ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩০ লাখ টাকার জন্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে নাটক সাজালেন ছেলে

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে হত্যা করেছেন তারই একমাত্র ছেলে এইচএম মাসুদ। বাবার ৩০ লাখ টাকার ভাগ বোনদের না দিতে পাঁচ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে বাসায় ডাকাত ঢুকে বাবাকে হত্যা করে টাকা লুটের নাটকও সাজিয়েছেন তিনি।

রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভাড়াটে খুনি রুবেলকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন বিকালে নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রুবেল।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলাবাজার এলাকার নিজ বাসা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের (৭২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় তার ছেলে মাসুদ (৪২) দাবি করেন, ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তিন জন অজ্ঞাত ব্যক্তি বাসায় ঢুকে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে বাবাকে হত্যা করে। এরপর নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। একইসঙ্গে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতদের আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন আব্দুল হালিমের বড় মেয়ের জামাতা জাহের আলী। নিহত আব্দুল হালিমের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।’

মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ঘটনার ছায়া তদন্ত করেছিল জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, আব্দুল হালিমের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইজিবাইকচালক মো. রুবেলের। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার দিন রুবেলের উপস্থিতি আব্দুল হালিমের বাড়ির আশপাশে পাওয়া যায়। সন্দেহভাজন হিসেবে গতকাল শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বাকীরোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল পিবিআই জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে তোলা আব্দুল হালিমের ৩০ লাখ টাকা বোনদের না দিয়ে একাই আত্মসাতের জন্য বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ছেলে মাসুদ। পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে রুবেলকে ভাড়া করেন। ঘটনার দিন রাত ১০টায় মাসুদের ফোন পেয়ে তাদের বাড়িতে যান রুবেল। রুবেলের জন্য বাসার গেট ও ফ্ল্যাটের দরজা আগে থেকেই খোলা রাখেন মাসুদ। রাত ১১টার দিকে আব্দুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে হাত-পা বেঁধে মুখ চেপে ধরেন ছেলে। এ সুযোগে রুবেল গলা টিপে ধরেন। আব্দুল হালিম চিৎকার দিলে মুখের ওপর বালিশ চাপা দেন রুবেল। এতে তার মৃত্যু হয়। পরে মাসুদ তার কক্ষে থাকা রক্তচাপ মাপার যন্ত্র দিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী রুবেলকে পাঁচ লাখ টাকা দেন মাসুদ। সেইসঙ্গে রুবেলকে বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ বাইরে কোথাও ফেলে দিতে বলেন। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ডাকাতির নাটক সাজান মাসুদ। পাটের দড়ি দিয়ে বাবার হাত-পা ও গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে রাখেন।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রুবেলকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের ভাড়া বাসার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে চার লাখ ৪৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে আব্দুল হালিমের বাড়ির পেছন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। আলামত হিসেবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাটের দড়ি, গামছা, বালিশ ও রক্তচাপ মাপার মেশিন উদ্ধার করা হয়। রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার অপর আসামি মাসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

৩০ লাখ টাকার জন্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে নাটক সাজালেন ছেলে

আপডেট সময় ০৫:০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে হত্যা করেছেন তারই একমাত্র ছেলে এইচএম মাসুদ। বাবার ৩০ লাখ টাকার ভাগ বোনদের না দিতে পাঁচ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে বাসায় ডাকাত ঢুকে বাবাকে হত্যা করে টাকা লুটের নাটকও সাজিয়েছেন তিনি।

রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভাড়াটে খুনি রুবেলকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন বিকালে নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রুবেল।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাওলাবাজার এলাকার নিজ বাসা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের (৭২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় তার ছেলে মাসুদ (৪২) দাবি করেন, ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তিন জন অজ্ঞাত ব্যক্তি বাসায় ঢুকে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে বাবাকে হত্যা করে। এরপর নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। একইসঙ্গে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতদের আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন আব্দুল হালিমের বড় মেয়ের জামাতা জাহের আলী। নিহত আব্দুল হালিমের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।’

মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ঘটনার ছায়া তদন্ত করেছিল জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তে পিবিআই জানতে পারে, আব্দুল হালিমের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইজিবাইকচালক মো. রুবেলের। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার দিন রুবেলের উপস্থিতি আব্দুল হালিমের বাড়ির আশপাশে পাওয়া যায়। সন্দেহভাজন হিসেবে গতকাল শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বাকীরোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল পিবিআই জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে তোলা আব্দুল হালিমের ৩০ লাখ টাকা বোনদের না দিয়ে একাই আত্মসাতের জন্য বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ছেলে মাসুদ। পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে রুবেলকে ভাড়া করেন। ঘটনার দিন রাত ১০টায় মাসুদের ফোন পেয়ে তাদের বাড়িতে যান রুবেল। রুবেলের জন্য বাসার গেট ও ফ্ল্যাটের দরজা আগে থেকেই খোলা রাখেন মাসুদ। রাত ১১টার দিকে আব্দুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে হাত-পা বেঁধে মুখ চেপে ধরেন ছেলে। এ সুযোগে রুবেল গলা টিপে ধরেন। আব্দুল হালিম চিৎকার দিলে মুখের ওপর বালিশ চাপা দেন রুবেল। এতে তার মৃত্যু হয়। পরে মাসুদ তার কক্ষে থাকা রক্তচাপ মাপার যন্ত্র দিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী রুবেলকে পাঁচ লাখ টাকা দেন মাসুদ। সেইসঙ্গে রুবেলকে বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ বাইরে কোথাও ফেলে দিতে বলেন। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ডাকাতির নাটক সাজান মাসুদ। পাটের দড়ি দিয়ে বাবার হাত-পা ও গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে রাখেন।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রুবেলকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের ভাড়া বাসার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে চার লাখ ৪৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে আব্দুল হালিমের বাড়ির পেছন থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। আলামত হিসেবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাটের দড়ি, গামছা, বালিশ ও রক্তচাপ মাপার মেশিন উদ্ধার করা হয়। রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার অপর আসামি মাসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’