ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনকে আরও পাশে পেতে চায় বিএনপি

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্পর্ক গভীর করতে চীন সফরে যাচ্ছে বিএনপি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ৭ নভেম্বর দেশটিতে সফর করবে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থান করবেন। এ সময় উচ্চ পর্যায়েরে একাধিক বৈঠকের কথা রয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ভূ-রাজনীতিতে চীন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অনেক। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ছেদ পড়েছিল। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্কের উন্নতি করতে চায় তারা। এই সফরের পর আগামী বছরের জানুয়ারিতে দলের উচ্চ পর্যায়ের আরও একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরে যেতে পারে।

চীন সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দলে থাকছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা। আগামী ৭-১৬ নভেম্বর চীনে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে ‘পলিটিক্যাল পার্টি প্লাস’ কো-অপারেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ সময়ের আলোকে বলেন, চীনের সঙ্গে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনা সরকার শুধু দেশে নয় ভূ-রাজনীতিতেও একটা ফ্যাসিজম কায়েমের চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ
সরকার বিভিন্ন দেশকে নানাভাবে অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশের চিত্রকে আড়াল করত। আওয়ামী লীগ চেয়েছে চীন শুধু তাদের সঙ্গেই ব্যবসা করবে। এসব দিক থেকে চীনসহ বিভিন্ন দেশের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। স্বাভাবিকভাবে কূটনীতিতে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। সেই সঙ্গে তারা জনগণের সঙ্গেও থাকে। দলের বিপদে বিএনপি কি চীনকে পাশে পাবে? জবাবে তিনি বলেন, একটি দেশ আরেকটি দেশ ও দলের জন্য কী ভূমিকা রাখবে তা বলতে পারব না। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই।

ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সময়ের আলোকে বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আমাদের সঙ্গে চীনের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। হ্যাঁ, বরাবরই বিদেশি রাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। চীনও এত বছর তাই করেছে। তবে তাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ছেদ হয়নি। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাই আমন্ত্রণ জানিয়েছে; আমরা যাচ্ছি। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো শেয়ার করব। আশা করছি তারা জনগণের দুঃখ-কষ্ট ও দেশের বাস্তবতা সবসময় উপলব্ধি করবে এবং সেই অনুযায়ী ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, বিএনপি ১৯৭৯ সাল থেকে চীনের আমন্ত্রণে সেই দেশে যাচ্ছে। মাঝখানে কিছুটা বিরতি ছিল। আর করোনার সময় ভার্চুয়ালি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বিএনপি।

বিএনপি বলছে, চীনের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে যার সূত্রপাত। কিন্তু বিগত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যে কোনো কারণে সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমন অবস্থায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২১ আগস্ট গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চীনা রাষ্ট্রদূতের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় দলটি। বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূতকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সঙ্গে চীনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ‘ওয়ান চায়না পলিসিতে’ বিএনপি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছে। আমরা এখনও সেই ঘোষণাটা আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই।

চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কোন্নয়নের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, চীন নিঃসন্দেহে বাণিজ্যের বড় অংশীদার। নতুন পরিস্থিতিতে কী রকম সম্পর্ক হওয়া উচিত, তা বিএনপি ও চায়না উভয়েরই জানা দরকার। বিএনপি সরকার গঠন করলে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে চায় সেটিও তাদের পরিষ্কার করা উচিত চায়নার কাছে। এতে দুই পক্ষের কাজ করতে সুবিধা হবে। চীনও বুঝে গেছে সামনে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমানে চীন কিছুটা সেøা ডাউন নীতিতে এগোচ্ছে। কারণ তারা রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। ভবিষ্যতের দিক থেকে আমার মনে হয় এবারের চীন সফর বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত আগস্টের বৈঠকের আগে সবশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। ২০১৬ সালের আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। এরপরের বছর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল চীন সফর গেলেও বিএনপি কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আবারও চীন সরকারের আমন্ত্রণে যান বিএনপির তিন নেতা।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয় ২০২১ সালে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের একটি ভিডিও বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর বিবৃতি দেয় বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চীন তার নিজ দেশে কী ব্যবস্থা বহাল রাখবে তা একান্তই তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে অবাধ নির্বাচন ও প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার চর্চার মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা চর্চা করেছে ও করবে। কেননা প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ এবং জনগণের ক্ষমতা চর্চার একমাত্র মাধ্যম, যার মাধ্যমেই রাষ্ট্র জনগণের কাছে জবাবদিহিতে আবদ্ধ থাকে। এটাই জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণতন্ত্র চর্চার সর্বজনীন পন্থা।’ এই বিবৃতি-বিরোধিতার পর থেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জায়গায় পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, চীনের সম্পর্কটা আসলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। তারা বাণিজ্যকে বেশি গুরত্ব দেয়। দেশের পরিবর্তিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হয়তো তারা মনে করছেন পরবর্তী সরকারে থাকবে বিএনপি। তাই তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। বিএনপির ফরেন পলিসি সব দেশের জন্য এক। আমরা দুই পক্ষের স্বার্থ সমুন্নত রেখে সম্পর্ক গড়ায় বিশ্বাসী।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

চীনকে আরও পাশে পেতে চায় বিএনপি

আপডেট সময় ১০:৩৬:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্পর্ক গভীর করতে চীন সফরে যাচ্ছে বিএনপি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ৭ নভেম্বর দেশটিতে সফর করবে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থান করবেন। এ সময় উচ্চ পর্যায়েরে একাধিক বৈঠকের কথা রয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ভূ-রাজনীতিতে চীন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব অনেক। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ছেদ পড়েছিল। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্কের উন্নতি করতে চায় তারা। এই সফরের পর আগামী বছরের জানুয়ারিতে দলের উচ্চ পর্যায়ের আরও একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরে যেতে পারে।

চীন সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দলে থাকছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা। আগামী ৭-১৬ নভেম্বর চীনে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে ‘পলিটিক্যাল পার্টি প্লাস’ কো-অপারেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ সময়ের আলোকে বলেন, চীনের সঙ্গে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনা সরকার শুধু দেশে নয় ভূ-রাজনীতিতেও একটা ফ্যাসিজম কায়েমের চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ
সরকার বিভিন্ন দেশকে নানাভাবে অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশের চিত্রকে আড়াল করত। আওয়ামী লীগ চেয়েছে চীন শুধু তাদের সঙ্গেই ব্যবসা করবে। এসব দিক থেকে চীনসহ বিভিন্ন দেশের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। স্বাভাবিকভাবে কূটনীতিতে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। সেই সঙ্গে তারা জনগণের সঙ্গেও থাকে। দলের বিপদে বিএনপি কি চীনকে পাশে পাবে? জবাবে তিনি বলেন, একটি দেশ আরেকটি দেশ ও দলের জন্য কী ভূমিকা রাখবে তা বলতে পারব না। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই।

ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত সময়ের আলোকে বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আমাদের সঙ্গে চীনের উষ্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। হ্যাঁ, বরাবরই বিদেশি রাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। চীনও এত বছর তাই করেছে। তবে তাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ছেদ হয়নি। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাই আমন্ত্রণ জানিয়েছে; আমরা যাচ্ছি। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো শেয়ার করব। আশা করছি তারা জনগণের দুঃখ-কষ্ট ও দেশের বাস্তবতা সবসময় উপলব্ধি করবে এবং সেই অনুযায়ী ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান, বিএনপি ১৯৭৯ সাল থেকে চীনের আমন্ত্রণে সেই দেশে যাচ্ছে। মাঝখানে কিছুটা বিরতি ছিল। আর করোনার সময় ভার্চুয়ালি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বিএনপি।

বিএনপি বলছে, চীনের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে যার সূত্রপাত। কিন্তু বিগত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যে কোনো কারণে সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এমন অবস্থায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২১ আগস্ট গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চীনা রাষ্ট্রদূতের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় দলটি। বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূতকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সঙ্গে চীনের পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ‘ওয়ান চায়না পলিসিতে’ বিএনপি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছে। আমরা এখনও সেই ঘোষণাটা আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই।

চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কোন্নয়নের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, চীন নিঃসন্দেহে বাণিজ্যের বড় অংশীদার। নতুন পরিস্থিতিতে কী রকম সম্পর্ক হওয়া উচিত, তা বিএনপি ও চায়না উভয়েরই জানা দরকার। বিএনপি সরকার গঠন করলে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে চায় সেটিও তাদের পরিষ্কার করা উচিত চায়নার কাছে। এতে দুই পক্ষের কাজ করতে সুবিধা হবে। চীনও বুঝে গেছে সামনে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমানে চীন কিছুটা সেøা ডাউন নীতিতে এগোচ্ছে। কারণ তারা রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। ভবিষ্যতের দিক থেকে আমার মনে হয় এবারের চীন সফর বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত আগস্টের বৈঠকের আগে সবশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। ২০১৬ সালের আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল চীন সফর করে। এরপরের বছর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল চীন সফর গেলেও বিএনপি কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আবারও চীন সরকারের আমন্ত্রণে যান বিএনপির তিন নেতা।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয় ২০২১ সালে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতের একটি ভিডিও বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর বিবৃতি দেয় বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চীন তার নিজ দেশে কী ব্যবস্থা বহাল রাখবে তা একান্তই তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে অবাধ নির্বাচন ও প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার চর্চার মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা চর্চা করেছে ও করবে। কেননা প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ এবং জনগণের ক্ষমতা চর্চার একমাত্র মাধ্যম, যার মাধ্যমেই রাষ্ট্র জনগণের কাছে জবাবদিহিতে আবদ্ধ থাকে। এটাই জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণতন্ত্র চর্চার সর্বজনীন পন্থা।’ এই বিবৃতি-বিরোধিতার পর থেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জায়গায় পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, চীনের সম্পর্কটা আসলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। তারা বাণিজ্যকে বেশি গুরত্ব দেয়। দেশের পরিবর্তিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হয়তো তারা মনে করছেন পরবর্তী সরকারে থাকবে বিএনপি। তাই তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। বিএনপির ফরেন পলিসি সব দেশের জন্য এক। আমরা দুই পক্ষের স্বার্থ সমুন্নত রেখে সম্পর্ক গড়ায় বিশ্বাসী।