ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্তিত্ব সঙ্কটে শরীয়তপুরের নদ-নদী

মরন বাঁধ ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৩ শতাধিক নদী। ভারতের পানি আগ্রাসন আর দখল দূষণে নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোন নদীর অবস্থাই আর ভালো নেই। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে অনেক নদী। পানির অভাবে দেশের প্রধান প্রধান নদী পদ্মা, তিস্তা, যমুনা, সুরমা, ব্রহ্মপুত্র সবার বুকেই এখন ধূ ধূ বালু চর। নাব্য সঙ্কটের কারণে নদীগুলো হারাচ্ছে অস্তিত্ব, বন্ধ হচ্ছে নৌ-পথ। শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে ভারত ফারক্কা ও গজলডোবা বাঁধের সব গেইট খুলে দিলে এ নদীই আবার দুই ক‚ল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই বেশিরভাগ নদীর। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে এক সময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত, সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা। শরীয়তপুরের ১১ টি নদ-নদী ও অসংখ্য খাল মপঔন দখল, দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এক সময়ের খর¯্রােতা নদ-নদী এখন মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে নদী থেকে নির্বিচারে ও অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কারণে নদীর তীরকে অরক্ষিত ও ভাঙনের ঝুঁকিতে ফেলেছে। মাটি উত্তোলনকারীরা কেবল মাটি উত্তোলনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি, অনেকে নদীর পাড় দখল করে বিশাল এলাকা জুড়ে ইটভাটা বসিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছেন। ফলে জেলার ৬টি উপজেলার নদ-নদী ও অসংখ্য খাল এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। জেলার নদ-নদী বা খালের হিসেব নেই জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে। নদ-নদীর হিসেব দিলেও খালের হিসেব দিতে পারেনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়।

জেলা নদী রক্ষা কমিটি’র সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে মোট ১১টি ছোট-বড় নদ-নদী রয়েছে। এগুলো হল- পদ্মা নদী, মেঘনা (লোয়ার) নদী, কীর্তিনাশা নদী, আড়িয়াল খাঁ নদ, জয়ন্তী নদী, মুন্সীরহাট নদী, নাওডোবা নদী, মরা কীর্তিনাশা নদী, বুড়িরহাট-ভেদরগঞ্জ নদী, কীর্তিনাশা (কাজীরহাট) ও সুরেশ^র-ডামুড্যা নদী।

কীর্তিনাশা নদীর উৎসমুখ নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী থেকে শুরু হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহরের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলার কালকিনি দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদে মিলিত হয়েছে। জেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের প্রবল ¯্রােতসীন ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর বিভিণœ অংশে পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এক সময় এই নদীর প্রবল প্রবাহে ছুটে চলার আনন্দ আর ঘূর্ণিপথের বাঁকে বাঁকে যে রহস্যময়তা সৃষ্টি হতো, প্রবীণদের মুখের সেই বিবরণ এখন হাস্যময় মনে হচ্ছে। দুই যুগ আগেও লঞ্চ এবং পণ্য বোঝাই নৌকা এই নদীতে চলাচল করত, যা নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ^র বন্দর, সদর উপজেলার গয়াতলা বাজার, রাজগঞ্জ বাজার ও আংগারিয়া বন্দরের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবে খ্যাতি ছিল। এ ছাড়া স্থানীয়রা কৃষিকাজ, গৃহস্থালীর কাজ ও মাছ ধরার জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদীটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। দখল, দূষণ আর নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং নদীর পাড় কেটে মাটি নেয়ার কারণে এই নদীটি এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার কোটাপাড়া, রাজগঞ্জ ও আংগারিয়া, নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর, ভোজেশ^রসহ অন্যান্য এলাকায় কীর্তিনাশা নদীর পাড় দখল করে গড়ে ওঠেছে কয়েকটি ইটভাটা। গত প্রায় দেড় যুগ ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর তীর দখল করে ইটভাটা তৈরি করার ফলে একদিকে নদী যেমন সংকুচিত হয়েছে, অন্যদিকে নদীর ¯্রােত কমে গিয়ে অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার রাজগঞ্জ বাসিন্দা আব্দুর রহিম, শাহিন, মোশরফসহ অনেকে বলেন, এই কীর্তিনাশা নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় লঞ্চ ও মালবাহী কার্গো চলাচল করতো। এখন নৌকা, ট্রলার চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একই উপজেলার আংগাারিয়া বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল হক বলেন, এক সময় নদী পথে লঞ্চ ও কার্গো ভর্তি করে বন্দরের ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা-নেওয়া করতো। এতে খরচ কম হতো। এখন কীর্তিনাশা নদী ভরাট ও সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় সেই সুবিধা থেকে ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সদর উপজেলার বিনোদপুর দিয়ে প্রবাহিত কীর্তিনাশা শাখা নদী এখন কচুরিপানায় দখল করে নিয়েছে। ভরাট আর দখল হয়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এই নদীতে। স্থানীয় লোকজন কীর্তিনাশা নদীর এই শাখা নদীর নাম দিয়েছে মরা কীর্তিনাশা।

জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল আড়িয়াল খাঁ নদ, যার উৎসমুখ হলো কীর্তিনাশা নদী। ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলার মূল আড়িয়াল খাঁ নদে পতিত হয়েছে। দখল আর নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর মূল নকসা হারিয়ে গেছে অনেকটা। এই নদীতে নৌযান চলাচল নেই বললেই চলে।

বুড়িরহাট-ভেদরগঞ্জ নদীটির উৎসমুখ নড়িয়া উপজেলার সুরেশ^রের পদ্মা নদী, যা ডামুড্যা উপজেলার জয়ন্তী নদীতে মিলিত হয়েছে। ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর পাড় দখল করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের বিভিণœ স্থানে বড় ্বড় পাকাভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় এক যুগে দখল হয়ে গেছে নদীর অধিকাংশ পাড়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। ভেদরগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হাসেম ঢালী, শফিকুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, রোমান সিকদার, বিএম মোস্তফাসহ অনেকে বলেন, এই নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। এখন নদী ভরাট ও দখল-দূষণে তা হারিয়ে গেছে। নদীতে মালবাহী ট্রলার ঢুকতেও কষ্ট হয়।

ডামুড্যা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জয়ন্তী নদীর উৎসমুখ বুড়িরহাট-ভেদরগঞ্জ। ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জয়ন্তী নদীটি গোসাইরহাট উপজেলা ভেদ করে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটি দিয়ে এখনো ঢাকা ও বরিশালের সাথে লঞ্চ যোগাযোগ সচল আছে। তবে ডামুড্যা উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে নদীর পশ্চিম পাড় দখল করে দোকানপাট, ফামের্সী ও বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণসহ পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়া নদীর পূর্বপাড় বালু ব্যবসায়ীরা দখল করে সেখানে বালুর স্তুপ তৈরি গড়ে তুলেছেন। ফলে নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এখানে নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ডামুড্যা বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামাল আহম্মেদ, শামীম, শিক্ষক আব্দুর রব মিয়াসহ অনেকে জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ফলে সরু হয়ে গেছে নদী। এভাবে চলতে থাকলে হারিয়ে যাবে ডামুড্যার ঐতিহ্যবাহী জয়ন্তী নদী। তাই নদী সুরক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

একই অবস্থা সুরেশ^র-ডামুড্যা নদীর। যার উৎসমুখ পদ্মা ও পতিতমুখ জয়ন্তী নদী। এই নদী পথে ঢাকা থেকে ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাটের ব্যবসায়ীরা বড় বড় মালবাহী কর্গোা ও ট্রলার যোগে মালামাল বহন করে আনতেন। এতে পণ্য পরিবহনে তাদের খরচ অনেক কম পড়তো। কিন্তু ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটির ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর, কার্ত্তিকপুর, নারায়নপুর, ডামুড্যা উপজেলার বিভিণœ অংশে নদীর পাড় দখল গড়ে ইটভাটা, ঘরবাড়িসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর পাড় দখল করে রামভদ্রপুর, কার্ত্তিকপুর ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় গড়ে ওঠেছে ইটভাটা, বালুর ব্যবসা। ফলে এক সময়ের ¯্রােতসীন নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে।

স¤প্রতি শরীয়তপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, শরীয়তপুর পৌরসভার খালগুলো দখল, ভরাট, দূষণ ও হাজামজা হয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে খালের সুফল পাচ্ছে না পৌরবাসী। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার বাস-স্ট্যান্ড ষংলগ্ন বাঘিয়া দিয়ে প্রবাহিত পূর্ব-পশ্চিমে খালটি এক সময় কীর্তিনাশা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছিল। এই খালটি দিয়ে বর্ষাকালে নৌকা চলাচল করতো। খালের উপরে ছিল ব্রীজ। কিন্ত কালের আবর্তে খালটি বিভিণœ স্থানে দখল হয়ে গেছে। ব্রীজের দু’পাশের খাল ভরাট করে বাস-স্ট্যান্ডের কাজে ব্যবহার করছে স্থানীয়রা। আর ব্রীজটি কালের সাক্ষি হয়ে এখনো জানান দিছে খালের অস্তিÍত্ব থাকার বিষয়টি। স্থানীয় বাঘিয়া এলাকার স¤্রাট মিয়া জানান, ব্রীজ শুধু একটাই ছিল না। ওই খালের উপর দিয়ে তিনটি ব্রীজ থাকলেও তার অস্তিত্ব এখন আর নেই। সবই দখল হয়ে গেছে।

শরীয়তপুর বাস-স্ট্যান্ড, পালং বাজার ও কোটাপাড়া এলাকায় অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন এসব খাল দখল করে বাসা-বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। কোটাপাড়া খাল দিয়ে জেলা শহরের পানি নিষ্কাশন হতো। পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শরীয়তপুর পৌর বাসিন্দা, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও পালং বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, কোটাপাড়া মোড় ও পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের রাস্তা উদ্ধার করা খুবই প্রয়োজন। বাস-স্ট্যান্ডের খাল দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের সাথে আতাত করে পাবলিকও খাল ভরাট করে ফেলেছে। তিনি বলেন, রাস্তার দু’পাশে আমাদের উন্নতমানের ড্রেন দরকার।

জেলা শহরের চৌরঙ্গীর মোড় থেকে উত্তর দিকে ছোট রাজগঞ্জ ব্রীজ হয়ে পশ্চিম দিখে কীর্তিনাশা নদীতে মিলিত হয়েছিল রাজগঞ্জ খালটি। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি দিয়ে গত ২ যুগ আগেও নৌকা চলাচল করতো। শহরের পানি নিষ্কাষণের মাধ্যম ছিল খালটি। কিন্তু বর্তমানে চৌরঙ্গী থেকে রাজগঞ্জ ব্রীজ পযর্ন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দখল হয়ে গেছে। পুরো খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা। খালের অস্তিত্ব নেই। তবে সম্প্রতি রাজগঞ্জ ব্রীজ এলাকায় খাল উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন পৌর প্রশাসক। একটি এক্সাভেটর/ভ্যেকু দ্বারা খাল থেকে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে, খাল দখল করে গড়ে ওঠা কয়েকটি স্থাপনা ভেঙ্গে খালটিতে পানি প্রবাহ সচল করার উদ্যোগ করেছেন পৌরসভা প্রশাসক পিংকি সাহা। শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিংকি সাহা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিদের্শে পৌরসভাধীন খাল দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। যা উদ্ধার হওয়া পযর্ন্ত চলমান থাকবে।

এছাড়া, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া থেকে বুড়ির হাট পযর্ন্ত, কানার বাজার থেকে বুড়িরহাট, বুড়িরহাট থেকে ছয়গাঁও, আংগারিয়া থেকে টুমচর, আংগারিয়া থেকে পশ্চিম চররোসুন্দি, বিনোদপুর থেকে কাজীকান্দি, বিনোদপুর থেকে সুবিধার কান্দি, বাছারকান্দি, চন্দ্রপুর, নড়িয়া উপজেলার ভেজেশ^র থেকে পঞ্চপল্লী, দিনারা হাট থেকে পঞ্চপল্লী, দিনারা হাট থেকে ঘড়িসার খালগুলো সবই ভরাট, দখল ও দূষণে পরিণত হয়েছে। এসব খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহ সচল করার দাবি জানিয়েছেন শরীয়তপুরবাসী। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ তারেক হাসান মুঠোফোনে বলেন, আমাদের নিকট নদী ও খালের কোন পরিসংখ্যান নেই। এগুলো কোথায়, কে ভরাট করেছে বা দখল করেছে তা জেলা প্রশাসক অফিস থেকে জানতে পারবেন। শরীয়তপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য মো. রাসেল নোমান বলেন, এ বিষয়ে ভালো তথ্য দিতে পারবে নদী রক্ষা কমিটির আহŸায়ক। এসব বিষয় সম্পর্কে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদুল আলমকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি মিটিং করেছি। শরীয়তপুর জেলায় ১১টি নদী চিহ্নিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। কোথায়ও কোন অবৈধ স্থাপনা আছে কিনা তার তালিকা দেয়ার জন্য তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং আমরা এগুলো উদ্ধার করার জন্য নদী রক্ষা কমিশনের কাছে বাজেট চেয়েছি। এ বিষয়ে জানতে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও শরীয়তপুর জেলা প্রশাসককে মুঠোফোনে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্তিত্ব সঙ্কটে শরীয়তপুরের নদ-নদী

আপডেট সময় ০৯:৩১:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মরন বাঁধ ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৩ শতাধিক নদী। ভারতের পানি আগ্রাসন আর দখল দূষণে নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোন নদীর অবস্থাই আর ভালো নেই। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে অনেক নদী। পানির অভাবে দেশের প্রধান প্রধান নদী পদ্মা, তিস্তা, যমুনা, সুরমা, ব্রহ্মপুত্র সবার বুকেই এখন ধূ ধূ বালু চর। নাব্য সঙ্কটের কারণে নদীগুলো হারাচ্ছে অস্তিত্ব, বন্ধ হচ্ছে নৌ-পথ। শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে ভারত ফারক্কা ও গজলডোবা বাঁধের সব গেইট খুলে দিলে এ নদীই আবার দুই ক‚ল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই বেশিরভাগ নদীর। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে এক সময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত, সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা। শরীয়তপুরের ১১ টি নদ-নদী ও অসংখ্য খাল মপঔন দখল, দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এক সময়ের খর¯্রােতা নদ-নদী এখন মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে নদী থেকে নির্বিচারে ও অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কারণে নদীর তীরকে অরক্ষিত ও ভাঙনের ঝুঁকিতে ফেলেছে। মাটি উত্তোলনকারীরা কেবল মাটি উত্তোলনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি, অনেকে নদীর পাড় দখল করে বিশাল এলাকা জুড়ে ইটভাটা বসিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছেন। ফলে জেলার ৬টি উপজেলার নদ-নদী ও অসংখ্য খাল এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। জেলার নদ-নদী বা খালের হিসেব নেই জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে। নদ-নদীর হিসেব দিলেও খালের হিসেব দিতে পারেনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়।

জেলা নদী রক্ষা কমিটি’র সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরে মোট ১১টি ছোট-বড় নদ-নদী রয়েছে। এগুলো হল- পদ্মা নদী, মেঘনা (লোয়ার) নদী, কীর্তিনাশা নদী, আড়িয়াল খাঁ নদ, জয়ন্তী নদী, মুন্সীরহাট নদী, নাওডোবা নদী, মরা কীর্তিনাশা নদী, বুড়িরহাট-ভেদরগঞ্জ নদী, কীর্তিনাশা (কাজীরহাট) ও সুরেশ^র-ডামুড্যা নদী।

কীর্তিনাশা নদীর উৎসমুখ নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদী থেকে শুরু হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহরের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলার কালকিনি দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদে মিলিত হয়েছে। জেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের প্রবল ¯্রােতসীন ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর বিভিণœ অংশে পাড় দখল হয়ে যাওয়ায় নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এক সময় এই নদীর প্রবল প্রবাহে ছুটে চলার আনন্দ আর ঘূর্ণিপথের বাঁকে বাঁকে যে রহস্যময়তা সৃষ্টি হতো, প্রবীণদের মুখের সেই বিবরণ এখন হাস্যময় মনে হচ্ছে। দুই যুগ আগেও লঞ্চ এবং পণ্য বোঝাই নৌকা এই নদীতে চলাচল করত, যা নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ^র বন্দর, সদর উপজেলার গয়াতলা বাজার, রাজগঞ্জ বাজার ও আংগারিয়া বন্দরের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবে খ্যাতি ছিল। এ ছাড়া স্থানীয়রা কৃষিকাজ, গৃহস্থালীর কাজ ও মাছ ধরার জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদীটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। দখল, দূষণ আর নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং নদীর পাড় কেটে মাটি নেয়ার কারণে এই নদীটি এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার কোটাপাড়া, রাজগঞ্জ ও আংগারিয়া, নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর, ভোজেশ^রসহ অন্যান্য এলাকায় কীর্তিনাশা নদীর পাড় দখল করে গড়ে ওঠেছে কয়েকটি ইটভাটা। গত প্রায় দেড় যুগ ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর তীর দখল করে ইটভাটা তৈরি করার ফলে একদিকে নদী যেমন সংকুচিত হয়েছে, অন্যদিকে নদীর ¯্রােত কমে গিয়ে অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার রাজগঞ্জ বাসিন্দা আব্দুর রহিম, শাহিন, মোশরফসহ অনেকে বলেন, এই কীর্তিনাশা নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় লঞ্চ ও মালবাহী কার্গো চলাচল করতো। এখন নৌকা, ট্রলার চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একই উপজেলার আংগাারিয়া বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল হক বলেন, এক সময় নদী পথে লঞ্চ ও কার্গো ভর্তি করে বন্দরের ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা-নেওয়া করতো। এতে খরচ কম হতো। এখন কীর্তিনাশা নদী ভরাট ও সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় সেই সুবিধা থেকে ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সদর উপজেলার বিনোদপুর দিয়ে প্রবাহিত কীর্তিনাশা শাখা নদী এখন কচুরিপানায় দখল করে নিয়েছে। ভরাট আর দখল হয়ে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এই নদীতে। স্থানীয় লোকজন কীর্তিনাশা নদীর এই শাখা নদীর নাম দিয়েছে মরা কীর্তিনাশা।

জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ নদী ছিল আড়িয়াল খাঁ নদ, যার উৎসমুখ হলো কীর্তিনাশা নদী। ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাদারীপুর জেলার মূল আড়িয়াল খাঁ নদে পতিত হয়েছে। দখল আর নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর মূল নকসা হারিয়ে গেছে অনেকটা। এই নদীতে নৌযান চলাচল নেই বললেই চলে।

বুড়িরহাট-ভেদরগঞ্জ নদীটির উৎসমুখ নড়িয়া উপজেলার সুরেশ^রের পদ্মা নদী, যা ডামুড্যা উপজেলার জয়ন্তী নদীতে মিলিত হয়েছে। ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর পাড় দখল করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের বিভিণœ স্থানে বড় ্বড় পাকাভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় এক যুগে দখল হয়ে গেছে নদীর অধিকাংশ পাড়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। ভেদরগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হাসেম ঢালী, শফিকুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, রোমান সিকদার, বিএম মোস্তফাসহ অনেকে বলেন, এই নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। এখন নদী ভরাট ও দখল-দূষণে তা হারিয়ে গেছে। নদীতে মালবাহী ট্রলার ঢুকতেও কষ্ট হয়।

ডামুড্যা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জয়ন্তী নদীর উৎসমুখ বুড়িরহাট-ভেদরগঞ্জ। ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জয়ন্তী নদীটি গোসাইরহাট উপজেলা ভেদ করে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটি দিয়ে এখনো ঢাকা ও বরিশালের সাথে লঞ্চ যোগাযোগ সচল আছে। তবে ডামুড্যা উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে নদীর পশ্চিম পাড় দখল করে দোকানপাট, ফামের্সী ও বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণসহ পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়া নদীর পূর্বপাড় বালু ব্যবসায়ীরা দখল করে সেখানে বালুর স্তুপ তৈরি গড়ে তুলেছেন। ফলে নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এখানে নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ডামুড্যা বন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামাল আহম্মেদ, শামীম, শিক্ষক আব্দুর রব মিয়াসহ অনেকে জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ফলে সরু হয়ে গেছে নদী। এভাবে চলতে থাকলে হারিয়ে যাবে ডামুড্যার ঐতিহ্যবাহী জয়ন্তী নদী। তাই নদী সুরক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

একই অবস্থা সুরেশ^র-ডামুড্যা নদীর। যার উৎসমুখ পদ্মা ও পতিতমুখ জয়ন্তী নদী। এই নদী পথে ঢাকা থেকে ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাটের ব্যবসায়ীরা বড় বড় মালবাহী কর্গোা ও ট্রলার যোগে মালামাল বহন করে আনতেন। এতে পণ্য পরিবহনে তাদের খরচ অনেক কম পড়তো। কিন্তু ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটির ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর, কার্ত্তিকপুর, নারায়নপুর, ডামুড্যা উপজেলার বিভিণœ অংশে নদীর পাড় দখল গড়ে ইটভাটা, ঘরবাড়িসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর পাড় দখল করে রামভদ্রপুর, কার্ত্তিকপুর ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় গড়ে ওঠেছে ইটভাটা, বালুর ব্যবসা। ফলে এক সময়ের ¯্রােতসীন নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে।

স¤প্রতি শরীয়তপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, শরীয়তপুর পৌরসভার খালগুলো দখল, ভরাট, দূষণ ও হাজামজা হয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে খালের সুফল পাচ্ছে না পৌরবাসী। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার বাস-স্ট্যান্ড ষংলগ্ন বাঘিয়া দিয়ে প্রবাহিত পূর্ব-পশ্চিমে খালটি এক সময় কীর্তিনাশা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছিল। এই খালটি দিয়ে বর্ষাকালে নৌকা চলাচল করতো। খালের উপরে ছিল ব্রীজ। কিন্ত কালের আবর্তে খালটি বিভিণœ স্থানে দখল হয়ে গেছে। ব্রীজের দু’পাশের খাল ভরাট করে বাস-স্ট্যান্ডের কাজে ব্যবহার করছে স্থানীয়রা। আর ব্রীজটি কালের সাক্ষি হয়ে এখনো জানান দিছে খালের অস্তিÍত্ব থাকার বিষয়টি। স্থানীয় বাঘিয়া এলাকার স¤্রাট মিয়া জানান, ব্রীজ শুধু একটাই ছিল না। ওই খালের উপর দিয়ে তিনটি ব্রীজ থাকলেও তার অস্তিত্ব এখন আর নেই। সবই দখল হয়ে গেছে।

শরীয়তপুর বাস-স্ট্যান্ড, পালং বাজার ও কোটাপাড়া এলাকায় অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন এসব খাল দখল করে বাসা-বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। কোটাপাড়া খাল দিয়ে জেলা শহরের পানি নিষ্কাশন হতো। পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শরীয়তপুর পৌর বাসিন্দা, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও পালং বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, কোটাপাড়া মোড় ও পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের রাস্তা উদ্ধার করা খুবই প্রয়োজন। বাস-স্ট্যান্ডের খাল দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের সাথে আতাত করে পাবলিকও খাল ভরাট করে ফেলেছে। তিনি বলেন, রাস্তার দু’পাশে আমাদের উন্নতমানের ড্রেন দরকার।

জেলা শহরের চৌরঙ্গীর মোড় থেকে উত্তর দিকে ছোট রাজগঞ্জ ব্রীজ হয়ে পশ্চিম দিখে কীর্তিনাশা নদীতে মিলিত হয়েছিল রাজগঞ্জ খালটি। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি দিয়ে গত ২ যুগ আগেও নৌকা চলাচল করতো। শহরের পানি নিষ্কাষণের মাধ্যম ছিল খালটি। কিন্তু বর্তমানে চৌরঙ্গী থেকে রাজগঞ্জ ব্রীজ পযর্ন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দখল হয়ে গেছে। পুরো খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবনসহ নানা স্থাপনা। খালের অস্তিত্ব নেই। তবে সম্প্রতি রাজগঞ্জ ব্রীজ এলাকায় খাল উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন পৌর প্রশাসক। একটি এক্সাভেটর/ভ্যেকু দ্বারা খাল থেকে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে, খাল দখল করে গড়ে ওঠা কয়েকটি স্থাপনা ভেঙ্গে খালটিতে পানি প্রবাহ সচল করার উদ্যোগ করেছেন পৌরসভা প্রশাসক পিংকি সাহা। শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিংকি সাহা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিদের্শে পৌরসভাধীন খাল দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। যা উদ্ধার হওয়া পযর্ন্ত চলমান থাকবে।

এছাড়া, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া থেকে বুড়ির হাট পযর্ন্ত, কানার বাজার থেকে বুড়িরহাট, বুড়িরহাট থেকে ছয়গাঁও, আংগারিয়া থেকে টুমচর, আংগারিয়া থেকে পশ্চিম চররোসুন্দি, বিনোদপুর থেকে কাজীকান্দি, বিনোদপুর থেকে সুবিধার কান্দি, বাছারকান্দি, চন্দ্রপুর, নড়িয়া উপজেলার ভেজেশ^র থেকে পঞ্চপল্লী, দিনারা হাট থেকে পঞ্চপল্লী, দিনারা হাট থেকে ঘড়িসার খালগুলো সবই ভরাট, দখল ও দূষণে পরিণত হয়েছে। এসব খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহ সচল করার দাবি জানিয়েছেন শরীয়তপুরবাসী। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ তারেক হাসান মুঠোফোনে বলেন, আমাদের নিকট নদী ও খালের কোন পরিসংখ্যান নেই। এগুলো কোথায়, কে ভরাট করেছে বা দখল করেছে তা জেলা প্রশাসক অফিস থেকে জানতে পারবেন। শরীয়তপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য মো. রাসেল নোমান বলেন, এ বিষয়ে ভালো তথ্য দিতে পারবে নদী রক্ষা কমিটির আহŸায়ক। এসব বিষয় সম্পর্কে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদুল আলমকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি মিটিং করেছি। শরীয়তপুর জেলায় ১১টি নদী চিহ্নিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। কোথায়ও কোন অবৈধ স্থাপনা আছে কিনা তার তালিকা দেয়ার জন্য তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং আমরা এগুলো উদ্ধার করার জন্য নদী রক্ষা কমিশনের কাছে বাজেট চেয়েছি। এ বিষয়ে জানতে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও শরীয়তপুর জেলা প্রশাসককে মুঠোফোনে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।