বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের ভূত বসে আছে। এদেরকে তাড়াতে না পারলে অর্ন্তবর্তী সরকারের কোনো প্রচেষ্টা সফল হবে না।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এক শিক্ষক সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক এ সমাবেশে যোগ দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যারা এতদিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে- সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন যে সরকার এসেছে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে, আন্দোলন যারা করেছে, আমরা সবাই মিলে এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি- দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদেরকে অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেবো। কিন্তু বারবার প্রশ্ন আসে যে, কতদিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেবো যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, প্রাণ দিয়েছি- একটা লক্ষ্যে যে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবার মাইনাস টু দেখতে চাই না। আবার এই মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না। আবার সন্ত্রাস দেখতে চাই না। সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদারপন্থি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই। তার জন্য আমরা তাদের হাতেই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি, এরা যোগ্য মানুষ তারা কাজ করছেন। তাদেরকে অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা কখনই ব্যর্থ হয়নি, আমরা ’৫২ সালে জয়ী হয়েছি, ’৬৯ এ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৭১ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৯০ জয়ী হয়েছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, আমাদের সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা এবারও জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।
ফখরুল বলেন, জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় ও বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনা যাতে না হয় সেজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। যারা দুর্নীতি করে, যারা চাঁদাবাজি করে, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক নয়, তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব ব্যবস্থা নিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আরেকটা কথা বলি, এটা আমার নিজের কথা, শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে না। কথাটা আপনাদের ভালো লাগবে না, আমি জানি। আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই পিয়ন থেকে গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোক। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে বের করে নিয়ে এসে সুস্থ পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, যারা শিক্ষিত, যারা কাজ করতে পারবেন তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। এটা যদি আপনারা মন থেকে করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন হবে, নইলে পরিবর্তন হবে না।
পরিবর্তনে দেশে নতুন আশার কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকেই বলে যে কি হলো? বলি এই পর্যন্ত তো হলো, হাসিনা পালিয়ে গেছে- এই পর্যন্ত তো হলো। পার্লামেন্ট ভেঙে গেলো-এটা হলো না? ম্যাডাম মুক্তি পেলেন-এটা হলো না? এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেশের সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবো, ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব, তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব।
শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের চৌধুরী মূগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতারা বক্তব্য রাখেন।