ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপচয়-অপব্যয়ে চরম অধঃপতন ও প্রতিকার

মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় হলো আয় ও ব্যয়। জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য আয় অনুযায়ী ব্যয় করা যেমন প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন অপচয় ও অপব্যবহার না করা। অথচ মানব সমাজে অপচয় ও অপব্যয় অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর প্রভাব ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে অপচয় ও অপব্যবহার পরিচয়, কারণ, কিছু, দৃষ্টান্ত, এর ক্ষতিকর দিক সমূহ, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে অপচয় ও অপব্যয় বন্ধের নির্দেশনা সমূহ পেশ করা হয়েছে। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে অপচয় ও অপব্যয় সম্পর্কে শরী‘আহর নির্দেশনা জানা যাবে, যা জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে এই দূরারোগ্য ব্যাধি দূর করা জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন সহায়ক হবে। জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন এবং সম্পদ ভোগকরার অনুমতি ও নিদের্শ প্রত্যেক ধর্ম ও সভ্যতায় রয়েছে। কিন্তু অন্য কোন ধর্ম বা সভ্যতায় ইসলামের মতো আয় ব্যয়কে নিয়ম নীতির মধ্যে আনেনি। ইসলাম একদিকে যেমন হালার উপায়ে অর্থ উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছে। অপরদিকে হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থ সম্পদ হালাল পথে ও পদ্ধতিতে ব্যয় করার ও নির্দেশ দিয়েছে। মানব সমাজে অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় আজ একটি বৈশিক সমস্যায় রুপান্তরিত হয়েছে। অথচ ইসলাম এটিকে স্পটভাবে হারাম ঘোষনা করেছে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

আরবী “ইসরাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল সীমালঙ্গন, অপচয়, অপব্যয়, অমিতব্যয়, বাড়াবাড়ি, মাত্রাতিরিক্ত. অপরিমিতি। কিন্তু কতিপয় বিজ্ঞ আলীম “ইসরাফ” শব্দকে ব্যয় করা ও খাওয়ার সাথে নিদিষ্ট করেছেন। বিশিষ্ট ভাষাতত্ববিদ আলী আল জুরজানী (৭৪০-৮১৬ হি,) রহ ইসরাফ এর সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে: ইসরাফ হলো কোন নিকৃষ্ট বা তুচ্ছ উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থ সম্পদ ব্যয় করা এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা। এও বলা হয়ে থাকে যে, ইসরাফ হল অবৈধ বস্তু ভক্ষন করা অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার গ্রহন করা। উপরোক্ত অর্থ থেকে ইসরাফের সংজ্ঞা আমরা এভাবে দিতে পারি যে, মানুষ তার কথা এবং কাজে সীমালঙ্গন করা। যদিও ইসরাফ শব্দটি খরচের সাথে হওয়াই প্রসিদ্ধ।

ইসরাফ ভাল মন্দ উভয়ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। যেমন কোন ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদ সদকা করে দিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআল বলেন, এগুলোর ফল খাও, যখন ফলন্ত হয় এবং দান কর কর্তনের সময় এবং অপব্যয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। ইসরাফ ধনী দরিদ্র উভয়ের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আবার তা পরিমান গত দিক দিয়ে ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে হয়ে থাকে। এ জন্য মুহাদ্দিস সুফইয়ান আছ ছাওরী (৯৭-১৬১ হি.) রহ. বলেন, তুমি আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে যা খরচ কর তা ইসরাফ বা অপব্যয়, যদিও তা পরিমানে কম হয়। ইবনু আব্বাস রা. বলেন Ñ যে ব্যক্তি অযথা কাজে এক দিরহাম ও খরচ করল তাই অপচয়। অভিধানে তাবযীর অর্থ লেখা হয়েছে অপচয়, অপব্যয়, বাজে খরচ অমিতব্যয় ইত্যাদি। এর বুৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘বীজ ছিটানো ও নিক্ষেপ করা। এ থেকে শব্দটি রুপকভাবে অযথা ব্যয় করার অর্থে বহুলভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আল্লাহ তা আলা বলেন, তুমি অপব্যয় করবে না। ফকীহগণ “তাবযীর কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার না করা, তা অনুচিত কাজে ব্যয় করা। এই দৃষ্টিকোন থেকে ইসরাফের তুলনায় তাবযীর খাস বা নিদিষ্ট। কেননা তাবযীর হলো খারাপ কাজে সম্পদ ব্যয় করা, আর ইসরাফ হলো যে কোন কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা। আবার বিশিষ্ট ফাকীহ ইবনু আবিদীন (১১৯৮-১২৫২ হি.) রহ. অন্য দৃষ্টিকোন থেকে ইসরাফ ও তাবযীরের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তাবযীর শব্দটি ইসলাফের অর্থেই ব্যবহার হয়ে থাকে, ্এটাই প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। ইসরাফ হলো প্রয়োজনীয় কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা আর তাবযীর হলো অপাত্রে খরচ করা। ইমাম আবুল হাসান আর-মাওয়ারদী (৩৬৪-৪৫০ হি.) রহ. বলেন ‘তাবযীর হলো খরচের যথার্থ স্থান সম্পর্কে অজ্ঞতা আর সারফ হলো খরচের যথার্থ পরিমান সম্পর্কে অজ্ঞতা।

যে দীন তাকে বিভিন্ন ভাবে অপচয় ও অপব্যয় করতে নিষেধ করেছে সেই দীন সম্পর্কে অপচয় ও অপব্যয়কারীর অজ্ঞতা অপচয় ও অপব্যয়ের অন্যতম কারণ। নে ব্যক্তি কুরআন সুন্নাহের জ্ঞানেজ্ঞানী হলে তার দ্বারা অপচয় করা সম্ভব হত না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো, কিন্তু অপচয় করো না। অপচয়কারীকে দুনিয়াতে আফসোস ও লজ্জিত অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। এ মর্মে আল্লাহ তা আলা বলেন, এবং তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ের সাথে শৃঙ্খলিত করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিতও করো না তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। অপচয়কারীর জন্য আখিরাতে রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন. বাম পার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগ্য তারা! তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানীতে এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়, যা শীতল নয় এবং আরামদায়ক ও নয়। তারা ইতোপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল। অপচয়কারীর দীন সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলাফল হলো, বৈধ জিনিষ গ্রহন করতে সে সীমালঙ্ঘন করে। আর এটাই তাকে শারীরিক ও প্রবৃদ্ধির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে। এ কারণেই অলসতা তার উপর চেপে বসে। উমর রা. বলেন, তোমরা সীমাতিরিক্ত পানাহার থেকে সাবধান থাকো। কেননা অতিরিক্ত পানাহার শরীলের জন্য ক্ষতিকর, রোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক, সালাত থেকে অলসকারী। তোমরা পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তা শরীরের জন্য উপকারী, তা দ্বারা অপচয় থেকেও বেচে থাকা যায়।

মানুষ শিশু কালে তার মা বাবার আচরণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মা বাবা যদি অপচয় কারী হয়ে থাকে তাহলে সন্তান ও অপচয়ের শিক্ষা গ্রহন করে থাকে। এজন্য স্বামী-স্ত্রীকে দীন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আর তা সন্তানের কল্যানের জন্যই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ন তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয় তবে আল্লাহ নিজে অনুগ্রহে তাদেরক স্বচ্ছল করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সবজ্ঞ। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত. নবী স. বলেন, মেয়েদেরকে চারটি গুন দেখে বিবাহ করতে হয় ; তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য এবং তার দীনদারী (ধর্ম পালন)। তুমি দীনদার মেয়েকে বিবাহের ক্ষেত্রে অগ্রাদিকার দাও। অন্যথায় তোমার ধ্বংস অনিবার্য। বেশির ভাগ মানুষ অর্থ-সম্পদ হাতে আসলেই হিসাব ছাড়া খরচ করে। সে একটি বার ও ভেবে দেখে না যে, দুনিয়ার জীবন সর্ববস্থায় সমান থাকে না।

আজকে হাতে অর্থ আছে কালকে না ও থাকতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নিয়ামত যথাযথভাবে খরচ করা। আজকের অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহ করে বাকী অর্থ সম্পদ ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রাখা উচিত। যা তার বিপদের সময় কাজে আসবে। অধিকাংশ মানুষ যারা অসচ্ছল ও দরিদ্রবস্থায় দিনাতিপাত করে অথবা দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে জীবন যাপন করে তারা ঐ সময় ধৈর্য ধারণ করে। কিন্তু তারা যখন হঠাৎ ধনী হয়ে যায় কিংবা সুখের জীবন পায় তখন তারা জীবনের উপর নিয়ন্তন করতে পারে না। ব্যয়ের ক্ষেত্রে তারা বেহিসেবি হয়ে পড়ে। অপচয়ের এটি ও একটি কারণ। অপচয়ের অন্যতম কারণ হলো অপচয়কারীর সঙ্গ ও সহচর্য। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ তার সঙ্গীর চরিত্র গ্রহন করে, তাই সঙ্গী অপচয়কারী হলে তার অন্য সঙ্গী ও অপচয়কারী হবে। নবী স. বলেছেন, ব্যক্তি তার সঙ্গীর চরিত্র গ্রহন করে। সুতরাং তোমার সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করবে। অপচয়ের এটি ও একটি কারণ যে মানুষের সামনে নিজের খ্যাতির আকাক্সক্ষা করা। আর তখনই মানুষ অন্যের সামনে নিজের বড়ত্ব প্রকাশের জন্য তার সম্পদ অকাতরে খরচ করে। মূলত এর মাধ্যমে সে অপচয়ের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে যা সম্পূন্ন হারাম। মানুষ অন্যের অনুসরণ করতে গিয়ে নিজের বড়ত্ব ও দানশীলতা প্রকাশের জন্য াপচয় করে থাকে। মানুষের জানা উচিত যে,অপচয় ও অপব্যয়ের পরিণাম মারাত্মক ও ভয়াবহ। মানুষ এই খবর জানে না বা জানলেও এ সম্পর্কে উদাসীন। তাই সে অপচয় করে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

অপচয়-অপব্যয়ে চরম অধঃপতন ও প্রতিকার

আপডেট সময় ০৩:৪৮:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় হলো আয় ও ব্যয়। জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য আয় অনুযায়ী ব্যয় করা যেমন প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন অপচয় ও অপব্যবহার না করা। অথচ মানব সমাজে অপচয় ও অপব্যয় অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর প্রভাব ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রভাবিত হয়। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে অপচয় ও অপব্যবহার পরিচয়, কারণ, কিছু, দৃষ্টান্ত, এর ক্ষতিকর দিক সমূহ, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে অপচয় ও অপব্যয় বন্ধের নির্দেশনা সমূহ পেশ করা হয়েছে। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে অপচয় ও অপব্যয় সম্পর্কে শরী‘আহর নির্দেশনা জানা যাবে, যা জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে এই দূরারোগ্য ব্যাধি দূর করা জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন সহায়ক হবে। জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন এবং সম্পদ ভোগকরার অনুমতি ও নিদের্শ প্রত্যেক ধর্ম ও সভ্যতায় রয়েছে। কিন্তু অন্য কোন ধর্ম বা সভ্যতায় ইসলামের মতো আয় ব্যয়কে নিয়ম নীতির মধ্যে আনেনি। ইসলাম একদিকে যেমন হালার উপায়ে অর্থ উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছে। অপরদিকে হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থ সম্পদ হালাল পথে ও পদ্ধতিতে ব্যয় করার ও নির্দেশ দিয়েছে। মানব সমাজে অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় আজ একটি বৈশিক সমস্যায় রুপান্তরিত হয়েছে। অথচ ইসলাম এটিকে স্পটভাবে হারাম ঘোষনা করেছে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

আরবী “ইসরাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল সীমালঙ্গন, অপচয়, অপব্যয়, অমিতব্যয়, বাড়াবাড়ি, মাত্রাতিরিক্ত. অপরিমিতি। কিন্তু কতিপয় বিজ্ঞ আলীম “ইসরাফ” শব্দকে ব্যয় করা ও খাওয়ার সাথে নিদিষ্ট করেছেন। বিশিষ্ট ভাষাতত্ববিদ আলী আল জুরজানী (৭৪০-৮১৬ হি,) রহ ইসরাফ এর সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে: ইসরাফ হলো কোন নিকৃষ্ট বা তুচ্ছ উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থ সম্পদ ব্যয় করা এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা। এও বলা হয়ে থাকে যে, ইসরাফ হল অবৈধ বস্তু ভক্ষন করা অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার গ্রহন করা। উপরোক্ত অর্থ থেকে ইসরাফের সংজ্ঞা আমরা এভাবে দিতে পারি যে, মানুষ তার কথা এবং কাজে সীমালঙ্গন করা। যদিও ইসরাফ শব্দটি খরচের সাথে হওয়াই প্রসিদ্ধ।

ইসরাফ ভাল মন্দ উভয়ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। যেমন কোন ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদ সদকা করে দিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআল বলেন, এগুলোর ফল খাও, যখন ফলন্ত হয় এবং দান কর কর্তনের সময় এবং অপব্যয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। ইসরাফ ধনী দরিদ্র উভয়ের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আবার তা পরিমান গত দিক দিয়ে ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে হয়ে থাকে। এ জন্য মুহাদ্দিস সুফইয়ান আছ ছাওরী (৯৭-১৬১ হি.) রহ. বলেন, তুমি আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে যা খরচ কর তা ইসরাফ বা অপব্যয়, যদিও তা পরিমানে কম হয়। ইবনু আব্বাস রা. বলেন Ñ যে ব্যক্তি অযথা কাজে এক দিরহাম ও খরচ করল তাই অপচয়। অভিধানে তাবযীর অর্থ লেখা হয়েছে অপচয়, অপব্যয়, বাজে খরচ অমিতব্যয় ইত্যাদি। এর বুৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘বীজ ছিটানো ও নিক্ষেপ করা। এ থেকে শব্দটি রুপকভাবে অযথা ব্যয় করার অর্থে বহুলভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আল্লাহ তা আলা বলেন, তুমি অপব্যয় করবে না। ফকীহগণ “তাবযীর কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার না করা, তা অনুচিত কাজে ব্যয় করা। এই দৃষ্টিকোন থেকে ইসরাফের তুলনায় তাবযীর খাস বা নিদিষ্ট। কেননা তাবযীর হলো খারাপ কাজে সম্পদ ব্যয় করা, আর ইসরাফ হলো যে কোন কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা। আবার বিশিষ্ট ফাকীহ ইবনু আবিদীন (১১৯৮-১২৫২ হি.) রহ. অন্য দৃষ্টিকোন থেকে ইসরাফ ও তাবযীরের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তাবযীর শব্দটি ইসলাফের অর্থেই ব্যবহার হয়ে থাকে, ্এটাই প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। ইসরাফ হলো প্রয়োজনীয় কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা আর তাবযীর হলো অপাত্রে খরচ করা। ইমাম আবুল হাসান আর-মাওয়ারদী (৩৬৪-৪৫০ হি.) রহ. বলেন ‘তাবযীর হলো খরচের যথার্থ স্থান সম্পর্কে অজ্ঞতা আর সারফ হলো খরচের যথার্থ পরিমান সম্পর্কে অজ্ঞতা।

যে দীন তাকে বিভিন্ন ভাবে অপচয় ও অপব্যয় করতে নিষেধ করেছে সেই দীন সম্পর্কে অপচয় ও অপব্যয়কারীর অজ্ঞতা অপচয় ও অপব্যয়ের অন্যতম কারণ। নে ব্যক্তি কুরআন সুন্নাহের জ্ঞানেজ্ঞানী হলে তার দ্বারা অপচয় করা সম্ভব হত না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো, কিন্তু অপচয় করো না। অপচয়কারীকে দুনিয়াতে আফসোস ও লজ্জিত অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। এ মর্মে আল্লাহ তা আলা বলেন, এবং তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ের সাথে শৃঙ্খলিত করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিতও করো না তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। অপচয়কারীর জন্য আখিরাতে রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন. বাম পার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগ্য তারা! তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানীতে এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়, যা শীতল নয় এবং আরামদায়ক ও নয়। তারা ইতোপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল। অপচয়কারীর দীন সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলাফল হলো, বৈধ জিনিষ গ্রহন করতে সে সীমালঙ্ঘন করে। আর এটাই তাকে শারীরিক ও প্রবৃদ্ধির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে। এ কারণেই অলসতা তার উপর চেপে বসে। উমর রা. বলেন, তোমরা সীমাতিরিক্ত পানাহার থেকে সাবধান থাকো। কেননা অতিরিক্ত পানাহার শরীলের জন্য ক্ষতিকর, রোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক, সালাত থেকে অলসকারী। তোমরা পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তা শরীরের জন্য উপকারী, তা দ্বারা অপচয় থেকেও বেচে থাকা যায়।

মানুষ শিশু কালে তার মা বাবার আচরণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মা বাবা যদি অপচয় কারী হয়ে থাকে তাহলে সন্তান ও অপচয়ের শিক্ষা গ্রহন করে থাকে। এজন্য স্বামী-স্ত্রীকে দীন মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আর তা সন্তানের কল্যানের জন্যই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ন তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয় তবে আল্লাহ নিজে অনুগ্রহে তাদেরক স্বচ্ছল করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সবজ্ঞ। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত. নবী স. বলেন, মেয়েদেরকে চারটি গুন দেখে বিবাহ করতে হয় ; তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য এবং তার দীনদারী (ধর্ম পালন)। তুমি দীনদার মেয়েকে বিবাহের ক্ষেত্রে অগ্রাদিকার দাও। অন্যথায় তোমার ধ্বংস অনিবার্য। বেশির ভাগ মানুষ অর্থ-সম্পদ হাতে আসলেই হিসাব ছাড়া খরচ করে। সে একটি বার ও ভেবে দেখে না যে, দুনিয়ার জীবন সর্ববস্থায় সমান থাকে না।

আজকে হাতে অর্থ আছে কালকে না ও থাকতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নিয়ামত যথাযথভাবে খরচ করা। আজকের অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহ করে বাকী অর্থ সম্পদ ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রাখা উচিত। যা তার বিপদের সময় কাজে আসবে। অধিকাংশ মানুষ যারা অসচ্ছল ও দরিদ্রবস্থায় দিনাতিপাত করে অথবা দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে জীবন যাপন করে তারা ঐ সময় ধৈর্য ধারণ করে। কিন্তু তারা যখন হঠাৎ ধনী হয়ে যায় কিংবা সুখের জীবন পায় তখন তারা জীবনের উপর নিয়ন্তন করতে পারে না। ব্যয়ের ক্ষেত্রে তারা বেহিসেবি হয়ে পড়ে। অপচয়ের এটি ও একটি কারণ। অপচয়ের অন্যতম কারণ হলো অপচয়কারীর সঙ্গ ও সহচর্য। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ তার সঙ্গীর চরিত্র গ্রহন করে, তাই সঙ্গী অপচয়কারী হলে তার অন্য সঙ্গী ও অপচয়কারী হবে। নবী স. বলেছেন, ব্যক্তি তার সঙ্গীর চরিত্র গ্রহন করে। সুতরাং তোমার সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করবে। অপচয়ের এটি ও একটি কারণ যে মানুষের সামনে নিজের খ্যাতির আকাক্সক্ষা করা। আর তখনই মানুষ অন্যের সামনে নিজের বড়ত্ব প্রকাশের জন্য তার সম্পদ অকাতরে খরচ করে। মূলত এর মাধ্যমে সে অপচয়ের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে যা সম্পূন্ন হারাম। মানুষ অন্যের অনুসরণ করতে গিয়ে নিজের বড়ত্ব ও দানশীলতা প্রকাশের জন্য াপচয় করে থাকে। মানুষের জানা উচিত যে,অপচয় ও অপব্যয়ের পরিণাম মারাত্মক ও ভয়াবহ। মানুষ এই খবর জানে না বা জানলেও এ সম্পর্কে উদাসীন। তাই সে অপচয় করে।