ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্লোবাল লিগে চ্যাম্পিয়ন রংপুর

গায়ানায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম আসরের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বিদায়ের দুয়ারে চলে যাওয়া রংপুর রাইডার্সই টানা তিন জয়ে মেতে উঠল শিরোপার উল্লাসে। ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে অস্ট্রেলিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিক্টোরিয়াকে ৫৬ হারিয়ে হারায় বাংলাদেশের দলটি।

বাংলাদেশ সময় শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে রংপুর ২০ ওভারে তোলে ১৭৮ রান। গোটা আসরে যা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

৮৪ বলে ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে বড় রানের পথে এগিয়ে নেন সৌম্য সরকার ও স্টিভেন টেইলর। চারটি করে চার ও ছক্কায় ৪৯ বলে ৬৮ রান করেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান টেইলর।

সৌম্য আগের চার ম্যাচের একটিতে করেন ৫১, দুই ম্যাচে আউট হন ২২ ও ২৭ রানে। ফাইনালে গোটা ২০ ওভার খেলে অপরাজিত থাকেন ৬৮ রানে। তার ৫৪ বলের ইনিংসে সাত চারের সঙ্গে ছক্কা ছিল পাঁচটি।

রান তাড়ায় শুরুতে আশা জাগালেও পরে পথ হারিয়ে আর লড়াই জমাতেই পারেনি ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে তারা গুটিয়ে যায় ১২২ রানে।

সৌম্য ফাইনালের ম্যাচ-সেরা তো বটেই, ১৪২.৪২ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৮৮ রান তুলে ম্যান অব দা টুর্নামেন্টও তিনিই।

প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরের শুরুটা ছিল মন্থর। স্টিভেন টেইলরকে মেডেন ওভার করে ম্যাচ শুরু করেন ডমিনিক ড্রেকস। টেইলের ব্যাটেই ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আসে তৃতীয় ওভারে। পঞ্চম ওভারে ম্যাক্স বার্থিসেলকে ছক্কা মারেন টেইলর। ষষ্ঠ ওভারে দুজনের ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার।

তার পরও ৭ ওভার শেষে রান ছিল কেবল ৪৫। সৌম্য তখন খেলছেন ১৩ বলে ৮ রান করে, টেইলর ২৯ বলে ৩৩ রানে।

এরপর সৌম্যর ব্যাট উত্তাল হয় ওঠে। চার-ছক্কার স্রোতে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি টেইলরের আগেই!

৩৩ বলে আসে তার ফিফটি। ওই ওভারে ছক্কায় ফিফটিতে পার রাখেন টেইলর ৪৪ বলে।

পরের ওভারে টানা দুটি ছক্কা মারার পর আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান টেইলর।

এরপর রান বাড়ানোর কাজটি মূলত সৌম্যই করেন। রংপুরের পরের দিকর ব্যাটসম্যানরা কেউ সময়ের দাবি মেটাতে না পারায় আরও বাড়েনি দলের রান।

ক্লান্তির কারণে শেষ চার ওভারে সৌম্যও ততটা দ্রুততায় রান তুলতে পারেননি। ১৬ ওভার শেষে তার রান ছিল ৪৩ বলে ৭২। পরের ১১ বলে করতে পারেন মাত্র ১৪ রান। শেষ চার ওভারে রংপুর যোগ করে মোটে ২৭ রান।

সেটিও শেষ ওভারে সৌম্য দুটি চার মারতে পারায়। শেষ বলে তিন রান নিতে পারলে টি-টোয়েন্টি নিজের আগে সেরা ৮৮ রানকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু স্লোয়ার ডেলিভারিটি লাগাতে পারেননি ব্যাটেই।

তবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান তুলে দল তখন আত্মবিশ্বাসী। সেটির প্রতিফলনই পড়ে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে।

ভিক্টোরিয়া যদিও শুরুতে একটু লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ রান আসে ৩.২ ওভারে। ব্লেক ম্যাকডোনাল্ড ১৫ বলে ১৬ করে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ২৭ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন জো ক্লার্ক ও সাঞ্জায় কৃষ্ণমুর্তি।

৭ ওভারে ভিক্টোরিয়ার রান ছিল ১ উইকেটে ৬৫। সাঞ্জায়কে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন হারমিত সিং। এরপর ক্রমে ভেঙে পড়ে ভিক্টোরিয়ার ইনিংসও।

রিশাদ হোসেনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন জোনাথান ওয়েলস, হারমিতকে চার মারার পরের বলে ছক্কার চেষ্টায় টেইলের দারুণ ক্যাচে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস।

এরপর ক্লার্ক (২২ বলে ৪০) যখন স্টাম্পড হলেন শেখ মেহেদি হাসানের বলে, ভিক্টোরিয়ার শেষ আশাও তখন শেষ।

দুই ওপেনার ছাড়া ভিক্টোরিয়ার আর কোনো ব্যাটসম্যন ১৫ রানও ছুঁতে পারেননি। আসরজুড়ে রংপুরের হয়ে দারুণ বোলিং করা যুক্তরাষ্ট্রের বাঁহাতি স্পিনার হারমিত সিং ফাইনালেও নেন তিন উইকেট।

প্রথম গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম শিরোপা জয়ের গৌরবের পাশাপাশি রংপুরের অর্থযোগও কম নয়। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ লাখ ডলার প্রাইজমানি পেয়েছে তারা। প্রাথমিক পর্বের দুটি জয়ের জন্য আরও ৫০ হাজার ডলার তো আছেই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসরে চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালই অংশ নেওয়ার কথা ছিল গ্লোবাল সুপার লিগে। তাদের অনিচ্ছায় সেমিফাইনালেই বিদায় নেওয়া রংপুর রাইডার্স বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটিতে অংশ নেয়।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্লোবাল লিগে চ্যাম্পিয়ন রংপুর

আপডেট সময় ০১:৪৩:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

গায়ানায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম আসরের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বিদায়ের দুয়ারে চলে যাওয়া রংপুর রাইডার্সই টানা তিন জয়ে মেতে উঠল শিরোপার উল্লাসে। ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে অস্ট্রেলিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিক্টোরিয়াকে ৫৬ হারিয়ে হারায় বাংলাদেশের দলটি।

বাংলাদেশ সময় শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে রংপুর ২০ ওভারে তোলে ১৭৮ রান। গোটা আসরে যা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

৮৪ বলে ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে বড় রানের পথে এগিয়ে নেন সৌম্য সরকার ও স্টিভেন টেইলর। চারটি করে চার ও ছক্কায় ৪৯ বলে ৬৮ রান করেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান টেইলর।

সৌম্য আগের চার ম্যাচের একটিতে করেন ৫১, দুই ম্যাচে আউট হন ২২ ও ২৭ রানে। ফাইনালে গোটা ২০ ওভার খেলে অপরাজিত থাকেন ৬৮ রানে। তার ৫৪ বলের ইনিংসে সাত চারের সঙ্গে ছক্কা ছিল পাঁচটি।

রান তাড়ায় শুরুতে আশা জাগালেও পরে পথ হারিয়ে আর লড়াই জমাতেই পারেনি ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে তারা গুটিয়ে যায় ১২২ রানে।

সৌম্য ফাইনালের ম্যাচ-সেরা তো বটেই, ১৪২.৪২ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৮৮ রান তুলে ম্যান অব দা টুর্নামেন্টও তিনিই।

প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরের শুরুটা ছিল মন্থর। স্টিভেন টেইলরকে মেডেন ওভার করে ম্যাচ শুরু করেন ডমিনিক ড্রেকস। টেইলের ব্যাটেই ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আসে তৃতীয় ওভারে। পঞ্চম ওভারে ম্যাক্স বার্থিসেলকে ছক্কা মারেন টেইলর। ষষ্ঠ ওভারে দুজনের ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার।

তার পরও ৭ ওভার শেষে রান ছিল কেবল ৪৫। সৌম্য তখন খেলছেন ১৩ বলে ৮ রান করে, টেইলর ২৯ বলে ৩৩ রানে।

এরপর সৌম্যর ব্যাট উত্তাল হয় ওঠে। চার-ছক্কার স্রোতে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি টেইলরের আগেই!

৩৩ বলে আসে তার ফিফটি। ওই ওভারে ছক্কায় ফিফটিতে পার রাখেন টেইলর ৪৪ বলে।

পরের ওভারে টানা দুটি ছক্কা মারার পর আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান টেইলর।

এরপর রান বাড়ানোর কাজটি মূলত সৌম্যই করেন। রংপুরের পরের দিকর ব্যাটসম্যানরা কেউ সময়ের দাবি মেটাতে না পারায় আরও বাড়েনি দলের রান।

ক্লান্তির কারণে শেষ চার ওভারে সৌম্যও ততটা দ্রুততায় রান তুলতে পারেননি। ১৬ ওভার শেষে তার রান ছিল ৪৩ বলে ৭২। পরের ১১ বলে করতে পারেন মাত্র ১৪ রান। শেষ চার ওভারে রংপুর যোগ করে মোটে ২৭ রান।

সেটিও শেষ ওভারে সৌম্য দুটি চার মারতে পারায়। শেষ বলে তিন রান নিতে পারলে টি-টোয়েন্টি নিজের আগে সেরা ৮৮ রানকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু স্লোয়ার ডেলিভারিটি লাগাতে পারেননি ব্যাটেই।

তবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান তুলে দল তখন আত্মবিশ্বাসী। সেটির প্রতিফলনই পড়ে বোলিং-ফিল্ডিংয়ে।

ভিক্টোরিয়া যদিও শুরুতে একটু লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ রান আসে ৩.২ ওভারে। ব্লেক ম্যাকডোনাল্ড ১৫ বলে ১৬ করে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ২৭ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়েন জো ক্লার্ক ও সাঞ্জায় কৃষ্ণমুর্তি।

৭ ওভারে ভিক্টোরিয়ার রান ছিল ১ উইকেটে ৬৫। সাঞ্জায়কে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন হারমিত সিং। এরপর ক্রমে ভেঙে পড়ে ভিক্টোরিয়ার ইনিংসও।

রিশাদ হোসেনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন জোনাথান ওয়েলস, হারমিতকে চার মারার পরের বলে ছক্কার চেষ্টায় টেইলের দারুণ ক্যাচে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস।

এরপর ক্লার্ক (২২ বলে ৪০) যখন স্টাম্পড হলেন শেখ মেহেদি হাসানের বলে, ভিক্টোরিয়ার শেষ আশাও তখন শেষ।

দুই ওপেনার ছাড়া ভিক্টোরিয়ার আর কোনো ব্যাটসম্যন ১৫ রানও ছুঁতে পারেননি। আসরজুড়ে রংপুরের হয়ে দারুণ বোলিং করা যুক্তরাষ্ট্রের বাঁহাতি স্পিনার হারমিত সিং ফাইনালেও নেন তিন উইকেট।

প্রথম গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম শিরোপা জয়ের গৌরবের পাশাপাশি রংপুরের অর্থযোগও কম নয়। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৫ লাখ ডলার প্রাইজমানি পেয়েছে তারা। প্রাথমিক পর্বের দুটি জয়ের জন্য আরও ৫০ হাজার ডলার তো আছেই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসরে চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালই অংশ নেওয়ার কথা ছিল গ্লোবাল সুপার লিগে। তাদের অনিচ্ছায় সেমিফাইনালেই বিদায় নেওয়া রংপুর রাইডার্স বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটিতে অংশ নেয়।