ঢাকা , সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর : রুমা চক্রবর্তী ও অন্তঃস্বত্বা মেয়ে হত্যায় স্বপ্নীলের মৃত্যুদন্ড

স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর রুমা চক্রবর্তী ও তার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে ঋতু চক্রবর্তী হত্যার মামলায় রায় ঘোষনা হয়েছে।আদালতে ওই মামলায় উপস্হিত আসামী আল জুবায়ের স্বপ্নীলকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত
জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রোববার(২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিচারক উম্মে সরাবান তাহুরা ওই রায় ঘোষনা করেন।

দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আল জুবায়ের ওরফে স্বপ্নীল(২৪) নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার শাহ সুজা সড়ক পাইকপাড়া এলাকার আলাউদ্দিন মিয়া ও শায়লা বেগমের একমাত্র ছেলে। আল জুবায়ের স্বপ্নীল এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।আহলে হাদিস(সালাফি) মতবাদে প্রখর অনুসারী স্বপ্নীল ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ালেখা করতো।

নিহতরা হলো নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকার স্বপন দাসের মালিকানাধীন ” মাতৃসনদ ” বাড়ীর ছয়তলার ভাড়াটিয়া রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর স্ত্রী রুমা চক্রবর্তী(৪৬) ও তার সাত মাসের অন্তস্বত্বা মেয়ে ঋতু চক্রবর্তী (২২)।ঋতুর স্বামীর নাম শ্যামল চক্রবর্তী।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকার মাতৃসনদ বাড়ীটির ছয়তলার ফ্ল্যাটেের সামনে ২০২২ সালের ১ মার্চ (মঙ্গলবার) বিকেলে আল জুবায়ের স্বপ্নীল গিয়ে কলিংবেল টিপে।ফ্ল্যাটে তখন রামপ্রসাদ চক্রবর্তী, তার ছেলে হৃদয় চক্রবর্তী ও জামাতা শ্যামল ছিলো না।ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কলিংবেলের শব্দ শুনে সদর দরোয়াজা খোলা হয়।ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র স্বপ্নীল কোন কথা বলার সূযোগ না দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে ও ছুরিকাঘাতে রুমা চক্রবর্তী এবং সাত মাসের অন্তস্বত্বা ঋতু চক্রবর্তীকে হত্যা করে।ফ্ল্যাটে হত্যাকান্ডের মুহুর্তে আক্রান্তরা চিৎকার করায় প্রতিবেশীরা এগিয়ে যায় ও হ্যান্ডগ্লাবস পরিহিত হাতে থাকা রক্ত মাখা চাকু এবং ব্যাগে থাকা স্বর্নের দুইটি চেইন,কানের দুলসহ আটক করে।পুলিশ পরে সেখানে গিয়ে চাকু,স্বর্নসহ স্বপ্নীলকে গ্রেফতার করে। সদর থানায় পরে রামপ্রসাদ চক্রবর্তী (৫৬) বাদী হয়ে মামলা করেন।থানা পুলিশের কাছ থেকে পরবর্তীতে মামলাটি স্হানান্তরিত হলে জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে।আদালত থেকে তাকে গোয়েন্দা শাখা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী স্বপ্নীল জানিয়েছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় নিজের পোষন মেটাতে টাকা, স্বর্ন লুট করার জন্য এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান ফারুক ২০২৩ সালের জানুয়ারীতে আসামী স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র(চার্জশীট) দাখিল করেন।আদালতে এরপর স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন ও বিচারকার্য চলে।আদালতে ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র পক্ষের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রহিম,বাদী পক্ষের এ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দত্ত বাপ্পি এ্যাডভোকেট কামাল আহমদ, এবং আসামী পক্ষের এ্যাডভেকেট জসিমউদ্দীন প্রমুখ আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়।আদালতে ২২ সেপ্টেম্বরে দুপুরেে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উম্মে সরাবান তাহুরা ওই মামলার রায় ঘোষনা করেন।রায়ে উপস্হিত আসামী স্বপ্নীলকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।বাদী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী ঘোষিত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরের দাবী জানিয়েছেন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর : রুমা চক্রবর্তী ও অন্তঃস্বত্বা মেয়ে হত্যায় স্বপ্নীলের মৃত্যুদন্ড

আপডেট সময় ০৯:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর রুমা চক্রবর্তী ও তার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে ঋতু চক্রবর্তী হত্যার মামলায় রায় ঘোষনা হয়েছে।আদালতে ওই মামলায় উপস্হিত আসামী আল জুবায়ের স্বপ্নীলকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত
জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রোববার(২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিচারক উম্মে সরাবান তাহুরা ওই রায় ঘোষনা করেন।

দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আল জুবায়ের ওরফে স্বপ্নীল(২৪) নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার শাহ সুজা সড়ক পাইকপাড়া এলাকার আলাউদ্দিন মিয়া ও শায়লা বেগমের একমাত্র ছেলে। আল জুবায়ের স্বপ্নীল এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।আহলে হাদিস(সালাফি) মতবাদে প্রখর অনুসারী স্বপ্নীল ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ালেখা করতো।

নিহতরা হলো নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকার স্বপন দাসের মালিকানাধীন ” মাতৃসনদ ” বাড়ীর ছয়তলার ভাড়াটিয়া রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর স্ত্রী রুমা চক্রবর্তী(৪৬) ও তার সাত মাসের অন্তস্বত্বা মেয়ে ঋতু চক্রবর্তী (২২)।ঋতুর স্বামীর নাম শ্যামল চক্রবর্তী।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকার মাতৃসনদ বাড়ীটির ছয়তলার ফ্ল্যাটেের সামনে ২০২২ সালের ১ মার্চ (মঙ্গলবার) বিকেলে আল জুবায়ের স্বপ্নীল গিয়ে কলিংবেল টিপে।ফ্ল্যাটে তখন রামপ্রসাদ চক্রবর্তী, তার ছেলে হৃদয় চক্রবর্তী ও জামাতা শ্যামল ছিলো না।ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কলিংবেলের শব্দ শুনে সদর দরোয়াজা খোলা হয়।ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র স্বপ্নীল কোন কথা বলার সূযোগ না দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে ও ছুরিকাঘাতে রুমা চক্রবর্তী এবং সাত মাসের অন্তস্বত্বা ঋতু চক্রবর্তীকে হত্যা করে।ফ্ল্যাটে হত্যাকান্ডের মুহুর্তে আক্রান্তরা চিৎকার করায় প্রতিবেশীরা এগিয়ে যায় ও হ্যান্ডগ্লাবস পরিহিত হাতে থাকা রক্ত মাখা চাকু এবং ব্যাগে থাকা স্বর্নের দুইটি চেইন,কানের দুলসহ আটক করে।পুলিশ পরে সেখানে গিয়ে চাকু,স্বর্নসহ স্বপ্নীলকে গ্রেফতার করে। সদর থানায় পরে রামপ্রসাদ চক্রবর্তী (৫৬) বাদী হয়ে মামলা করেন।থানা পুলিশের কাছ থেকে পরবর্তীতে মামলাটি স্হানান্তরিত হলে জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে।আদালত থেকে তাকে গোয়েন্দা শাখা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী স্বপ্নীল জানিয়েছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় নিজের পোষন মেটাতে টাকা, স্বর্ন লুট করার জন্য এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান ফারুক ২০২৩ সালের জানুয়ারীতে আসামী স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র(চার্জশীট) দাখিল করেন।আদালতে এরপর স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন ও বিচারকার্য চলে।আদালতে ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র পক্ষের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রহিম,বাদী পক্ষের এ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দত্ত বাপ্পি এ্যাডভোকেট কামাল আহমদ, এবং আসামী পক্ষের এ্যাডভেকেট জসিমউদ্দীন প্রমুখ আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়।আদালতে ২২ সেপ্টেম্বরে দুপুরেে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উম্মে সরাবান তাহুরা ওই মামলার রায় ঘোষনা করেন।রায়ে উপস্হিত আসামী স্বপ্নীলকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।বাদী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী ঘোষিত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরের দাবী জানিয়েছেন।