ঢাকা , শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আঙুর চাষে বাজিমাত

আঙুর বিদেশি ফল হলেও জনপ্রিয় এই ফলটি প্রথমবারের মতো চাষে সফল হয়েছেন চাঁদপুরের উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান প্রধানিয়া। বাণিজ্যিকভাবে ফলনের লক্ষ্যে ওই উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে ২০ শতক জমিতে আঙুর চাষ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন, চাঁদপুরের মাটিতে আঙুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলায় এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর-মতলব সড়কের পাশেই দেখা মিলছে ভিনদেশি এই রসালো ফলের ফলন। থোকায় থোকায় ঝুলছে ভিনদেশি রসালো ফল আঙুর। ক্ষেতের বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা সবুজ আঙুর দূর থেকে পথচারীদের নজর কাড়ছে। মাত্র ২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষাবাদ শুরু করেন উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান প্রধানিয়া।

মূলত বাংলাদেশে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আঙুর গাছ ছাঁটাই করলে মার্চ-এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। এরপর আবার শীতের সময় ফলন আসে। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য এমন জায়গা দরকার হয় যেখানে পরিমিত বৃষ্টি হবে কিন্তু মাটিতে পানি জমে থাকবে না। আবার আবহাওয়া হতে হবে শুষ্ক ও উষ্ণ। আঙুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার আঙুর পাখি খেয়ে ফেলে বলে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়। পরিমিত মাত্রায় সার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙুর গাছই বছরের পর বছর ফলন দিতে পারে।

উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানিয়া বলেন, ২০২১ সালে করোনা ভাইরাস যখন কমতে শুরু করে, তখন থেকেই আঙুর চাষ নিয়ে কাজ শুরু করি। আর আমার এই প্রজেক্টটি মাত্র ৬ মাস হলো শুরু করেছি। প্রথমে আমার ছাদবাগান থকে বেশকিছু জাত নিয়ে আঙুর চাষ শুরু করি। তবে ২০২৩ সাল থেকে আঙুর ফলনে বেশ ভালো ফল পাচ্ছি।

উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান আরও বলেন, ৪৪টি আঙুর জাতের মধ্যে ১২০টি মাতৃগাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। কিছু কিছু গাছে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল আঙুর। এখানে ৬ মাস যাবত পরিচর্যা করা হচ্ছে আঙুর ফল গাছ। ভিনদেশি ফল চাষ করতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চাঁদপুরে গ্রিন লঙ, একেলো, বাইকো নুর, লোরাস, ভেলেজ, ডিকসন, সুপার নোভা, নারু সিডলেস জাতের আঙুর ফল চাষাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে জেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষের খবর শুনে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বেকারত্ব দূরীকরণে এই ফল চাষাবাদ তরুণদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দর্শনার্থী মো. তানভীর হোসেন ও আমির হোসেন সরকার বলেন, চাঁদপুরের মধ্যে আঙুরে বড় বাগান আর কোথাও নেই। যার কারণে আমরা এই আঙুর বাগানটি দেখতে আসছি। এটি দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছি, যাতে এ ধরনের বাগান করতে পারি। যদিও আমরা বাড়ির আঙিনা এবং ছাদে আঙুরের চারা রোপণ করে কোনো সফলতা পাইনি। কিন্তু এখানকার দৃশ্য দেখে মনে আবার উৎসাহ জেগেছে। উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং আঙুরের চারাও নিচ্ছি। আশা উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানীয়ার প্রকল্পে পরিদর্শনে আসা কল্যাণপুর ও আশিকাটি ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম ও সাদিকা বেগম বলেন, দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙুর চাষ ভালো হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি জমে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে-এমন জায়গা আঙুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, চাঁদপুরে আগে কখনো আঙুরের চাষ হতো না। যেগুলো হতো, তা পরীক্ষামূলক জাত। এবার জেলায় প্রথমবারের মতো মিষ্টি আঙুর চাষ শুরু করেছেন উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান। তার এই আঙুর চাষের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ যারা আগ্রহী তাদের আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করবে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

আঙুর চাষে বাজিমাত

আপডেট সময় ০৮:৫৭:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আঙুর বিদেশি ফল হলেও জনপ্রিয় এই ফলটি প্রথমবারের মতো চাষে সফল হয়েছেন চাঁদপুরের উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান প্রধানিয়া। বাণিজ্যিকভাবে ফলনের লক্ষ্যে ওই উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে ২০ শতক জমিতে আঙুর চাষ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন, চাঁদপুরের মাটিতে আঙুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলায় এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর-মতলব সড়কের পাশেই দেখা মিলছে ভিনদেশি এই রসালো ফলের ফলন। থোকায় থোকায় ঝুলছে ভিনদেশি রসালো ফল আঙুর। ক্ষেতের বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা সবুজ আঙুর দূর থেকে পথচারীদের নজর কাড়ছে। মাত্র ২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষাবাদ শুরু করেন উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান প্রধানিয়া।

মূলত বাংলাদেশে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আঙুর গাছ ছাঁটাই করলে মার্চ-এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। এরপর আবার শীতের সময় ফলন আসে। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য এমন জায়গা দরকার হয় যেখানে পরিমিত বৃষ্টি হবে কিন্তু মাটিতে পানি জমে থাকবে না। আবার আবহাওয়া হতে হবে শুষ্ক ও উষ্ণ। আঙুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার আঙুর পাখি খেয়ে ফেলে বলে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়। পরিমিত মাত্রায় সার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙুর গাছই বছরের পর বছর ফলন দিতে পারে।

উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানিয়া বলেন, ২০২১ সালে করোনা ভাইরাস যখন কমতে শুরু করে, তখন থেকেই আঙুর চাষ নিয়ে কাজ শুরু করি। আর আমার এই প্রজেক্টটি মাত্র ৬ মাস হলো শুরু করেছি। প্রথমে আমার ছাদবাগান থকে বেশকিছু জাত নিয়ে আঙুর চাষ শুরু করি। তবে ২০২৩ সাল থেকে আঙুর ফলনে বেশ ভালো ফল পাচ্ছি।

উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান আরও বলেন, ৪৪টি আঙুর জাতের মধ্যে ১২০টি মাতৃগাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। কিছু কিছু গাছে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল আঙুর। এখানে ৬ মাস যাবত পরিচর্যা করা হচ্ছে আঙুর ফল গাছ। ভিনদেশি ফল চাষ করতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চাঁদপুরে গ্রিন লঙ, একেলো, বাইকো নুর, লোরাস, ভেলেজ, ডিকসন, সুপার নোভা, নারু সিডলেস জাতের আঙুর ফল চাষাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে জেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষের খবর শুনে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বেকারত্ব দূরীকরণে এই ফল চাষাবাদ তরুণদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দর্শনার্থী মো. তানভীর হোসেন ও আমির হোসেন সরকার বলেন, চাঁদপুরের মধ্যে আঙুরে বড় বাগান আর কোথাও নেই। যার কারণে আমরা এই আঙুর বাগানটি দেখতে আসছি। এটি দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছি, যাতে এ ধরনের বাগান করতে পারি। যদিও আমরা বাড়ির আঙিনা এবং ছাদে আঙুরের চারা রোপণ করে কোনো সফলতা পাইনি। কিন্তু এখানকার দৃশ্য দেখে মনে আবার উৎসাহ জেগেছে। উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং আঙুরের চারাও নিচ্ছি। আশা উদ্যোক্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধানীয়ার প্রকল্পে পরিদর্শনে আসা কল্যাণপুর ও আশিকাটি ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম ও সাদিকা বেগম বলেন, দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙুর চাষ ভালো হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি জমে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে-এমন জায়গা আঙুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, চাঁদপুরে আগে কখনো আঙুরের চাষ হতো না। যেগুলো হতো, তা পরীক্ষামূলক জাত। এবার জেলায় প্রথমবারের মতো মিষ্টি আঙুর চাষ শুরু করেছেন উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান। তার এই আঙুর চাষের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগ যারা আগ্রহী তাদের আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করবে।