ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরও ৩ উপদেষ্টা শপথ নিলেন

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হলেন আরও তিন উপদেষ্টা। তারা হলেন-শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। নতুন তিনজনকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা হলো ২৪ জন।

এদিকে শপথ নেওয়ার পরপরই দফতর পেয়েছেন নতুন দুই উপদেষ্টা। শেখ বশিরউদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। অন্যদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আবদুর রশিদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়। এতে অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্বেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। নতুন দুই উপদেষ্টা দফতর পেলেও উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া মাহফুজ আলমের দফতর পাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গণআন্দোলনের আকাংখা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৮ আগস্ট গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তিন মাসের মাথায় এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ল। প্রথম দফায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ জন এবং পরে সম্প্রসারণ করে আরও চারজন উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন। রোববার যুক্ত হলেন নতুন তিনজন।

রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দরবার হলে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কুরআন তেলাওয়াতের পর তিন উপদেষ্টাকে প্রথমে উপদেষ্টা পদের শপথ এবং পরে গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি। পরে উপদেষ্টা পদ এবং গোপনীয়তার শপথে সই করেন নতুন তিন উপদেষ্টা। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শপথ অনুষ্ঠান।

নতুন উপদেষ্টাদের পরিচয় : উপদেষ্টা হিসেবে নতুন শপথ নেওয়া শেখ বশির উদ্দিন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শিল্পোদ্যোক্তা বাবা আকিজ গ্রুপের কর্ণধার শেখ আকিজ উদ্দিনের ‘দেখানো পথ ধরে’ ব্যবসায় আসেন তিনি। তার অধীনে আকিজ বশির গ্রুপ বর্তমানে ১৮টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি বহুমুখী গ্রুপ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, বাথওয়্যার, জুট, পার্টিকেল বোর্ড, ডোরস, প্যাকেজিং, গ্লাস কারখানা। শিল্প গ্রুপটি তিনটি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ২৫টির বেশি দেশে পণ্য রফতানি করছে।

চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রায় ২৫ বছর ধরে চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। ভালোবাসার গল্প ছড়িয়ে দিতে সবশেষ ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগ্যামী’ সিনেমা তৈরি করছেন তিনি। এ ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় তার ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। নির্মাণের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো সেখানে অভিনয় করেছেন তিনি। তার বানানো চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘ব্যাচেলর’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’, ‘ডুব’ দর্শকপ্রিয় হয়।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী থেকে উপদেষ্টা হওয়া মো. মাহফুজ আলম সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবং সরকার পতন আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

দফতর বণ্টন ও পুনর্বণ্টন : রোববারের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, নিজের ওপর থাকা দায়িত্বের ভার কিছুটা কমিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগে চারটি মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা দুটি মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন। এগুলো হলো-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এখন থেকে কেবল অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। অন্যদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন এখন থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পালন করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আর আসিফ নজরুলের দায়িত্ব থাকবে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

উপদেষ্টা হাসান আরিফের দফতরও পুনর্বণ্টন হয়েছে। এখন থেকে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। আর আলী ইমাম মজুমদারকে দেওয়া হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পেয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর বাইরে অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ল দ্বিতীয় দফায় : এ সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রয়েছেন। তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখন তাদের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হলেন মাহফুজ আলম। এত কম বয়সে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নজির গড়েছেন তারা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ছাড়াও শপথ নিয়েছিলেন ১৩ জন। তারা হলেন-সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধিকারকর্মী শারমিন এস মুরশিদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আ ফ ম খালিদ হোসেন, ফরিদা আখতার, নুরজাহান বেগম, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এরপর ১১ আগস্ট শপথ নেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও বিধান রঞ্জন রায়। ১৩ আগস্ট শপথ নেন ফারুক আজম। এই তিনজনের নাম ৮ আগস্টই জানানো হয়েছিল, তবে তারা সেদিন শপথ নিতে উপস্থিত হতে পারেননি। এরপর ১৬ আগস্ট আরও চারজন শপথ নিলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২১ জনে গিয়ে ঠেকে। এদিন শপথ নেন ফাওজুল কবির খান, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ, আলী ইমাম মজুমদার।

নতুন তিনজন যুক্ত হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২৪ জন হলো।প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে, তার মধ্যে ড. ইউনূসের সরকারের আকারই সবচেয়ে বড়। বর্তমান উপদেষ্টাদের তিনজনের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওয়াহিদউদ্দিন তিনটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ এফ হাসান আরিফও এ নিয়ে দুবার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। আর ড. ইউনূস নিজে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

আরও ৩ উপদেষ্টা শপথ নিলেন

আপডেট সময় ১০:৪২:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হলেন আরও তিন উপদেষ্টা। তারা হলেন-শিল্পগোষ্ঠী আকিজ-বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। নতুন তিনজনকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা হলো ২৪ জন।

এদিকে শপথ নেওয়ার পরপরই দফতর পেয়েছেন নতুন দুই উপদেষ্টা। শেখ বশিরউদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। অন্যদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আবদুর রশিদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়। এতে অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্বেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। নতুন দুই উপদেষ্টা দফতর পেলেও উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া মাহফুজ আলমের দফতর পাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। গণআন্দোলনের আকাংখা পূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৮ আগস্ট গঠন হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তিন মাসের মাথায় এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ল। প্রথম দফায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ জন এবং পরে সম্প্রসারণ করে আরও চারজন উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন। রোববার যুক্ত হলেন নতুন তিনজন।

রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দরবার হলে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কুরআন তেলাওয়াতের পর তিন উপদেষ্টাকে প্রথমে উপদেষ্টা পদের শপথ এবং পরে গোপনীয়তার শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি। পরে উপদেষ্টা পদ এবং গোপনীয়তার শপথে সই করেন নতুন তিন উপদেষ্টা। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শপথ অনুষ্ঠান।

নতুন উপদেষ্টাদের পরিচয় : উপদেষ্টা হিসেবে নতুন শপথ নেওয়া শেখ বশির উদ্দিন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শিল্পোদ্যোক্তা বাবা আকিজ গ্রুপের কর্ণধার শেখ আকিজ উদ্দিনের ‘দেখানো পথ ধরে’ ব্যবসায় আসেন তিনি। তার অধীনে আকিজ বশির গ্রুপ বর্তমানে ১৮টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি বহুমুখী গ্রুপ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, বাথওয়্যার, জুট, পার্টিকেল বোর্ড, ডোরস, প্যাকেজিং, গ্লাস কারখানা। শিল্প গ্রুপটি তিনটি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং ২৫টির বেশি দেশে পণ্য রফতানি করছে।

চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রায় ২৫ বছর ধরে চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। ভালোবাসার গল্প ছড়িয়ে দিতে সবশেষ ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগ্যামী’ সিনেমা তৈরি করছেন তিনি। এ ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় তার ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। নির্মাণের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো সেখানে অভিনয় করেছেন তিনি। তার বানানো চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘ব্যাচেলর’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’, ‘ডুব’ দর্শকপ্রিয় হয়।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী থেকে উপদেষ্টা হওয়া মো. মাহফুজ আলম সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবং সরকার পতন আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

দফতর বণ্টন ও পুনর্বণ্টন : রোববারের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, নিজের ওপর থাকা দায়িত্বের ভার কিছুটা কমিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগে চারটি মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা দুটি মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন। এগুলো হলো-মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এখন থেকে কেবল অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। অন্যদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন এখন থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পালন করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আর আসিফ নজরুলের দায়িত্ব থাকবে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

উপদেষ্টা হাসান আরিফের দফতরও পুনর্বণ্টন হয়েছে। এখন থেকে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। আর আলী ইমাম মজুমদারকে দেওয়া হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পেয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এর বাইরে অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ল দ্বিতীয় দফায় : এ সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রয়েছেন। তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখন তাদের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হলেন মাহফুজ আলম। এত কম বয়সে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নজির গড়েছেন তারা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ছাড়াও শপথ নিয়েছিলেন ১৩ জন। তারা হলেন-সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান, আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধিকারকর্মী শারমিন এস মুরশিদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আ ফ ম খালিদ হোসেন, ফরিদা আখতার, নুরজাহান বেগম, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এরপর ১১ আগস্ট শপথ নেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও বিধান রঞ্জন রায়। ১৩ আগস্ট শপথ নেন ফারুক আজম। এই তিনজনের নাম ৮ আগস্টই জানানো হয়েছিল, তবে তারা সেদিন শপথ নিতে উপস্থিত হতে পারেননি। এরপর ১৬ আগস্ট আরও চারজন শপথ নিলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২১ জনে গিয়ে ঠেকে। এদিন শপথ নেন ফাওজুল কবির খান, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ, আলী ইমাম মজুমদার।

নতুন তিনজন যুক্ত হওয়ায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২৪ জন হলো।প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে যতগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে, তার মধ্যে ড. ইউনূসের সরকারের আকারই সবচেয়ে বড়। বর্তমান উপদেষ্টাদের তিনজনের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওয়াহিদউদ্দিন তিনটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ এফ হাসান আরিফও এ নিয়ে দুবার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। আর ড. ইউনূস নিজে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন।