ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুদানে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ

সুদানের রাজধানী খার্তুমে সামরিক বাহিনী দুটি অংশের মধ্যে তীব্র লড়াই হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ সহ কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণ ও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

শনিবার সকালে দেশটির সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সাথে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে একটি প্যারামিলিটারি সেনাদলের সংঘর্ষ শুরু হবার পর এখন তা ব্যাপক আকার নিয়েছে। খার্তুম বিমান বন্দরে একটি যাত্রীবাহী বিমানে গোলার আঘাত লাগলে দুই ব্যক্তি নিহত হয়। ডাক্তারদের একটি ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত মোট তিন জন বেসামরিক লোক নিহত হবার কথা জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টিভির সদর দফতর এলাকায়ও লড়াই হচ্ছে বলে রয়টার্স খবর দিয়েছে। বিবিসির বেভারলি ওচিয়েং বলছেন, সুদানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বই এ সংঘাতের কারণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সুদানের আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ দাবি করছে যে তারা খার্তুম শহরের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, খার্তুমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দেশটির আরো কয়েকটি প্রদেশের কিছু জায়গার নিয়ন্ত্রণ দখল করে নিয়েছে।

অন্যদিকে সুদানের সরকারি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলছে, তারা খার্তুম শহরের কৌশলগত জায়গাগুলো দখল করার জন্য “শত্রুপক্ষের” চেষ্টার মোকাবিলা করছে। সেনাবাহিনী বলছে তাদের বিমান হামলায় কমপক্ষে দুটি আরএসএফ ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণ শুরু করার দাবি করে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিকটবর্তী এলাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড গোলাগুলি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। খার্তুমের কিছু ভবন থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা গেছে।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে খার্তুমের আকাশে যুদ্ধ বিমান ওড়ার ফুটেজ দেখানো হয়। উত্তরাঞ্চলীয় মেরোওয়ে শহর থেকেও লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। রয়াটার্স জানাচ্ছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন – খার্তুমের অবস্থা “ভঙ্গুর”।

বিবিসির এমানুয়েল ইগুঞ্জা জানাচ্ছেন, দেশটিতে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারে কে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন – তা নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়েছে। সুদানে একটি বেসামরিক সরকার পুনপ্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছানোর এক চেষ্টা ব্যর্থ হয় – যার পেছনে আরএসএফের ১০০,০০০ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্নটিও ছিল সমস্যার কারণ।

সামরিক বাহিনীর এ দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার আরএসএফ উত্তরের মেরওয়ে শহরের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে তাদের সেনাদের মোতায়েন করে। সুদানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন তিনি তার ডেপুটি এবং আরএসএফের অধিনায়ক মোহামেদ হামদান দাগালোর সাথে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। জেনারেল বুরহান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক তোলপাড় চলছে।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানান, ঠিক কি নিয়ে শনিবারের সহিংসতার সূত্রপাত তা এখনও স্পষ্ট নয় – তবে এ দুটি বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। সুদানের রাজনৈতিক দলগুলো এর আগে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সাথে ক্ষমতা-ভাগাভাগির এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তারা উভয় পক্ষকেই সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে বলে রয়টার্স খবর দিয়েছে।

পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক নেতারা দু পক্ষকে উত্তেজনা হ্রাস করা এবং দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে রক্তপাত বন্ধে সহায়তা করারও আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

সুদানে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ

আপডেট সময় ০৪:৪৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

সুদানের রাজধানী খার্তুমে সামরিক বাহিনী দুটি অংশের মধ্যে তীব্র লড়াই হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ সহ কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণ ও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

শনিবার সকালে দেশটির সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সাথে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে একটি প্যারামিলিটারি সেনাদলের সংঘর্ষ শুরু হবার পর এখন তা ব্যাপক আকার নিয়েছে। খার্তুম বিমান বন্দরে একটি যাত্রীবাহী বিমানে গোলার আঘাত লাগলে দুই ব্যক্তি নিহত হয়। ডাক্তারদের একটি ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত মোট তিন জন বেসামরিক লোক নিহত হবার কথা জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় টিভির সদর দফতর এলাকায়ও লড়াই হচ্ছে বলে রয়টার্স খবর দিয়েছে। বিবিসির বেভারলি ওচিয়েং বলছেন, সুদানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বই এ সংঘাতের কারণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সুদানের আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ দাবি করছে যে তারা খার্তুম শহরের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, খার্তুমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও দেশটির আরো কয়েকটি প্রদেশের কিছু জায়গার নিয়ন্ত্রণ দখল করে নিয়েছে।

অন্যদিকে সুদানের সরকারি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলছে, তারা খার্তুম শহরের কৌশলগত জায়গাগুলো দখল করার জন্য “শত্রুপক্ষের” চেষ্টার মোকাবিলা করছে। সেনাবাহিনী বলছে তাদের বিমান হামলায় কমপক্ষে দুটি আরএসএফ ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণ শুরু করার দাবি করে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিকটবর্তী এলাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড গোলাগুলি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। খার্তুমের কিছু ভবন থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা গেছে।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে খার্তুমের আকাশে যুদ্ধ বিমান ওড়ার ফুটেজ দেখানো হয়। উত্তরাঞ্চলীয় মেরোওয়ে শহর থেকেও লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। রয়াটার্স জানাচ্ছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন – খার্তুমের অবস্থা “ভঙ্গুর”।

বিবিসির এমানুয়েল ইগুঞ্জা জানাচ্ছেন, দেশটিতে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারে কে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন – তা নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়েছে। সুদানে একটি বেসামরিক সরকার পুনপ্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছানোর এক চেষ্টা ব্যর্থ হয় – যার পেছনে আরএসএফের ১০০,০০০ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্নটিও ছিল সমস্যার কারণ।

সামরিক বাহিনীর এ দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার আরএসএফ উত্তরের মেরওয়ে শহরের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে তাদের সেনাদের মোতায়েন করে। সুদানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন তিনি তার ডেপুটি এবং আরএসএফের অধিনায়ক মোহামেদ হামদান দাগালোর সাথে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। জেনারেল বুরহান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক তোলপাড় চলছে।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানান, ঠিক কি নিয়ে শনিবারের সহিংসতার সূত্রপাত তা এখনও স্পষ্ট নয় – তবে এ দুটি বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। সুদানের রাজনৈতিক দলগুলো এর আগে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সাথে ক্ষমতা-ভাগাভাগির এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তারা উভয় পক্ষকেই সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে বলে রয়টার্স খবর দিয়েছে।

পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক নেতারা দু পক্ষকে উত্তেজনা হ্রাস করা এবং দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে রক্তপাত বন্ধে সহায়তা করারও আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি।