ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাতিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিকল নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সাড়ে ৭ লাখ লোকের বসবাস। দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জেলার শহরের ওছখালিতে স্থাপন করা হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তেমন একটা না থাকায় অনেক রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সড়ক পথ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথ। রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি, এরপর থেকে দীর্ঘসময় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে এখনও বিকল হয়ে মেঘনা পাড়ে পড়ে আছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশিরা।

জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিমাসে গড়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬০ থেকে ৭০জন রোগীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সরকারি এ হিসেবের বাইরে প্রায় সময় নিজেদের উদ্দেগ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে জানা আরও অন্তত অর্ধশত রোগী। নলচিরা ঘাট হয়ে চেয়ারম্যান ঘাট দিয়ে দ্বীপ থেকে জেলা শহরে যেতে হয়। প্রায় ২১ কিলোমিটারের এ নৌপথ পাড়ি দিতে হয় স্পিডবোট বা ট্রলারে। স্পিডবোটে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫০০টাকা ও ট্রলারে ২০০ টাকা। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারমধ্যে স্পিডবোট, ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সাথে গাদাগাদি করে নদী পথ পার হতে হয় রোগীদের। রোগীদের এসব ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকায় নলচিরা চেয়ারম্যান ঘাট রুটে থাকা ট্রলার, স্পিডবোটে সাধারণ যাত্রীদের সাথে মেঘনা পার হতে হচ্ছে রোগীদের। এতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রী হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসময় ঘাটে অপেক্ষা করে জেলা সদরে যেতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীরা।

স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ২৪ অক্টোবর হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে ছিলো নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। বিকেলে দ্বীপে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এসময় মেঘনা নদীর তীরে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটিকে ঝড়ের আঘাতে ঘাটের পাশের গাছের সাথে লেগে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের তদারকির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায় লোকজন। যার ফলে বর্তমানে পুরোটাই বিকল অ্যাম্বুলেন্সটি। দ্বীপের রোগীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে পুনরায় চালু করার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সিত্রাং এর সিগনাল পড়ার পরপর প্রতিটি নৌযানকে তাদের মালিকগণ নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি নলচিরা ঘাটের পাশে পড়ে ছিল। জোয়ার ও প্রচ- বাতাসের আঘাতে অ্যাম্বুলেন্সটি নদীর তীরে থাকা নারিকেল গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায়। তারপর থেকে ওই গাছের সাথে এখনও পর্যন্ত পড়ে থেকে বিকল হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পর যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে তখনই একটি সচল করা সম্ভব হতো। দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করে মানুষের সেবায় ব্যবহার হবে এমন প্রত্যাশা দ্বীপের সাড়ে সাত লাখ মানুষের।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মহিউদ্দিন মুহিন বলেন, দেশের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে একটি মেঘনা। জোয়ার ও জোয়ারের পরবর্তী সময়ে প্রায় উত্তাল থাকে নদীটি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার পাশাপাশি এ নদীর জন্য একটি সী-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার দাবি সেবা প্রত্যাশিদের।

নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক আশ্রাফ আলী বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি কমিউনিটি বেস্ট হেলথ কেয়ার থেকে বুঝে নেয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তখন অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য কোনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার একটি অংশ দিয়ে আমাকে চালক হিসেবে রাখা হয়। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর আউটসোসিং থেকে আমাকে নিয়োগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো বেতন দেওয়া হয়নি, এদিকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকা বেকার সময় পার করতে হচ্ছে আমাকে।

এ প্রসঙ্গে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে রোগীদের ব্যবহারের উপযোগী করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি বরাদ্দ মন্ত্রানালয় থেকে পাস হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

হাতিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিকল নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

আপডেট সময় ০৪:০৭:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ মে ২০২৩

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সাড়ে ৭ লাখ লোকের বসবাস। দ্বীপবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জেলার শহরের ওছখালিতে স্থাপন করা হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তেমন একটা না থাকায় অনেক রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সড়ক পথ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীদের জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হলো নৌপথ। রোগীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি, এরপর থেকে দীর্ঘসময় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে এখনও বিকল হয়ে মেঘনা পাড়ে পড়ে আছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশিরা।

জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিমাসে গড়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬০ থেকে ৭০জন রোগীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সরকারি এ হিসেবের বাইরে প্রায় সময় নিজেদের উদ্দেগ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে জানা আরও অন্তত অর্ধশত রোগী। নলচিরা ঘাট হয়ে চেয়ারম্যান ঘাট দিয়ে দ্বীপ থেকে জেলা শহরে যেতে হয়। প্রায় ২১ কিলোমিটারের এ নৌপথ পাড়ি দিতে হয় স্পিডবোট বা ট্রলারে। স্পিডবোটে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫০০টাকা ও ট্রলারে ২০০ টাকা। যা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তারমধ্যে স্পিডবোট, ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সাথে গাদাগাদি করে নদী পথ পার হতে হয় রোগীদের। রোগীদের এসব ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়া জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকায় নলচিরা চেয়ারম্যান ঘাট রুটে থাকা ট্রলার, স্পিডবোটে সাধারণ যাত্রীদের সাথে মেঘনা পার হতে হচ্ছে রোগীদের। এতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রী হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসময় ঘাটে অপেক্ষা করে জেলা সদরে যেতে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীরা।

স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ২৪ অক্টোবর হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে ছিলো নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। বিকেলে দ্বীপে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এসময় মেঘনা নদীর তীরে থাকা অ্যাম্বুলেন্সটিকে ঝড়ের আঘাতে ঘাটের পাশের গাছের সাথে লেগে ভেঙে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের তদারকির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায় লোকজন। যার ফলে বর্তমানে পুরোটাই বিকল অ্যাম্বুলেন্সটি। দ্বীপের রোগীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে পুনরায় চালু করার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সিত্রাং এর সিগনাল পড়ার পরপর প্রতিটি নৌযানকে তাদের মালিকগণ নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেলেও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি নলচিরা ঘাটের পাশে পড়ে ছিল। জোয়ার ও প্রচ- বাতাসের আঘাতে অ্যাম্বুলেন্সটি নদীর তীরে থাকা নারিকেল গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায়। তারপর থেকে ওই গাছের সাথে এখনও পর্যন্ত পড়ে থেকে বিকল হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পর যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি মেরামতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে তখনই একটি সচল করা সম্ভব হতো। দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করে মানুষের সেবায় ব্যবহার হবে এমন প্রত্যাশা দ্বীপের সাড়ে সাত লাখ মানুষের।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মহিউদ্দিন মুহিন বলেন, দেশের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে একটি মেঘনা। জোয়ার ও জোয়ারের পরবর্তী সময়ে প্রায় উত্তাল থাকে নদীটি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার পাশাপাশি এ নদীর জন্য একটি সী-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার দাবি সেবা প্রত্যাশিদের।

নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক আশ্রাফ আলী বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা থাকা অ্যাম্বুলেন্সটি কমিউনিটি বেস্ট হেলথ কেয়ার থেকে বুঝে নেয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তখন অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য কোনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার একটি অংশ দিয়ে আমাকে চালক হিসেবে রাখা হয়। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর আউটসোসিং থেকে আমাকে নিয়োগ দিলেও এখনও পর্যন্ত কোনো বেতন দেওয়া হয়নি, এদিকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকা বেকার সময় পার করতে হচ্ছে আমাকে।

এ প্রসঙ্গে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে রোগীদের ব্যবহারের উপযোগী করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি বরাদ্দ মন্ত্রানালয় থেকে পাস হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।