ঢাকা , সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১ Logo ফতুল্লায় নকল খাদ্য উৎপাদন কারখানায় অভিযান : জরিমানা ও কারাদণ্ড Logo ফতুল্লায় বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু Logo বন্দরে ১৮০০ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ৪ হোটেলকে লাখ টাকা জরিমানা Logo ফতুল্লায় পোশাক কারখানার গ্যাস চেম্বার রুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬ Logo বন্দরে বাবুলের পক্ষে লিফলেট বিতরণ Logo আবু জাফর বাবুলের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ফুল ও ফলজ বৃক্ষ রোপন Logo বিদেশ সফরে সরকারের ১০ কর্মকর্তা, চলছে তীব্র বিতর্ক Logo আরপিও সংশোধনীর বিরোধিতা করে সিইসিকে চিঠি বিএনপির Logo নারায়ণগঞ্জে ডাইং কারখানায় বিস্ফোরণ : দগ্ধ ৬ জন জাতীয় বার্নে

দায় চাপানোর রাজনীতি : সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অন্তরায়

মোঃ মামুন হোসেন : বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অন্যতম বড় সংকট হলো দায় চাপানোর রাজনীতি। ক্ষমতায় থাকুক বা বিরোধী দলে থাকুক, রাজনৈতিক নেতাদের একটি বড় অংশ নিজেদের ব্যর্থতা, দুর্বলতা ও ভুলত্রুটি স্বীকার না করে প্রতিপক্ষের কাঁধে দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়মুক্ত করার চেষ্টা করে। এ ধরনের সংস্কৃতি শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনকেই কলুষিত করছে না, বরং জাতীয় ঐক্য, সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা এবং ভ্রাতৃত্ববোধকেও ধ্বংস করছে। ফলে জনগণের আস্থা ক্রমে রাজনীতির প্রতি কমে যাচ্ছে, আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণের কাছে হয়ে উঠছে অবাঞ্ছিত।রাজনীতিতে দায় চাপানোর প্রবণতা নতুন নয়। পাকিস্তান আমল থেকেই শাসকগোষ্ঠী সব ব্যর্থতার দায় জনগণ বা রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। স্বাধীনতার পরও একই ধারা বহমান রয়েছে। সরকারে থাকলে ক্ষমতাসীনরা বলে, আগের সরকার দেশে দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও অব্যবস্থাপনার বীজ বপন করেছে, তাই তারা দ্রুত সমাধান করতে পারছে না। অপরদিকে বিরোধীদল বলে, সরকারের সব উদ্যোগই ভুল; কিন্তু নিজেদের দায়িত্ব বা দুর্বলতার কথা তারা কখনোই খোলাখুলি স্বীকার করে না। এই দোষারোপ-দায় চাপানো রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে সমাজে এক ধরনের নেতিবাচক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করেছে।গণতন্ত্রের মূল শক্তি হলো সহনশীলতা, জবাবদিহিতা এবং মতের ভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করা। অথচ দায় চাপানোর সংস্কৃতি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রুতে পরিণত করে। প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করা, মিথ্যা অভিযোগ তোলা কিংবা অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস হয়ে যায়। একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের আসল কর্মসূচি থেকে দূরে সরে যায়। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা জন্ম নেয়। তারা মনে করে রাজনীতি মানেই বিরোধিতা, সংঘাত আর দায় চাপানো।১. সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট হয় –রাজনীতিবিদরা প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করতে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে, নিজেরা আত্মসমালোচনা করার সুযোগ হারান।২. জনগণের আস্থা নষ্ট হয় – সাধারণ মানুষ দেখে, যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ব্যর্থতার দায় অন্যের ওপর চাপানো হয়। এতে তাদের আস্থা কমে যায়।
৩. রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় – দায়িত্বজ্ঞানহীন দোষারোপ সংস্কৃতি উন্নয়নের গতি কমিয়ে দেয়। প্রকৃত সমস্যার সমাধান হয় না।৪. যুবসমাজ বিমুখ হয় – তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখে, বরং বিভাজন ও বিদ্বেষের জায়গা হিসেবে দেখে। ফলে যোগ্য মানুষ রাজনীতি থেকে সরে যায়।৫. আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় – একটি রাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা যদি পরস্পরকে দোষারোপ করতেই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিসরে সেই দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ করা একজন নেতার অন্যতম গুণ। উন্নত দেশগুলিতে দেখা যায়—কোনো মন্ত্রী কোনো খাতে ব্যর্থ হলে তিনি সরাসরি দায় স্বীকার করেন এবং পদত্যাগ পর্যন্ত করেন। এর ফলে জনগণের কাছে নেতৃত্বের মর্যাদা বাড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে নেতারা ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে তা প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চাপান। তাই দায় স্বীকারের সংস্কৃতি গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।করণীয়-১. রাজনীতিবিদদের মানসিকতা পরিবর্তন – নিজেদের ভুল স্বীকার করার সাহস তৈরি করতে হবে।২. দলীয় শৃঙ্খলা জোরদার – দলীয় পর্যায়ে নেতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।৩. গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা – দোষারোপের রাজনীতি না ছড়িয়ে সমাধানমুখী আলোচনার চর্চা বাড়াতে হবে।4. জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি – ভোটারদের বুঝতে হবে, যে দল দায় এড়িয়ে চলে তাদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিরাপদ নয়।৫. শিক্ষা ও তরুণদের সম্পৃক্ততা – নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল ও নৈতিক রাজনীতির চর্চায় সম্পৃক্ত করতে হবে।দায় চাপানোর রাজনীতি কারো জন্যই সুফল বয়ে আনে না। এটি যেমন রাজনৈতিক অঙ্গনে ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট করে, তেমনি সাধারণ মানুষের মনে রাজনীতির প্রতি ঘৃণা জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে যারা প্রতিনিয়ত দায় চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চান, তারাই জনগণের কাছে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েন। তাই এখনই সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরিবর্তন করার। প্রয়োজন দায় স্বীকার, জবাবদিহি ও দায়িত্বশীলতার চর্চা। তাহলেই রাজনীতির অঙ্গন হবে সুস্থ, সুন্দর ও ভ্রাতৃত্ববোধসম্পন্ন।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১

দায় চাপানোর রাজনীতি : সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অন্তরায়

আপডেট সময় ১০:৪১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোঃ মামুন হোসেন : বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অন্যতম বড় সংকট হলো দায় চাপানোর রাজনীতি। ক্ষমতায় থাকুক বা বিরোধী দলে থাকুক, রাজনৈতিক নেতাদের একটি বড় অংশ নিজেদের ব্যর্থতা, দুর্বলতা ও ভুলত্রুটি স্বীকার না করে প্রতিপক্ষের কাঁধে দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়মুক্ত করার চেষ্টা করে। এ ধরনের সংস্কৃতি শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনকেই কলুষিত করছে না, বরং জাতীয় ঐক্য, সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা এবং ভ্রাতৃত্ববোধকেও ধ্বংস করছে। ফলে জনগণের আস্থা ক্রমে রাজনীতির প্রতি কমে যাচ্ছে, আর রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণের কাছে হয়ে উঠছে অবাঞ্ছিত।রাজনীতিতে দায় চাপানোর প্রবণতা নতুন নয়। পাকিস্তান আমল থেকেই শাসকগোষ্ঠী সব ব্যর্থতার দায় জনগণ বা রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। স্বাধীনতার পরও একই ধারা বহমান রয়েছে। সরকারে থাকলে ক্ষমতাসীনরা বলে, আগের সরকার দেশে দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও অব্যবস্থাপনার বীজ বপন করেছে, তাই তারা দ্রুত সমাধান করতে পারছে না। অপরদিকে বিরোধীদল বলে, সরকারের সব উদ্যোগই ভুল; কিন্তু নিজেদের দায়িত্ব বা দুর্বলতার কথা তারা কখনোই খোলাখুলি স্বীকার করে না। এই দোষারোপ-দায় চাপানো রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে সমাজে এক ধরনের নেতিবাচক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করেছে।গণতন্ত্রের মূল শক্তি হলো সহনশীলতা, জবাবদিহিতা এবং মতের ভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করা। অথচ দায় চাপানোর সংস্কৃতি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রুতে পরিণত করে। প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করা, মিথ্যা অভিযোগ তোলা কিংবা অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস হয়ে যায়। একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের আসল কর্মসূচি থেকে দূরে সরে যায়। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা জন্ম নেয়। তারা মনে করে রাজনীতি মানেই বিরোধিতা, সংঘাত আর দায় চাপানো।১. সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট হয় –রাজনীতিবিদরা প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করতে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে, নিজেরা আত্মসমালোচনা করার সুযোগ হারান।২. জনগণের আস্থা নষ্ট হয় – সাধারণ মানুষ দেখে, যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ব্যর্থতার দায় অন্যের ওপর চাপানো হয়। এতে তাদের আস্থা কমে যায়।
৩. রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় – দায়িত্বজ্ঞানহীন দোষারোপ সংস্কৃতি উন্নয়নের গতি কমিয়ে দেয়। প্রকৃত সমস্যার সমাধান হয় না।৪. যুবসমাজ বিমুখ হয় – তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখে, বরং বিভাজন ও বিদ্বেষের জায়গা হিসেবে দেখে। ফলে যোগ্য মানুষ রাজনীতি থেকে সরে যায়।৫. আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় – একটি রাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা যদি পরস্পরকে দোষারোপ করতেই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিসরে সেই দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ করা একজন নেতার অন্যতম গুণ। উন্নত দেশগুলিতে দেখা যায়—কোনো মন্ত্রী কোনো খাতে ব্যর্থ হলে তিনি সরাসরি দায় স্বীকার করেন এবং পদত্যাগ পর্যন্ত করেন। এর ফলে জনগণের কাছে নেতৃত্বের মর্যাদা বাড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে নেতারা ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে তা প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চাপান। তাই দায় স্বীকারের সংস্কৃতি গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।করণীয়-১. রাজনীতিবিদদের মানসিকতা পরিবর্তন – নিজেদের ভুল স্বীকার করার সাহস তৈরি করতে হবে।২. দলীয় শৃঙ্খলা জোরদার – দলীয় পর্যায়ে নেতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।৩. গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা – দোষারোপের রাজনীতি না ছড়িয়ে সমাধানমুখী আলোচনার চর্চা বাড়াতে হবে।4. জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি – ভোটারদের বুঝতে হবে, যে দল দায় এড়িয়ে চলে তাদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিরাপদ নয়।৫. শিক্ষা ও তরুণদের সম্পৃক্ততা – নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল ও নৈতিক রাজনীতির চর্চায় সম্পৃক্ত করতে হবে।দায় চাপানোর রাজনীতি কারো জন্যই সুফল বয়ে আনে না। এটি যেমন রাজনৈতিক অঙ্গনে ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট করে, তেমনি সাধারণ মানুষের মনে রাজনীতির প্রতি ঘৃণা জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে যারা প্রতিনিয়ত দায় চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চান, তারাই জনগণের কাছে অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েন। তাই এখনই সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরিবর্তন করার। প্রয়োজন দায় স্বীকার, জবাবদিহি ও দায়িত্বশীলতার চর্চা। তাহলেই রাজনীতির অঙ্গন হবে সুস্থ, সুন্দর ও ভ্রাতৃত্ববোধসম্পন্ন।