ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন টাকা ছাপানোয় উদ্বেগ

দেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াসহ কর অব্যাহতি অপসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার আরও নমনীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের মিশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিনিধি দলটির প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
চতুর্থ কিস্তি ঋণ দেওয়ার আগে গত ৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। সফরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও বিদ্যমান ঋণের চতুর্থ কিস্তির কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত পালন নিয়ে পর্যালোচনা করে দলটি। ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করার প্রসঙ্গটি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। বোর্ডের অনুমোদন পেলে ১০ ফেব্রুয়ারি তা ছাড় করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বাড়ছে, এ জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সংস্থাটি মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ জন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। রাজস্ব আদায়ও কমেছে। রিজার্ভের অবস্থাও চাপের মুখে রয়েছে। ক্রিস পাপাজর্জিও আরও বলেন, বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক আইএমএফ। তবে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার চলমান রাখতে হবে।

নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ায় সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে আইএমএফ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তারা যে টাকাটা নতুন করে বাজারে ছেড়েছে সেটা তারা দ্রুত বাজার থেকে তুলেও নেবে। তবে সেটা যদি না করে তা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। যা দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে কর রাজস্ব অনুপাত কম। তাই একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে রাজস্বসংক্রান্ত সংস্কার করতে হবে।

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বর্তমানে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক খাতে পুনর্গঠনের জন্য একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা তৈরি করা। আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থাটি।

এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে রফতানি খাত আরও বৈচিত্র্যময় করতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি সুশাসন বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় আইএমএফের পক্ষ থেকে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন টাকা ছাপানোয় উদ্বেগ

আপডেট সময় ১২:০৫:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াসহ কর অব্যাহতি অপসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা, মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার আরও নমনীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের মিশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিনিধি দলটির প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
চতুর্থ কিস্তি ঋণ দেওয়ার আগে গত ৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। সফরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ও বিদ্যমান ঋণের চতুর্থ কিস্তির কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত পালন নিয়ে পর্যালোচনা করে দলটি। ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করার প্রসঙ্গটি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। বোর্ডের অনুমোদন পেলে ১০ ফেব্রুয়ারি তা ছাড় করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বাড়ছে, এ জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সংস্থাটি মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ জন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। রাজস্ব আদায়ও কমেছে। রিজার্ভের অবস্থাও চাপের মুখে রয়েছে। ক্রিস পাপাজর্জিও আরও বলেন, বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক আইএমএফ। তবে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার চলমান রাখতে হবে।

নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ায় সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে আইএমএফ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তারা যে টাকাটা নতুন করে বাজারে ছেড়েছে সেটা তারা দ্রুত বাজার থেকে তুলেও নেবে। তবে সেটা যদি না করে তা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। যা দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে।

সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে কর রাজস্ব অনুপাত কম। তাই একটি স্বচ্ছ ও ন্যায্য রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে রাজস্বসংক্রান্ত সংস্কার করতে হবে।

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বর্তমানে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক খাতে পুনর্গঠনের জন্য একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা তৈরি করা। আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থাটি।

এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে রফতানি খাত আরও বৈচিত্র্যময় করতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পাশাপাশি সুশাসন বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় আইএমএফের পক্ষ থেকে।