চট্টগ্রামে সেবা সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনার খেসারত বছরজুড়ে দিতে হয় নগরের বাসিন্দাদের। খাল ও নালা-নর্দমায় পড়ে মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এর মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ও কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবু টনক নড়েনি নীতিনির্ধারকদের। বছরজুড়ে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নিজেদের দায় এড়িয়েছে। ঘটনার দায় পরস্পরের কাঁধে চাপিয়েছে দুটি সংস্থা।
সর্বশেষ নগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় হিজড়া খালে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাসের শিশু সেহরিশের। শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কাপাসগোলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশুসহ তিন জনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উল্টে ওই খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা সালমা বেগম ও দাদি আয়েশা বেগম খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লাশ উদ্ধার করা হয়।
নেই কোনও নিরাপত্তাবেষ্টনী
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জানিয়েছেন, এটি হিজড়া খাল নামে পরিচিত। খালের বিভিন্ন অংশে আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। চালক অটোরিকশাটি ঘোরাতে গিয়ে খালে ফেলে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে দুই নারী উঠে এলেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে খালে পানির স্রোত ছিল। খালটি সড়ক-লাগোয়া। এ সড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলায় খালের পাশে থাকা একটি নিরাপত্তাবেষ্টনী খুলে রাখা হয়েছিল। ফলে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটলো। নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতো না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হিজড়া খালটি মূল সড়কের পাশে হলেও নেই কোনও নিরাপত্তাবেষ্টনী। তার ওপর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। খালের বিভিন্ন অংশ উন্মুক্ত, কোনও অংশে স্ল্যাব নেই। এর সঙ্গে লাগোয়া ফুটপাত। বর্ষায় খালের পানি চলে আসে সড়কে। তখন খাল আর সড়ক আলাদা করার উপায় থাকে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি কম থাকলেও একটু বৃষ্টি হলেই ময়লা-আবর্জনার এই খাল আর সড়ক মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সড়ক আর খাল বোঝা যায় না। মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়।
১৫ জনের মৃত্যু
২০১৭ সাল থেকে নগরের এসব খাল ও নালা-নর্দমায় পড়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে এক, ২০১৮ সালে এক, ২০২১ সালে পাঁচ, ২০২২ সালে এক, ২০২৩ সালে তিন, ২০২৪ সালে তিন ও চলতি বছর এক জন। এতো প্রাণহানির পরও টনক নড়েনি সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। উন্মুক্ত নালাগুলো এখনও অরক্ষিত। কোনও ধরনের স্ল্যাব কিংবা নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।
জলাবদ্ধতার সময় ২০১৭ সালের ৩ জুলাই বাকালিয়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে পা পিছলে নালায় পড়ে যান হাটহাজারী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। একইভাবে ২০১৮ সালের ৯ জুন নগরের আমিন জুট মিল এলাকায় আল আমিন নামের এক শিশু পা পিছলে ড্রেনে পড়ে যায়। পরে তারও লাশ উদ্ধার করা হয়।