ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞগণ। মেজর কার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে যদি বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হয় এবং পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ জন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ২৬ এপ্রিল দুপুরে হালদা নদীর মদুনা ঘাট থেকে সর্তার ঘাট দীর্ঘ ২০ কিঃমিঃ পরিদর্শন শেষে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- যেমন- দূষণ, জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে অবৈধ মৎস্য শিকার, অবৈধ বালু উত্তোলন, চরকাঁটা, হালদার উজানে ভুজপুর ও হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরুং খালের উপর কনক্রিট ড্যাম, হালদা ও এর বিভিন্ন শাখাখাল সমূহ পলি জমে ভরাট ইত্যাদি কারণে হালদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তথা জলজ পরিবেশ বর্তমান হুমকির সম্মুখীন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে হালদার মৎস্য সম্পদের উপর। তিনি জানান এর প্রভাবে বিগত দুই বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মাসের (১৮-২২ এপ্রিল) সম্ভাব্য অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। মেজর কার্পজাতীয় মাছের অনুকূল তাপমাত্রা হচ্ছে (২২-৩০) ডিগ্রী সেলসিয়াস তবে এরা অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। মেজর কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী কিনা যাচাই করতে হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম গত ২০ এপ্রিলও হালদা নদীর সাত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত স্পনিং গ্রাউন্ডের বিভিন্ন অংশ সাত্তারঘাট, অঙ্গুরীঘোনা, আজিমারঘাট, নাপিতেরঘাট, আমতুয়া, রামদাসমুন্সির ঘাট ও মদুনাঘাট পরিদর্শন করেন। নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে সরাসরি হালদা নদীতে ও বাসার নিজস্ব হালদা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ, কার্বনডাই-অক্সাইড, ক্যালসিয়াম, ট্র্যান্সপারেন্সি, খরতা, ও ক্ষারকত্ব ইত্যাদি) মান আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। তবে কার্পজাতীয় মাছের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা (৩২.৪- ৩৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আদর্শ মান: ২০-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) এবং লবণাক্ততা (০.১৪২-১.০১৬ পিপিটি, আদর্শ মান: ০.৫ পিপিটি), টিডিএস (১৯০-১৫০৭ পিপিএম, আদর্শ মান-১০০০ পিপিএম), এবং ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি (৩৭৯-৩০১৩মাইক্রোসিমেন্স/সেন্টিমিটার, আদর্শমান-৩৫০মাইক্রোসিমেন্স/ সেন্টিমিটার) আদর্শ মান অতিক্রম করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সাময়িক এই তাপমাত্রা ও সামান্য লবণাক্ততা হালদায় কার্পজাতীয় মাছের প্রজননে খুব বেশি প্রভাব ফেলবেনা।
কারণ মেজরকার্প জাতীয় মাছ সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা এবং সহজে ৫ পিপিটি এমনকি সর্বোচ্চ ১৪ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম আরো জানান আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে মা মাছেরা ডিম দেবে নিসন্দেহে।
বর্তমানে হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং পয়েন্টে মা মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসে তাহলে আগামী পূর্ণিমার জো’তে অর্থাৎ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে (২-৭) তারিখ হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী পূর্ণিমার জো’তো পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে পরবর্তী অমাবস্যার জো অর্থাৎ (১৬-২১) মে অথবা পূর্ণিমার জো (১-৬) জুন অথবা (১৫-২০) জুন অমাবস্যার জো’তে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে

আপডেট সময় ০৩:৫৯:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞগণ। মেজর কার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে যদি বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হয় এবং পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ জন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ২৬ এপ্রিল দুপুরে হালদা নদীর মদুনা ঘাট থেকে সর্তার ঘাট দীর্ঘ ২০ কিঃমিঃ পরিদর্শন শেষে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকা- যেমন- দূষণ, জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে অবৈধ মৎস্য শিকার, অবৈধ বালু উত্তোলন, চরকাঁটা, হালদার উজানে ভুজপুর ও হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরুং খালের উপর কনক্রিট ড্যাম, হালদা ও এর বিভিন্ন শাখাখাল সমূহ পলি জমে ভরাট ইত্যাদি কারণে হালদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তথা জলজ পরিবেশ বর্তমান হুমকির সম্মুখীন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে হালদার মৎস্য সম্পদের উপর। তিনি জানান এর প্রভাবে বিগত দুই বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় চলতি মাসের (১৮-২২ এপ্রিল) সম্ভাব্য অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়েনি মা মাছ। মেজর কার্পজাতীয় মাছের অনুকূল তাপমাত্রা হচ্ছে (২২-৩০) ডিগ্রী সেলসিয়াস তবে এরা অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। মেজর কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী কিনা যাচাই করতে হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম গত ২০ এপ্রিলও হালদা নদীর সাত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত স্পনিং গ্রাউন্ডের বিভিন্ন অংশ সাত্তারঘাট, অঙ্গুরীঘোনা, আজিমারঘাট, নাপিতেরঘাট, আমতুয়া, রামদাসমুন্সির ঘাট ও মদুনাঘাট পরিদর্শন করেন। নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে সরাসরি হালদা নদীতে ও বাসার নিজস্ব হালদা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ, কার্বনডাই-অক্সাইড, ক্যালসিয়াম, ট্র্যান্সপারেন্সি, খরতা, ও ক্ষারকত্ব ইত্যাদি) মান আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। তবে কার্পজাতীয় মাছের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা (৩২.৪- ৩৩.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আদর্শ মান: ২০-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) এবং লবণাক্ততা (০.১৪২-১.০১৬ পিপিটি, আদর্শ মান: ০.৫ পিপিটি), টিডিএস (১৯০-১৫০৭ পিপিএম, আদর্শ মান-১০০০ পিপিএম), এবং ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি (৩৭৯-৩০১৩মাইক্রোসিমেন্স/সেন্টিমিটার, আদর্শমান-৩৫০মাইক্রোসিমেন্স/ সেন্টিমিটার) আদর্শ মান অতিক্রম করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সাময়িক এই তাপমাত্রা ও সামান্য লবণাক্ততা হালদায় কার্পজাতীয় মাছের প্রজননে খুব বেশি প্রভাব ফেলবেনা।
কারণ মেজরকার্প জাতীয় মাছ সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা এবং সহজে ৫ পিপিটি এমনকি সর্বোচ্চ ১৪ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম আরো জানান আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে মা মাছেরা ডিম দেবে নিসন্দেহে।
বর্তমানে হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং পয়েন্টে মা মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসে তাহলে আগামী পূর্ণিমার জো’তে অর্থাৎ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে (২-৭) তারিখ হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী পূর্ণিমার জো’তো পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে পরবর্তী অমাবস্যার জো অর্থাৎ (১৬-২১) মে অথবা পূর্ণিমার জো (১-৬) জুন অথবা (১৫-২০) জুন অমাবস্যার জো’তে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে।