ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শর্তপূরণ ও চাপের বাজেট

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে সংকট চলছে অর্থনীতির সব খাতেই। গত এক বছরে জীবনযাত্রার সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি কমানোর বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে। এর মধ্যেই দেশের অর্থনীতির মঞ্চে স্পটলাইটে হাজির আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সাধারণত নির্বাচনী বছরে ভোটার তুষ্টির বাজেট দেখা যায়। এবার সেটি নেই। এর নেপথ্যে কারণ- আইএমএফের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি, যাতে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সংস্থাটির শর্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঋণের পরবর্তী কিস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। ফলে বাড়তি রাজস্ব আহরণের জন্য বাড়নো হয়েছে পরোক্ষ কর এবং সরকারি সেবা ও পণ্যের দাম। ভর্তুকি কমাতে হবে বলে বাড়বে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও। তার পরও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার ওপর ভর করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা দেখছেন অর্থমন্ত্রী। প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিকে আগের অবস্থান ফিরিয়ে আনার। এমন এক টানাটানির মধ্যেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর বাজেট উপস্থাপনায় গুরুত্ব পেয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে দেশের উন্নয়ন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সব মানুষের আশা-প্রত্যাশা ও উন্নয়ন ভাবনার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যয়ে সাজানো হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট।

 

এর আগে বিশেষ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বাজেট প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুমিন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। বাজেটের সেøাগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’।

আগামী অর্থবছরে বড় বাজেটে রাজস্ব আহরণেরও বড় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এর পরও বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার ব্যয়, আয় এবং ঘাটতির যে প্রক্ষেপণ করেছেন অর্থমন্ত্রী, তাতে টানাটানি দেখতে পাচ্ছেন দেশের অর্থনীতিবিদরাও। অতীতে দেখা গেছে, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের বছরে ক্ষমতাসীন সরকার ভোটারবান্ধব বাজেট পেশ করে। ভোটারদের খুশি করতে থাকে নানা খাতে কর ছাড়, প্রাপ্তির মাত্রাও থাকে বেশি। ফলে সরকারকে বড় অংকের ঘাটতি বাজেট করতে হয়। এ ঘাটতি মেটানো হয় ঋণ নিয়ে। এবার নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বড় অংকের ঘাটতি বাজেট করেছে। ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি ঋণ নির্ভরতাও বেড়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ভোটারদের তুষ্ট করার মতো বাজেট করতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষকে খুশি করতে সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থনীতিবদরা মনে করেন, আইএমএফের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তির কারণে কর আহরণ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে ব্যাপকহারে নতুন করারোপ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর শর্ত বাস্তবায়নে এ খাতেও লাগাম টেনে সরকারি সেবা ও পণ্যেও দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। করছাড় দেওয়া হয়নি। এর প্রভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি দাম আরও বাড়বে। এর প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। এতে নির্বাচনী বছরে ভোটার তুষ্টির পরিবর্তে ভোটার অসন্তুষ্টি বাড়তে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ আমাদের সময়কে বলেন, কঠিন সময়ের কঠিন বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে, তা অর্জন করা কঠিন। রাজস্ব আহরণ না বাড়লে ব্যাংকঋণ বাড়বে। এতে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে টানাটানি করেছেন অর্থমন্ত্রী। আবার করের কারণে জীবন নির্বাহ করতেও মানুষকে টানাটানিতে পড়তে হবে।

বাজেটে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলার করার মতো যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। এদিকে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই। আর বৈশ্বিক মন্দা ও নির্বাচনী বছর কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগের দুয়ার খুলবে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মার্কিন ভিসানীতি। এটিও রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের। তিনি বলেন, এটা নির্বাচনমুখী বাজেট। বাস্তবসম্মত নয়। রাজস্ব আহরণের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা আদায় হবে না। শেষ পর্যন্ত বাজেট কার্যকর হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী অর্থনীতি বাস্তবায়নে স্মার্টলি লুটপাটের জন্য বাজেট দিয়েছে সরকার। ঋণ করে ঘি খাওয়ার জন্য এত বড় বাজেট দেওয়া হয়েছে। এর বোঝা জনগণকে বইতে হবে।

তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত বাজেটকে মানুষের কষ্ট লাঘবের বাজেট বলে অভিহিত করেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বাজেট সংকট উত্তরণের বাজেট। সংকটের মধ্যে এ বাজেট স্বস্তির। উন্নয়ন ও জনজীবন উন্নত করার বাজেট।

তবে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে। মূল্যস্ফীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরি রূপরেখা দেওয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতি ছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ডলার সংকট। কিন্তু এ সমস্যা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বাজেটে বিশাল ঘাটতি ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশাল রাজস্ব আহরণ করতে পরোক্ষ কর বাড়ানো হয়েছে। এ দুটির কারণে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটোই অপ্রতুল। সংস্থাটির মতে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন কিংবা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলÑ মূল্যস্ফীতির চাপ, সেটিও রয়ে গেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ঘোষণা হলোÑ এগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত। এগুলো অর্জন সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত মূল্যস্ফীতির চাপ বা এর লাগাম টানার জন্য যে সমাধান দেওয়া হয়েছে, এগুলো সম্ভব না। এ জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা বাজেটে নেই। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। সেটি বাড়ানো হয়েছে। এটি ভালো। কিন্তু সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন সাবমিট করতে হবে, এটি অবিবেচনা প্রসূত। এটি তুলে দেওয়া উচিত।

বাজেট বক্তৃতার সার সংক্ষেপ : বাজেট বক্তৃতার প্রথমভাগে বাজেটের সেøাগানের সঙ্গে মিল রেখে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত রচনা করার বিষয় উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর পর দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। সার্বিকভাবে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করা কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করা কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভরসা করে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় জোরদার করা হয়েছে। বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫৮ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ লাখ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য খাতে এ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে। শিগগির পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরির কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনেতিক অঞ্চলের অনুমোদন হয়েছে, ২৯টি অঞ্চলে ১৮৭ প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩৮ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। ৭০টি নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩ বিনিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।

বিশাল অংকের রাজস্ব আহরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘স্মার্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ গঠনের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বাণিজ্য পরিস্থিতিকে সামনে রেখে তা করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে করদাতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। এ জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

নিট সম্পদ ৪ কোটি টাকা অত্রিকম করলে ১০ শতাংশ এবং নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ৩৫ শতাংশ সম্পদ কর দিতে হবে। কৃষিযন্ত্রের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কৃষিতে ব্যবহৃত যন্ত্রের আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কিছু পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এসব পণ্য হলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, ড্রায়ার, সব ধরনের স্প্রেয়ার মেশিন, পটেটো প্ল্যান্টার। এ ছাড়া সব ধরনের কনটেইনার আমদানিতে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেন তিনি।

অন্যদিকে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই বরাদ্দ।

এক নজরে বাজেট : আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বাজেটে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছর এনবিআরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ফলে নিট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেট : রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি থেকে কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি থেকে কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি থেকে কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। ঘাটতি ১ লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নির্বাহ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন আজ : এদিকে আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় কৃষিমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থসচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

শর্তপূরণ ও চাপের বাজেট

আপডেট সময় ০৪:৪০:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে সংকট চলছে অর্থনীতির সব খাতেই। গত এক বছরে জীবনযাত্রার সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি কমানোর বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে। এর মধ্যেই দেশের অর্থনীতির মঞ্চে স্পটলাইটে হাজির আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সাধারণত নির্বাচনী বছরে ভোটার তুষ্টির বাজেট দেখা যায়। এবার সেটি নেই। এর নেপথ্যে কারণ- আইএমএফের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি, যাতে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সংস্থাটির শর্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঋণের পরবর্তী কিস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। ফলে বাড়তি রাজস্ব আহরণের জন্য বাড়নো হয়েছে পরোক্ষ কর এবং সরকারি সেবা ও পণ্যের দাম। ভর্তুকি কমাতে হবে বলে বাড়বে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও। তার পরও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার ওপর ভর করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা দেখছেন অর্থমন্ত্রী। প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিকে আগের অবস্থান ফিরিয়ে আনার। এমন এক টানাটানির মধ্যেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর বাজেট উপস্থাপনায় গুরুত্ব পেয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে দেশের উন্নয়ন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সব মানুষের আশা-প্রত্যাশা ও উন্নয়ন ভাবনার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যয়ে সাজানো হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট।

 

এর আগে বিশেষ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বাজেট প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুমিন, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। বাজেটের সেøাগান ‘উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’।

আগামী অর্থবছরে বড় বাজেটে রাজস্ব আহরণেরও বড় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এর পরও বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার ব্যয়, আয় এবং ঘাটতির যে প্রক্ষেপণ করেছেন অর্থমন্ত্রী, তাতে টানাটানি দেখতে পাচ্ছেন দেশের অর্থনীতিবিদরাও। অতীতে দেখা গেছে, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের বছরে ক্ষমতাসীন সরকার ভোটারবান্ধব বাজেট পেশ করে। ভোটারদের খুশি করতে থাকে নানা খাতে কর ছাড়, প্রাপ্তির মাত্রাও থাকে বেশি। ফলে সরকারকে বড় অংকের ঘাটতি বাজেট করতে হয়। এ ঘাটতি মেটানো হয় ঋণ নিয়ে। এবার নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বড় অংকের ঘাটতি বাজেট করেছে। ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি ঋণ নির্ভরতাও বেড়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ভোটারদের তুষ্ট করার মতো বাজেট করতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষকে খুশি করতে সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থনীতিবদরা মনে করেন, আইএমএফের সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তির কারণে কর আহরণ বাড়াতে হচ্ছে। ফলে ব্যাপকহারে নতুন করারোপ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর শর্ত বাস্তবায়নে এ খাতেও লাগাম টেনে সরকারি সেবা ও পণ্যেও দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। করছাড় দেওয়া হয়নি। এর প্রভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি দাম আরও বাড়বে। এর প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। এতে নির্বাচনী বছরে ভোটার তুষ্টির পরিবর্তে ভোটার অসন্তুষ্টি বাড়তে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ আমাদের সময়কে বলেন, কঠিন সময়ের কঠিন বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে, তা অর্জন করা কঠিন। রাজস্ব আহরণ না বাড়লে ব্যাংকঋণ বাড়বে। এতে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে টানাটানি করেছেন অর্থমন্ত্রী। আবার করের কারণে জীবন নির্বাহ করতেও মানুষকে টানাটানিতে পড়তে হবে।

বাজেটে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলার করার মতো যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। এদিকে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই। আর বৈশ্বিক মন্দা ও নির্বাচনী বছর কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগের দুয়ার খুলবে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মার্কিন ভিসানীতি। এটিও রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের। তিনি বলেন, এটা নির্বাচনমুখী বাজেট। বাস্তবসম্মত নয়। রাজস্ব আহরণের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা আদায় হবে না। শেষ পর্যন্ত বাজেট কার্যকর হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী অর্থনীতি বাস্তবায়নে স্মার্টলি লুটপাটের জন্য বাজেট দিয়েছে সরকার। ঋণ করে ঘি খাওয়ার জন্য এত বড় বাজেট দেওয়া হয়েছে। এর বোঝা জনগণকে বইতে হবে।

তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত বাজেটকে মানুষের কষ্ট লাঘবের বাজেট বলে অভিহিত করেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বাজেট সংকট উত্তরণের বাজেট। সংকটের মধ্যে এ বাজেট স্বস্তির। উন্নয়ন ও জনজীবন উন্নত করার বাজেট।

তবে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে। মূল্যস্ফীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরি রূপরেখা দেওয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতি ছাড়া আরও বেশ কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ডলার সংকট। কিন্তু এ সমস্যা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বাজেটে বিশাল ঘাটতি ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশাল রাজস্ব আহরণ করতে পরোক্ষ কর বাড়ানো হয়েছে। এ দুটির কারণে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটোই অপ্রতুল। সংস্থাটির মতে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন কিংবা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলÑ মূল্যস্ফীতির চাপ, সেটিও রয়ে গেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ঘোষণা হলোÑ এগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত। এগুলো অর্জন সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত মূল্যস্ফীতির চাপ বা এর লাগাম টানার জন্য যে সমাধান দেওয়া হয়েছে, এগুলো সম্ভব না। এ জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা বাজেটে নেই। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। সেটি বাড়ানো হয়েছে। এটি ভালো। কিন্তু সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন সাবমিট করতে হবে, এটি অবিবেচনা প্রসূত। এটি তুলে দেওয়া উচিত।

বাজেট বক্তৃতার সার সংক্ষেপ : বাজেট বক্তৃতার প্রথমভাগে বাজেটের সেøাগানের সঙ্গে মিল রেখে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত রচনা করার বিষয় উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর পর দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। সার্বিকভাবে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করা কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করা কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভরসা করে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় জোরদার করা হয়েছে। বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫৮ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ লাখ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য খাতে এ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে। শিগগির পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরির কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনেতিক অঞ্চলের অনুমোদন হয়েছে, ২৯টি অঞ্চলে ১৮৭ প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩৮ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। ৭০টি নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩ বিনিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।

বিশাল অংকের রাজস্ব আহরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘স্মার্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ গঠনের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বাণিজ্য পরিস্থিতিকে সামনে রেখে তা করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে করদাতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। এ জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

নিট সম্পদ ৪ কোটি টাকা অত্রিকম করলে ১০ শতাংশ এবং নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ৩৫ শতাংশ সম্পদ কর দিতে হবে। কৃষিযন্ত্রের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কৃষিতে ব্যবহৃত যন্ত্রের আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য কিছু পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এসব পণ্য হলো কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার, ড্রায়ার, সব ধরনের স্প্রেয়ার মেশিন, পটেটো প্ল্যান্টার। এ ছাড়া সব ধরনের কনটেইনার আমদানিতে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেন তিনি।

অন্যদিকে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই বরাদ্দ।

এক নজরে বাজেট : আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বাজেটে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছর এনবিআরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ফলে নিট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেট : রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি থেকে কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি থেকে কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি থেকে কমিয়ে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। ঘাটতি ১ লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নির্বাহ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন আজ : এদিকে আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় কৃষিমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থসচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।