ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার কারণে বাড়বে রেমিট্যান্স

অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রধানত চার কারণে বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে প্রবাসীরা বাড়তি অর্থ পাচ্ছেন। হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে রেমিট্যান্সের অর্থ।

এছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে রেমিট্যান্সের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আরোপিত ফি প্রত্যাহার করায় খরচ কিছুটা কমেছে। এতেও রেমিট্যান্স বাড়বে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে বছর শেষে তা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।

সূত্র জানায়, করোনার কারণে ২০২০ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে মন্দা ছিল। ওই সময়ে বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে মানুষ ফেরত এসেছে বেশি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থমকে ছিল জনশক্তি রপ্তানি। ওই বছরের অক্টোবর থেকে তা বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ৭৪ হাজার জন। ওই বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখে। ২০২২ সালের জানুয়ারি-মার্চে ৩ লাখ ২৩ হাজার জন, একই বছরের এপ্রিল-জুনে ২ লাখ ৯৩ হাজার, জুলাই-সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৫৯ হাজার এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে ২ লাখ ৬১ হাজার জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে ৩ লাখ ২৩ হাজার জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেকর্ড হয়। সব মিলে এখন বিদেশে মোট কর্মীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ।

নতুন অভিবাসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়। দেশগুলো মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নতুন কর্মীরা দেশে অর্থ পাঠানো শুরু করলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এক বছর ধরে হুন্ডির বিরুদ্ধে সরকার বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রবাসীদেরও সচেতন করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সরকারের একাধিক প্রতিনিধিদল গিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে সে দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের একই সময়ে তা প্রায় শতভাগ বেড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৭ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্সের ডলারের দাম গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রতিমাসেই গড়ে এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে রেমিট্যান্সের প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে সরকারি খাতের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলারে মিলছে ১১১ টাকা ২৫ পয়সা। কোনো কোনো ব্যাংক আরও বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে। এছাড়া পুরস্কারসহ অন্যান্য প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। তবে হুন্ডিতে ডলারের দাম এর চেয়ে বেশি। তবে এতে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৮ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে রেমিট্যান্সের বিপরীতে বেশি অর্থ পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব প্রবাসীর বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, তাদের হিসাব খুলতে সহায়তা করা হচ্ছে। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ব্যাংকিং সেবা বাড়ানো হচ্ছে। দেশে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধিবিধান শিথিল করা হয়েছে। এখন যে কেউ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই যে কোনো অঙ্কের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে পারেন। এই অর্থ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাংক কোনো ফি নিচ্ছে না। এখন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপসের মাধ্যমেও রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এসব কারণে আগামী অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার আভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশা ছিল ৪ শতাংশ হবে। মন্দা থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ আশানুরূপভাবে বাড়েনি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

চার কারণে বাড়বে রেমিট্যান্স

আপডেট সময় ০৪:১৩:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩

অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রধানত চার কারণে বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে প্রবাসীরা বাড়তি অর্থ পাচ্ছেন। হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে রেমিট্যান্সের অর্থ।

এছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে রেমিট্যান্সের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আরোপিত ফি প্রত্যাহার করায় খরচ কিছুটা কমেছে। এতেও রেমিট্যান্স বাড়বে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে বছর শেষে তা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।

সূত্র জানায়, করোনার কারণে ২০২০ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে মন্দা ছিল। ওই সময়ে বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে মানুষ ফেরত এসেছে বেশি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থমকে ছিল জনশক্তি রপ্তানি। ওই বছরের অক্টোবর থেকে তা বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ৭৪ হাজার জন। ওই বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখে। ২০২২ সালের জানুয়ারি-মার্চে ৩ লাখ ২৩ হাজার জন, একই বছরের এপ্রিল-জুনে ২ লাখ ৯৩ হাজার, জুলাই-সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৫৯ হাজার এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে ২ লাখ ৬১ হাজার জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে ৩ লাখ ২৩ হাজার জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেকর্ড হয়। সব মিলে এখন বিদেশে মোট কর্মীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ।

নতুন অভিবাসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়। দেশগুলো মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নতুন কর্মীরা দেশে অর্থ পাঠানো শুরু করলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এক বছর ধরে হুন্ডির বিরুদ্ধে সরকার বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রবাসীদেরও সচেতন করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সরকারের একাধিক প্রতিনিধিদল গিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে সে দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের একই সময়ে তা প্রায় শতভাগ বেড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৭ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্সের ডলারের দাম গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রতিমাসেই গড়ে এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে রেমিট্যান্সের প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে সরকারি খাতের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলারে মিলছে ১১১ টাকা ২৫ পয়সা। কোনো কোনো ব্যাংক আরও বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে। এছাড়া পুরস্কারসহ অন্যান্য প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। তবে হুন্ডিতে ডলারের দাম এর চেয়ে বেশি। তবে এতে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৮ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে রেমিট্যান্সের বিপরীতে বেশি অর্থ পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব প্রবাসীর বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, তাদের হিসাব খুলতে সহায়তা করা হচ্ছে। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ব্যাংকিং সেবা বাড়ানো হচ্ছে। দেশে রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধিবিধান শিথিল করা হয়েছে। এখন যে কেউ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই যে কোনো অঙ্কের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে পারেন। এই অর্থ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাংক কোনো ফি নিচ্ছে না। এখন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপসের মাধ্যমেও রেমিট্যান্সের অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এসব কারণে আগামী অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার আভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশা ছিল ৪ শতাংশ হবে। মন্দা থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ আশানুরূপভাবে বাড়েনি।