে হাটখোলা বিওপি কমান্ডারকে জানান। পরে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দিলে কাজ বন্ধ রাখেন বিএসএফের সদস্যরা। বিজিবি তাদের পতাকা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালেও প্রথমে বিএসএফ সাড়া দেয়নি। পরে বিজিবি পত্র দিয়ে বেলা ৩টায় পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানায়। বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের অধীন চকগোপাল ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার পতাকা বৈঠকে সাড়া দেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া ও বাঁশের খুঁটি সরানোর আশ্বাস দেয়। তবে এখন পর্যন্ত বেড়া সরিয়ে নেয়নি বিএসএফ। এ নিয়ে ২০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, হাটখোলা বিওপির পূর্ব উচনার ঘোনাপাড়া সীমান্তের ২৮১ পিলারের সাব পিলার ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ সাব পিলারের শূন্যরেখার কাছাকাছি স্থানে ভারতীয় বিএসএফ কিছু অংশে প্রায় ১০০ ফুট তারকাঁটা দিয়ে বেড়া নির্মাণ করে। বিজিবির বাধায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে বিজিবি ও বিএসএফ দুদেশের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক বসে। বৈঠকে বিএসএফ বুধবার তারকাঁটা সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা সরিয়ে নেয়নি। এ নিয়ে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে চলমান উত্তেজনার পরেই বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ বিওপির সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির সিও লেফটেন্যান্টে কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।

৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, বৈঠকে চারটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো হলো- সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশি ও ভারতীয় কৃষক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না, সীমান্ত সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। দুই দেশের মিডিয়া সীমান্ত সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের অপপ্রচার কিংবা গুজব ছড়াতে পারবে না, স্থানীয় জনগণকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান থেকে বিরত থাকতে হবে। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী বিভাগীয় সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. ইমরান ইবনে এ রউফ। বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডিআইজি অরুণ কুমার গৌতম মালদা সেক্টর।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজিবির লিখিত অভিযোগ, বেড়া সরায়নি বিএসএফ

আপডেট সময় ১১:২৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

আন্তর্জাতিক আইন না মেনে পাঁচবিবির পূর্ব উচনা ঘোনাপাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পরবর্তীতে পতাকা বৈঠকে দেওয়া আশ্বাসের পরও বুধবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্ত থেকে কাঁটাতারের বেড়া ও খুঁটি সরানো শুরু করেনি তারা। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ভারত সীমান্তের ভেতরে নতুন করে খুঁটি ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ভোরে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে হাটখোলা ক্যাম্পের আওতাধীন পূর্ব উচনা ঘোনাপাড়া এলাকায় ২৮১ পিলারের সাব ৩৪, ৩৫ ও ৩৫ সাব পিলারে বিএসএফএফ সদস্যরা শূন্য রেখা থেকে প্রায় ২০ গজের মধ্যে কাটা তারের বেড়ার কাজ শুরু করে। এটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের লঙ্ঘন। সকালে জমিতে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ঘোনাপাড়া সীমান্তের বাসিন্দারা নির্মাণকাজ দেখতে পেয়ে হাটখোলা বিওপি কমান্ডারকে জানান। পরে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দিলে কাজ বন্ধ রাখেন বিএসএফের সদস্যরা। বিজিবি তাদের পতাকা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালেও প্রথমে বিএসএফ সাড়া দেয়নি। পরে বিজিবি পত্র দিয়ে বেলা ৩টায় পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানায়। বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের অধীন চকগোপাল ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার পতাকা বৈঠকে সাড়া দেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া ও বাঁশের খুঁটি সরানোর আশ্বাস দেয়। তবে এখন পর্যন্ত বেড়া সরিয়ে নেয়নি বিএসএফ। এ নিয়ে ২০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, হাটখোলা বিওপির পূর্ব উচনার ঘোনাপাড়া সীমান্তের ২৮১ পিলারের সাব পিলার ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ সাব পিলারের শূন্যরেখার কাছাকাছি স্থানে ভারতীয় বিএসএফ কিছু অংশে প্রায় ১০০ ফুট তারকাঁটা দিয়ে বেড়া নির্মাণ করে। বিজিবির বাধায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে বিজিবি ও বিএসএফ দুদেশের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক বসে। বৈঠকে বিএসএফ বুধবার তারকাঁটা সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা সরিয়ে নেয়নি। এ নিয়ে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে চলমান উত্তেজনার পরেই বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ বিওপির সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির সিও লেফটেন্যান্টে কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।

৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, বৈঠকে চারটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো হলো- সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে বাংলাদেশি ও ভারতীয় কৃষক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না, সীমান্ত সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। দুই দেশের মিডিয়া সীমান্ত সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের অপপ্রচার কিংবা গুজব ছড়াতে পারবে না, স্থানীয় জনগণকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান থেকে বিরত থাকতে হবে। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী বিভাগীয় সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. ইমরান ইবনে এ রউফ। বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডিআইজি অরুণ কুমার গৌতম মালদা সেক্টর।