ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমকামী সম্পর্ক ধরতে পারলেই ফাঁসি, কঠোর আইন আনছে উগান্ডা

সমকামী বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেয়া উচিত কি উচিত নয়, বর্তমানে ভারতীয় আদালতে সেই বিতর্ক চলছে। এরই মধ্যে সমকামকেই অপরাধ বলে ঘোষণা করল পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডা। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়র ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

উগান্ডার আগেই অবশ্য ৩০টিরও বেশি আফ্রিকান দেশ সমকামী সম্পর্ককে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে। তবে, মানবাধিকার গোষ্ঠী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, উগান্ডার এই নতুন আইন আরও কঠোর। সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী বা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়াকেই এ আইনে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বিলটি উগান্ডান সংসদে পাস হলেও, এখনও আইনে পরিণত হয়নি। বিলটি স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনির কাছে পাঠানো হচ্ছে।

নতুন আইনটির সমর্থকদের মতে, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ, রক্ষণশীল এবং ধর্মপ্রাণ উগান্ডার ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই এ ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তিবর্গকে শাস্তি দিতে এই আইন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এ আইনে সমকামী যৌনমিলন, সমকামিতার প্রচার, সমকামী সম্পর্ককে উৎসাহ দেওয়া, সমকামিতায় জড়িয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র-সহ সমকামের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়কেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আইন যারা লঙ্ঘন করবে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড-সহ আরও অনেক গুরুতর শাস্তির বিধান রয়েছে এই আইনে।

বিলটি নিয়ে বিতর্কের সময় উগান্ডান সাংসদ ডেভিড বাহাতি বলেন, “যা ঘটছে তাতে আমাদের স্রষ্টা খুশি হয়েছেন। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত রক্ষা করার স্বার্থে আমি এই বিলটিকে সমর্থন করি। এটি আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। কেউ আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না, কেউ আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না।”

অন্যদিকে উগান্ডার দীর্ঘদিনের এলজিবিটিকিউ অধিকার কর্মী ফ্র্যাঙ্ক মুগিশা এ আইন অত্যন্ত কঠোর বলে এর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই আইনটি অত্যন্ত কঠোর। কেউ এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের হলেই তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এই আইন। আসলে উগান্ডায় এসজিবিটিকিউ-এর যে কোনও অস্তিত্ব সম্পূর্ণ মুছে দেয়ার চেষ্টা করছে ওরা।”

বিলটি এখন প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছে। এ বিলটির বিষয়ে উগান্ডান প্রেসিডেন্ট এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। তবে, বিলটি স্বাক্ষর করতে তার কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে একটি এলজিবিটিকিউ-বিরোধী আইনে স্বাক্ষরও করেছিলেন তিনি। পশ্চিমী দেশগুলির তীব্র সমালোচনার মুখে, সেই দেশের এক আদালত, পদ্ধতিগত ত্রুটি দেখিয়ে আইনটি বাতিল করেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক মুখ খুলেছেন উগান্ডার ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদরা। পাশাপাশি সেই দেশের সরকার এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দমন নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের দাবি স্কুলগুলিতেই শিক্ষার্থীদের সমকামিতায় জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। চলতি মাসেও, উগান্ডার পূর্বদিকের জেলা জিনজার এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে ‘অল্পবয়সী মেয়েদের অস্বাভাবিক যৌন চর্চায়’ জড়িয়ে ফেলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে চরম অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আপাতত তিনি বিচারাধীন বন্দি।

গত সোমবারই “অল্পবয়সী ছেলেদের সমকামী যৌনতায় জড়িত” করার অভিযোগে ছয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে এই নতুন আইন ঘোষণা করা হল। এই আইনের বলে, সমকামী-রূপান্তরকামীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

সমকামী সম্পর্ক ধরতে পারলেই ফাঁসি, কঠোর আইন আনছে উগান্ডা

আপডেট সময় ০৩:১০:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

সমকামী বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেয়া উচিত কি উচিত নয়, বর্তমানে ভারতীয় আদালতে সেই বিতর্ক চলছে। এরই মধ্যে সমকামকেই অপরাধ বলে ঘোষণা করল পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডা। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়র ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

উগান্ডার আগেই অবশ্য ৩০টিরও বেশি আফ্রিকান দেশ সমকামী সম্পর্ককে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে। তবে, মানবাধিকার গোষ্ঠী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, উগান্ডার এই নতুন আইন আরও কঠোর। সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী বা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়াকেই এ আইনে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বিলটি উগান্ডান সংসদে পাস হলেও, এখনও আইনে পরিণত হয়নি। বিলটি স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনির কাছে পাঠানো হচ্ছে।

নতুন আইনটির সমর্থকদের মতে, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ, রক্ষণশীল এবং ধর্মপ্রাণ উগান্ডার ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই এ ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তিবর্গকে শাস্তি দিতে এই আইন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এ আইনে সমকামী যৌনমিলন, সমকামিতার প্রচার, সমকামী সম্পর্ককে উৎসাহ দেওয়া, সমকামিতায় জড়িয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র-সহ সমকামের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়কেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আইন যারা লঙ্ঘন করবে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড-সহ আরও অনেক গুরুতর শাস্তির বিধান রয়েছে এই আইনে।

বিলটি নিয়ে বিতর্কের সময় উগান্ডান সাংসদ ডেভিড বাহাতি বলেন, “যা ঘটছে তাতে আমাদের স্রষ্টা খুশি হয়েছেন। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যত রক্ষা করার স্বার্থে আমি এই বিলটিকে সমর্থন করি। এটি আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। কেউ আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না, কেউ আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না।”

অন্যদিকে উগান্ডার দীর্ঘদিনের এলজিবিটিকিউ অধিকার কর্মী ফ্র্যাঙ্ক মুগিশা এ আইন অত্যন্ত কঠোর বলে এর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই আইনটি অত্যন্ত কঠোর। কেউ এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের হলেই তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এই আইন। আসলে উগান্ডায় এসজিবিটিকিউ-এর যে কোনও অস্তিত্ব সম্পূর্ণ মুছে দেয়ার চেষ্টা করছে ওরা।”

বিলটি এখন প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছে। এ বিলটির বিষয়ে উগান্ডান প্রেসিডেন্ট এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। তবে, বিলটি স্বাক্ষর করতে তার কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে একটি এলজিবিটিকিউ-বিরোধী আইনে স্বাক্ষরও করেছিলেন তিনি। পশ্চিমী দেশগুলির তীব্র সমালোচনার মুখে, সেই দেশের এক আদালত, পদ্ধতিগত ত্রুটি দেখিয়ে আইনটি বাতিল করেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক মুখ খুলেছেন উগান্ডার ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদরা। পাশাপাশি সেই দেশের সরকার এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দমন নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের দাবি স্কুলগুলিতেই শিক্ষার্থীদের সমকামিতায় জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। চলতি মাসেও, উগান্ডার পূর্বদিকের জেলা জিনজার এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে ‘অল্পবয়সী মেয়েদের অস্বাভাবিক যৌন চর্চায়’ জড়িয়ে ফেলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে চরম অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আপাতত তিনি বিচারাধীন বন্দি।

গত সোমবারই “অল্পবয়সী ছেলেদের সমকামী যৌনতায় জড়িত” করার অভিযোগে ছয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে এই নতুন আইন ঘোষণা করা হল। এই আইনের বলে, সমকামী-রূপান্তরকামীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।