ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকসু নির্বাচন: তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছাত্রদল

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গত ২৯ জুলাই তফসিল ঘোষণার পর সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন। এদিন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর বিভিন্ন পদের জন্য মোট ৫৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ফরম সংগ্রহ করেছেন ১ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থী।

ভোটের মাঠে এবার পাঁচটি প্যানেল তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এই প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে আবু সাদিক কায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট তাদের আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে, যেখানে ভিপি পদে শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) এবং জিএস পদে মেঘমল্লার বসু লড়ছেন।

এ ছাড়া, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি প্যানেল দিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এবং সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র একটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

শুধু মনোনয়নপত্র নিলেন ছাত্রদল নেতারা, প্যানেলে পদ ঠিক করবেন তারেক রহমান: সোমবার দুপুরের পর থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একাধিক নেতাকে আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

ছাত্রদলের নেতারা জানান, সংগঠন থেকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তারা একক প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে কে কোন পদে প্রার্থী হবেন, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। সোমবার রাতের মধ্যে প্যানেল চূড়ান্ত হতে পারে।

সোমবার দুপুরের পর ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নেন বিএম কাউসার, আবিদুল ইসলাম খান, মমিনুল ইসলাম জিসানসহ একাধিক নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অন্য নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল্লাহ রেদওয়ান সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং জারিফ রহমান তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জিএস পদে মনোনয়নপত্র নিতে আসেন তানভীর বারী হামিম। তার সঙ্গে আসা নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সিনেট ভবনে প্রবেশ করেন। ছাত্রদলের জসীমউদদীন হল শাখার আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আজ রাতে আমাদের প্যানেল চূড়ান্ত হবে। তবে আজ যেহেতু মনোনয়নপত্র নেওয়ার শেষ দিন (আগের ঘোষণা), তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যারা রাজপথে ছিল, তাদের নিয়েই প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে। ‘টুগেদার উই উইল মেক আওয়ার ডিউ প্রাউড অ্যাগেইন’ স্লোগানে আমরা এবারের ডাকসুতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রদল বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ডাকসুতে নেতৃত্ব দেবে।

প্যানেল চূড়ান্তে দেরি হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর বারী হামিম বলেন, ছাত্রদল বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন। দুই দশকে অনেক শিক্ষার্থী ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন। ২৮টি পদের বিপরীতে ছাত্রদলের প্রায় ৪০০ প্রার্থী রয়েছেন। যোগ্যতায় কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। যে কারণে চূড়ান্ত হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন শুধু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছি। তবে কারা কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ডাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেল গঠিত হবে। ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সংগঠনটির ভেতরে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শেষ সময়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আবিদুল ইসলাম খান আবিদ সহসভাপতি (ভিপি) ও শেখ তানভীর বারী হামিম সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রদলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেতে পারেন।

এদিকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে মব সৃষ্টি করে বাধা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে লড়বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। তবে এই প্যানেল থেকে কে কোন পদে নির্বাচন করবেন, সেটি ঘোষণা করা হয়নি। সূত্র জানায়, ভিপি পদে আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে আশরেফা খাতুন নির্বাচন করতে পারেন। সোমবার বিকালে এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরসহ সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আবু বাকের মজুমদার বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও এই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং সবার অংশগ্রহণের ডাকসু নির্বাচন পাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

বিগত সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবনের সব সম্ভাবনা একপাশে রেখে আন্দোলন করেছি। ফলে আমরা আশাবাদী-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করবে।

শিবিরের অন্তর্ভুক্তিমূলক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি ভিপি হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এসএম ফরহাদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন। শিবিরের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন চার নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে রয়েছেন ইকবাল হায়দার, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে খান জসীম, যিনি চলতি বছরের জুলাইয়ে চোখ হারান। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাব্বির, যিনি বর্তমানে ঢাবি শিবিরের অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে আসিফ আব্দুল্লাহ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শরিফুল ইসলাম মুয়াজ। এছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ঢাবি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া। ঘোষিত প্যানেলে আরও ১৩টি সদস্য পদ রাখা হয়েছে। সদস্য পদে রয়েছেন সর্বমিত্র চাকমা, ইমরান হোসাইন, বেলাল হোসেন অপু, জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়, মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ, মাজহারুল ইসলাম মুজাহিদ, রাইসুল ইসলাম, সাবিকুন নাহার তামান্না, শাহিউর রহমান, আফসানা আক্তার, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রায়হান উদ্দিন ও আনাস বিন মনির।

সাদিক বলেন, আমরা আশাবাদী, আমাদের প্যানেল এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও স্বাধীন অ্যাক্টিভিস্টদের প্যানেল মিলিয়ে এ নির্বাচন একটি প্রাণবন্ত নির্বাচনে রূপ নেবে। জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার আলোকে আমরা শিগগিরই আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করব। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, জুলাই শহীদদের সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গঠন করা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার আলোকে আমরা নতুনভাবে ক্যাম্পাসকে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, এ কাজ আমরা ইনশাআল্লাহ করতে পারব। শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি তার নাম ঘোষণা করে বলেন, আমাদের প্যানেলকে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল করার চিন্তা করেছি। সেই চিন্তা থেকেই এভাবে প্যানেল সাজানো হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো করব।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

ডাকসু নির্বাচন: তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছাত্রদল

আপডেট সময় ১২:৫২:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গত ২৯ জুলাই তফসিল ঘোষণার পর সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন। এদিন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর বিভিন্ন পদের জন্য মোট ৫৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ফরম সংগ্রহ করেছেন ১ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থী।

ভোটের মাঠে এবার পাঁচটি প্যানেল তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের ২৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এই প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে আবু সাদিক কায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট তাদের আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে, যেখানে ভিপি পদে শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) এবং জিএস পদে মেঘমল্লার বসু লড়ছেন।

এ ছাড়া, ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি প্যানেল দিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এবং সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র একটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

শুধু মনোনয়নপত্র নিলেন ছাত্রদল নেতারা, প্যানেলে পদ ঠিক করবেন তারেক রহমান: সোমবার দুপুরের পর থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একাধিক নেতাকে আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

ছাত্রদলের নেতারা জানান, সংগঠন থেকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তারা একক প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে কে কোন পদে প্রার্থী হবেন, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। সোমবার রাতের মধ্যে প্যানেল চূড়ান্ত হতে পারে।

সোমবার দুপুরের পর ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নেন বিএম কাউসার, আবিদুল ইসলাম খান, মমিনুল ইসলাম জিসানসহ একাধিক নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অন্য নেতাদের মধ্যে ওবায়দুল্লাহ রেদওয়ান সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং জারিফ রহমান তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জিএস পদে মনোনয়নপত্র নিতে আসেন তানভীর বারী হামিম। তার সঙ্গে আসা নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সিনেট ভবনে প্রবেশ করেন। ছাত্রদলের জসীমউদদীন হল শাখার আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আজ রাতে আমাদের প্যানেল চূড়ান্ত হবে। তবে আজ যেহেতু মনোনয়নপত্র নেওয়ার শেষ দিন (আগের ঘোষণা), তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যারা রাজপথে ছিল, তাদের নিয়েই প্যানেল চূড়ান্ত করা হবে। ‘টুগেদার উই উইল মেক আওয়ার ডিউ প্রাউড অ্যাগেইন’ স্লোগানে আমরা এবারের ডাকসুতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রদল বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ডাকসুতে নেতৃত্ব দেবে।

প্যানেল চূড়ান্তে দেরি হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর বারী হামিম বলেন, ছাত্রদল বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন। দুই দশকে অনেক শিক্ষার্থী ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন। ২৮টি পদের বিপরীতে ছাত্রদলের প্রায় ৪০০ প্রার্থী রয়েছেন। যোগ্যতায় কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। যে কারণে চূড়ান্ত হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন শুধু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছি। তবে কারা কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ডাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেল গঠিত হবে। ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সংগঠনটির ভেতরে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শেষ সময়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আবিদুল ইসলাম খান আবিদ সহসভাপতি (ভিপি) ও শেখ তানভীর বারী হামিম সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রদলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেতে পারেন।

এদিকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে মব সৃষ্টি করে বাধা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে লড়বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। তবে এই প্যানেল থেকে কে কোন পদে নির্বাচন করবেন, সেটি ঘোষণা করা হয়নি। সূত্র জানায়, ভিপি পদে আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে আশরেফা খাতুন নির্বাচন করতে পারেন। সোমবার বিকালে এই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরসহ সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আবু বাকের মজুমদার বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও এই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং সবার অংশগ্রহণের ডাকসু নির্বাচন পাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

বিগত সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবনের সব সম্ভাবনা একপাশে রেখে আন্দোলন করেছি। ফলে আমরা আশাবাদী-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করবে।

শিবিরের অন্তর্ভুক্তিমূলক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি ভিপি হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম এবং জিএস পদে ঢাবি শাখার বর্তমান সভাপতি এসএম ফরহাদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এজিএস পদে ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন। শিবিরের প্যানেলে স্থান পেয়েছেন চার নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী এবং একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। প্যানেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে রয়েছেন ইকবাল হায়দার, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে উম্মে সালমা এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে খান জসীম, যিনি চলতি বছরের জুলাইয়ে চোখ হারান। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাব্বির, যিনি বর্তমানে ঢাবি শিবিরের অর্থ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক পদে আসিফ আব্দুল্লাহ এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শরিফুল ইসলাম মুয়াজ। এছাড়া গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ঢাবি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া। ঘোষিত প্যানেলে আরও ১৩টি সদস্য পদ রাখা হয়েছে। সদস্য পদে রয়েছেন সর্বমিত্র চাকমা, ইমরান হোসাইন, বেলাল হোসেন অপু, জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়, মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ, মাজহারুল ইসলাম মুজাহিদ, রাইসুল ইসলাম, সাবিকুন নাহার তামান্না, শাহিউর রহমান, আফসানা আক্তার, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রায়হান উদ্দিন ও আনাস বিন মনির।

সাদিক বলেন, আমরা আশাবাদী, আমাদের প্যানেল এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও স্বাধীন অ্যাক্টিভিস্টদের প্যানেল মিলিয়ে এ নির্বাচন একটি প্রাণবন্ত নির্বাচনে রূপ নেবে। জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার আলোকে আমরা শিগগিরই আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করব। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, জুলাই শহীদদের সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গঠন করা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার আলোকে আমরা নতুনভাবে ক্যাম্পাসকে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, এ কাজ আমরা ইনশাআল্লাহ করতে পারব। শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি তার নাম ঘোষণা করে বলেন, আমাদের প্যানেলকে একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল করার চিন্তা করেছি। সেই চিন্তা থেকেই এভাবে প্যানেল সাজানো হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো করব।