ঢাকা , শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, খসে পড়ছে পলেস্তারা

ভবনে হাত দিলেই খসে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়তে পড়তে বিমের রড বেরিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় বই-খাতা।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কার্যক্রম। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিক্ষকরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেও কোনো সুরাহা মেলেনি।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের একটি প্রক্রিয়া আছে। ডাটাবেজের মাধ্যমে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নতুন বরাদ্দ পেলে ওই বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

১৯৩৭ সালে তৎকালীন পালং থানা বর্তমানে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৪৯ নম্বর আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১০ জন শিক্ষক ২৩১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

শুরুর দিকে একটি আধপাকা ভবন থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন তৈরি করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর আর ভবনটি মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে একটি কক্ষের বিমে বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তনুশ্রী বিশ্বাস পিউ বলে, “আমাদের স্কুলটির ওপর দিক দিয়ে ভাঙা। বর্ষাকালে পানি পড়ে, বালু পড়ে। ক্লাস করতে ভয় পাই। আমাদের জন্য নতুন একটা স্কুল চাই।”

আরেক শিক্ষার্থী জরিনা খাতুন বলে, “যখন ক্লাস করি তখন অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। কয়েকদিন আগে আমার মাথায় খোয়া পড়েছে। এভাবে ক্লাস করা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। সরকার যেন আমাদের একটি বিদ্যালয় ভবন করে দেয়।”

শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেহানা আক্তার বলেন, “বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদে ফাটল ধরেছে, রড বের হয়ে গেছে, আর বৃষ্টিতে পানি পড়ে। এ অবস্থায় আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠালে ভয়ে থাকি। কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে যায়।”

আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসমা আকতার বলেন, ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া যায় না। এর আগে একবার ছাদ ভেঙে ফ্যান খসে পড়েছিল। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।

এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে বাচ্চাদের বই-খাতা ভিজে যায় বলে জানান তিনি।

আরেক শিক্ষক ইউনূস শেখ বলেন, শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করতে হয় বলে ওদের পড়ায় মনোনিবেশ থাকে না। বিদ্যালয়ের পড়ার পরিবেশ ভালো থাকলেও ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।

আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুমের অভিযোগ, দোতলা ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় আছে। অথচ এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সমাধান হচ্ছে না।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান বলেন, “আগে ওই বিদ্যালয়ের নামে একবার বরাদ্দ এসেছিল বলে শুনেছি। তবে সেটি কি কারণে বাতিল হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন বরাদ্দের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

শরীয়তপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, খসে পড়ছে পলেস্তারা

আপডেট সময় ০৯:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

ভবনে হাত দিলেই খসে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়তে পড়তে বিমের রড বেরিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় বই-খাতা।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কার্যক্রম। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিক্ষকরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন তারা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেও কোনো সুরাহা মেলেনি।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের একটি প্রক্রিয়া আছে। ডাটাবেজের মাধ্যমে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নতুন বরাদ্দ পেলে ওই বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

১৯৩৭ সালে তৎকালীন পালং থানা বর্তমানে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৪৯ নম্বর আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১০ জন শিক্ষক ২৩১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

শুরুর দিকে একটি আধপাকা ভবন থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন তৈরি করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর আর ভবনটি মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে একটি কক্ষের বিমে বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তনুশ্রী বিশ্বাস পিউ বলে, “আমাদের স্কুলটির ওপর দিক দিয়ে ভাঙা। বর্ষাকালে পানি পড়ে, বালু পড়ে। ক্লাস করতে ভয় পাই। আমাদের জন্য নতুন একটা স্কুল চাই।”

আরেক শিক্ষার্থী জরিনা খাতুন বলে, “যখন ক্লাস করি তখন অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। কয়েকদিন আগে আমার মাথায় খোয়া পড়েছে। এভাবে ক্লাস করা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। সরকার যেন আমাদের একটি বিদ্যালয় ভবন করে দেয়।”

শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেহানা আক্তার বলেন, “বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদে ফাটল ধরেছে, রড বের হয়ে গেছে, আর বৃষ্টিতে পানি পড়ে। এ অবস্থায় আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠালে ভয়ে থাকি। কখন যেন দুর্ঘটনা ঘটে যায়।”

আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসমা আকতার বলেন, ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া যায় না। এর আগে একবার ছাদ ভেঙে ফ্যান খসে পড়েছিল। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।

এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে বাচ্চাদের বই-খাতা ভিজে যায় বলে জানান তিনি।

আরেক শিক্ষক ইউনূস শেখ বলেন, শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করতে হয় বলে ওদের পড়ায় মনোনিবেশ থাকে না। বিদ্যালয়ের পড়ার পরিবেশ ভালো থাকলেও ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।

আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে কুলসুমের অভিযোগ, দোতলা ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় আছে। অথচ এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সমাধান হচ্ছে না।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান বলেন, “আগে ওই বিদ্যালয়ের নামে একবার বরাদ্দ এসেছিল বলে শুনেছি। তবে সেটি কি কারণে বাতিল হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন বরাদ্দের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।