ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৪ বছরেই রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরি, বিশ্বকে বার্তা দিয়ে রাখলেন বৈভব

‘আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়/পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা/এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়—/আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা’ – সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা এ লাইন কতোশত টিনেজ প্রডিজিকে মহিমান্বিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে বৈভব সূর্যবংশীর ক্ষেত্রে সেটাকেও বেমানান ঠেকছে।

 

কেনই বা ঠেকবে না? সুকান্ত তার কবিতাটা লিখেছিলেন ১৮ বছরের তারুণ্যকে উপজীব্য করে। সেখানে বৈভবের তো কৈশোরই শেষ হয়নি! যে ১৮’র কথা সুকান্ত বলেছিলেন, সে আঠারোতে পৌঁছুতেও তো তার আরও ৪ বছর লাগবে!

 

১৪ বছর বয়সে আইপিএলে খেলতে নামাটাই বিশাল অর্জন। নেমেই লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে খেলে বসেছিলেন ২০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস, প্রথম বলেই শার্দূল ঠাকুরকে হাঁকিয়ে বসেছিলেন ছক্কা। কেন তাকে এ বয়সেই অভিষেক করে দেওয়া, তার একটা জবাব ছিল সে ইনিংসে। তবে সে জবাবটা আরেকটু ভালো করে মিলল গত রাতে।

 

সদ্য ১৪ শেষ করে ১৫-তে পা দেওয়া বৈভব একটা সেঞ্চুরিই হাঁকিয়ে বসলেন। তাও আবার আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। গড়লেন একগাদা রেকর্ড, নাড়িয়েই দিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে, গোটা বিশ্বকেও বৈকি।

 

 

আইপিএলকে যদি একটা মানুষ হিসেবে কল্পনা করেন, তাহলে ‘তার’ বয়স দাঁড়াবে ১৭ বছর ১১ দিন। অর্থাৎ আইপিএল ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হয়নি এখনও।

 

গত রাতে তোলপাড় ফেলে দেওয়া বৈভব সেই আইপিএলের চেয়েও বয়সে ছোট। আজ থেকে ১৭ বছর ১০ দিন আগে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বোলারদের তুলোধুনো করে ১৫৮ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসটা খেললেন, কিংবা তার এখনকার দল রাজস্থান যখন প্রয়াত শেন ওয়ার্নের হাত ধরে জিতল প্রথম আইপিএল শিরোপাটা, তখনও তার জন্ম নিতে আরও ৩ বছর বাকি প্রায়!

 

বৈভবের চেহারাটা দেখুন, মুখে ঠিকঠাক দাড়িগোঁফের রেখাটাও দেখা দেয়নি। সে ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সি বৈভব সূর্যবংশীর ব্যাটেই গত রাতে চুরমার হলো গুজরাট টাইটান্সের বিশ্বমানের বোলিং লাইন আপ। বৈভব কাল কাদের শাসিয়েছেন দেখুন একবার— মোহাম্মদ সিরাজ, প্রসিধ কৃষ্ণ, সময়ের সেরা অলরাউন্ডার রশিদ খান, আইপিএল সেনসেশন সাই কিশোর। তাদের বিপক্ষে কী অবলীলায় সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়ে নিলেন তিনি!

 

যে পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েছেন সেটা মাথায় রাখলে এর মাহাত্ম্য বেড়ে যায় আরও একটু। ২১০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল গুজরাট। এবারের আইপিএলে এমন রানের দেখা মিলছে কদাচিৎ। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে এ রান তাড়া করার কাজটা সহজ ছিল না তার দল রাজস্থানের জন্য।

 

সেখানে দাঁড়িয়ে বৈভবের ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস কাজটা ডালভাত বানিয়ে দিল আইপিএলের প্রথম চ্যাম্পিয়নদের জন্য। বৈভব কাল রাতে সেঞ্চুরির পথে ছয় মেরেছেন ১১টা, চার আছে ৭টি। সব মিলিয়ে তার বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি থেকেই রান এসেছে ৯৪। শতকরা ৯৩.০৭ ভাগ রান এসেছে বাউন্ডারিতে। আইপিএল তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক সেঞ্চুরি ইনিংসে এত বেশি ভাগ রান বাউন্ডারিতে আসেনি আর কখনো।

 

তার এ সেঞ্চুরি ভারতীয়দের মধ্যে আইপিএলে দ্রুততম। ২০১০ সালে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ইউসুফ পাঠান। সব মিলিয়ে আইপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম। ৩০ বলে সেঞ্চুরি করে প্রথম স্থানটা দখলে রেখেছেন ক্রিস গেইল।

 

বৈভবের এ ইনিংস যখন প্রসিধ কৃষ্ণর বলে বোল্ড হয়ে শেষ হলো ইনিংসের ১২তম ওভারে, ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে উঠে গেছে ১৬৬ রান। ওপেনিং জুটিতে রাজস্থানের সর্বোচ্চ। এরপর তার দল এ রানটা তাড়া করে ফেলে ইনিংসের ১৬তম ওভারেই। ২০০র বেশি রান তাড়ায় এর চেয়ে কম ওভার আর কোনো দলকেই খেলতে হয়নি আর কখনো।

 

স্প্যানিশ তারকা লামিন ইয়ামালকে নিয়ে পিটার ড্রুরি গেল বছর ইউরোয় অবাক বিস্ময়ে বলেছিলেন, ‘লামিন ইয়ামাল, ১৬ বছর বয়স মাত্র! এ বয়সে আপনি কী করছিলেন? এখানের গল্পটা ছোট্ট ছেলেটার পুরুষ হয়ে ওঠার গল্প। কী দারুণ এক গল্প, তাই না?’

 

কাছাকাছি একটা কিছু গত রাতে ক্রিকেট মাঠে ঘটিয়ে দিলেন বৈভব। লামিনের চেয়েও আরও কম বয়সে! রেকর্ডের পাতা তোলপাড় হলো তাতে। সাবেক-বর্তমান রথী-মহারথীদের চোয়াল ঝুলিয়ে দিয়ে প্রশংসাও কুড়ালেন অগুণতি।

 

তাতে বিশ্বও একটা বার্তা পেয়ে গেল বৈকি! এভাবে খেলতে থাকলে ওই আঠারোর আগেই যে ভারতের আকাশরঙা জার্সিটা গায়ে চড়বে বৈভবের, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

১৪ বছরেই রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরি, বিশ্বকে বার্তা দিয়ে রাখলেন বৈভব

আপডেট সময় ১২:৫৭:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

‘আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়/পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা/এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়—/আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা’ – সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা এ লাইন কতোশত টিনেজ প্রডিজিকে মহিমান্বিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে বৈভব সূর্যবংশীর ক্ষেত্রে সেটাকেও বেমানান ঠেকছে।

 

কেনই বা ঠেকবে না? সুকান্ত তার কবিতাটা লিখেছিলেন ১৮ বছরের তারুণ্যকে উপজীব্য করে। সেখানে বৈভবের তো কৈশোরই শেষ হয়নি! যে ১৮’র কথা সুকান্ত বলেছিলেন, সে আঠারোতে পৌঁছুতেও তো তার আরও ৪ বছর লাগবে!

 

১৪ বছর বয়সে আইপিএলে খেলতে নামাটাই বিশাল অর্জন। নেমেই লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে খেলে বসেছিলেন ২০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস, প্রথম বলেই শার্দূল ঠাকুরকে হাঁকিয়ে বসেছিলেন ছক্কা। কেন তাকে এ বয়সেই অভিষেক করে দেওয়া, তার একটা জবাব ছিল সে ইনিংসে। তবে সে জবাবটা আরেকটু ভালো করে মিলল গত রাতে।

 

সদ্য ১৪ শেষ করে ১৫-তে পা দেওয়া বৈভব একটা সেঞ্চুরিই হাঁকিয়ে বসলেন। তাও আবার আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। গড়লেন একগাদা রেকর্ড, নাড়িয়েই দিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে, গোটা বিশ্বকেও বৈকি।

 

 

আইপিএলকে যদি একটা মানুষ হিসেবে কল্পনা করেন, তাহলে ‘তার’ বয়স দাঁড়াবে ১৭ বছর ১১ দিন। অর্থাৎ আইপিএল ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হয়নি এখনও।

 

গত রাতে তোলপাড় ফেলে দেওয়া বৈভব সেই আইপিএলের চেয়েও বয়সে ছোট। আজ থেকে ১৭ বছর ১০ দিন আগে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বোলারদের তুলোধুনো করে ১৫৮ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসটা খেললেন, কিংবা তার এখনকার দল রাজস্থান যখন প্রয়াত শেন ওয়ার্নের হাত ধরে জিতল প্রথম আইপিএল শিরোপাটা, তখনও তার জন্ম নিতে আরও ৩ বছর বাকি প্রায়!

 

বৈভবের চেহারাটা দেখুন, মুখে ঠিকঠাক দাড়িগোঁফের রেখাটাও দেখা দেয়নি। সে ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সি বৈভব সূর্যবংশীর ব্যাটেই গত রাতে চুরমার হলো গুজরাট টাইটান্সের বিশ্বমানের বোলিং লাইন আপ। বৈভব কাল কাদের শাসিয়েছেন দেখুন একবার— মোহাম্মদ সিরাজ, প্রসিধ কৃষ্ণ, সময়ের সেরা অলরাউন্ডার রশিদ খান, আইপিএল সেনসেশন সাই কিশোর। তাদের বিপক্ষে কী অবলীলায় সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়ে নিলেন তিনি!

 

যে পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েছেন সেটা মাথায় রাখলে এর মাহাত্ম্য বেড়ে যায় আরও একটু। ২১০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল গুজরাট। এবারের আইপিএলে এমন রানের দেখা মিলছে কদাচিৎ। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে এ রান তাড়া করার কাজটা সহজ ছিল না তার দল রাজস্থানের জন্য।

 

সেখানে দাঁড়িয়ে বৈভবের ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস কাজটা ডালভাত বানিয়ে দিল আইপিএলের প্রথম চ্যাম্পিয়নদের জন্য। বৈভব কাল রাতে সেঞ্চুরির পথে ছয় মেরেছেন ১১টা, চার আছে ৭টি। সব মিলিয়ে তার বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি থেকেই রান এসেছে ৯৪। শতকরা ৯৩.০৭ ভাগ রান এসেছে বাউন্ডারিতে। আইপিএল তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক সেঞ্চুরি ইনিংসে এত বেশি ভাগ রান বাউন্ডারিতে আসেনি আর কখনো।

 

তার এ সেঞ্চুরি ভারতীয়দের মধ্যে আইপিএলে দ্রুততম। ২০১০ সালে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ইউসুফ পাঠান। সব মিলিয়ে আইপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম। ৩০ বলে সেঞ্চুরি করে প্রথম স্থানটা দখলে রেখেছেন ক্রিস গেইল।

 

বৈভবের এ ইনিংস যখন প্রসিধ কৃষ্ণর বলে বোল্ড হয়ে শেষ হলো ইনিংসের ১২তম ওভারে, ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে উঠে গেছে ১৬৬ রান। ওপেনিং জুটিতে রাজস্থানের সর্বোচ্চ। এরপর তার দল এ রানটা তাড়া করে ফেলে ইনিংসের ১৬তম ওভারেই। ২০০র বেশি রান তাড়ায় এর চেয়ে কম ওভার আর কোনো দলকেই খেলতে হয়নি আর কখনো।

 

স্প্যানিশ তারকা লামিন ইয়ামালকে নিয়ে পিটার ড্রুরি গেল বছর ইউরোয় অবাক বিস্ময়ে বলেছিলেন, ‘লামিন ইয়ামাল, ১৬ বছর বয়স মাত্র! এ বয়সে আপনি কী করছিলেন? এখানের গল্পটা ছোট্ট ছেলেটার পুরুষ হয়ে ওঠার গল্প। কী দারুণ এক গল্প, তাই না?’

 

কাছাকাছি একটা কিছু গত রাতে ক্রিকেট মাঠে ঘটিয়ে দিলেন বৈভব। লামিনের চেয়েও আরও কম বয়সে! রেকর্ডের পাতা তোলপাড় হলো তাতে। সাবেক-বর্তমান রথী-মহারথীদের চোয়াল ঝুলিয়ে দিয়ে প্রশংসাও কুড়ালেন অগুণতি।

 

তাতে বিশ্বও একটা বার্তা পেয়ে গেল বৈকি! এভাবে খেলতে থাকলে ওই আঠারোর আগেই যে ভারতের আকাশরঙা জার্সিটা গায়ে চড়বে বৈভবের, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলে।