ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়র আইভীর ওপর খেপলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের রোষানলে নগর ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মেয়র আইভী। এসময় ৬ দফা দাবিতে নগর ভবন ঘেরাও করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় নগর ভবন ত্যাগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বেলা ১১টা থেকে তিন শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মী ঝাড়ু নিয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ আবর্জনা ফেলে প্রতিবাদ জানিয়ে নগর ভবন ঘেরাও করেন।
পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এই তিনটি অঞ্চলে মোট ১২০০ পরিচ্ছন্নকর্মী শহর পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত। সিটি করপোরেশন এই পরিচ্ছন্নকর্মীদের তাদের আধুনিক বাসস্থানের আশ্বাস দিয়ে আদি বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করে। তবে ১২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে কিছু কর্মীকে তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাসে স্থানান্তর করেছেন। তবে সেই সংখ্যা মাত্র এক চতুর্থাংশ। যাদের সেখানে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে ঘর ভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের যোক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করার সময় নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ তাদের নিবৃত করে সরিয়ে দিতে চাইলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মেয়র আইভীর সঙ্গে কথা বলে দাবি দাওয়া পূরণে মেয়রের আশ্বাস চাইলে পুলিশের সঙ্গে তিনি নগর ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।

এসময় নগর ভবনে ময়লা রেখে প্রতিবাদ করায় উত্তেজিত হয়ে যান তিনি। দাবি-দাওয়ার আশ্বাস না দিয়ে উল্টো চাকরিচুত্য করার হুমকি দেন মেয়র। মেয়রের এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এসময় পরিচ্ছন্নকর্মীদের রোষানলে পালিয়ে যান পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের দায়িত্বরত সুপারভাইজার শ্যমল চন্দ্র দাস।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নকর্মী উমারানী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাসে থাকে। কোথাও এভাবে ফ্লাটে থাকার জন্য ভাড়া দিতে হয় না। কিন্ত মেয়র আইভী আমাদের বলে এই ভবনগুলো সরকারি টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়নি, বিদেশ থেকে ফান্ড এনে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই আমাদের মাসে পাঁচ হাজার করে ভাড়া দিতে হবে। আমরা সারা মাস কাজ করে বেতন পাই আটত্রিশ শত টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। যদিও তিন মাস আগে আট হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে এই বেতন কার্যকর করা হয়নি। এর মধ্যে পূজা বাবদ অগ্রিম প্রদত্ত টাকা থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়। এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বাবদ কেটে নেওয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না।

নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের বাসন্তি রানী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেখানে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেবেন মেয়র, সেখানে আমাদের দাবি-দাওয়া তোয়াক্বা না করে উল্টো আমাদের চাকরিচুত্য করার হুমকি দিয়ে গেলেন। আজকে আমাদের সভাপতি শিমুল আন্দোলন ও প্রতিবাদ করায় বরখাস্তের হুমকি দিয়ে গেলেন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

অপরদিকে, নগরভবনে মেয়র আইভী পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে যান মেয়র। সাংবাদিকদের তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে এমন কী হয়েছে যে আসতে হবে, ফাউল কোথাকার! পরে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল দাস ও সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালসহ সেখানে উপস্থিত মামুন চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।

এসময় মেয়র আইভী বলেন, গত তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সচিব ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। তবে ফান্ডে টাকা না থাকায় তিন মাস ধরে কাউকেই বর্ধিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। আর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ কোনো সিটি করপোরেশনেই পরিচ্ছন্নকর্মীরা চাকরিতে স্থায়ী না। সরকার কাউকেই স্থায়ী করে নাই, তোমাদের আমি রাখলেও রাখতে পারি, নাও রাখতে পারি। এই নগর ভবনে ময়লা ফেলার দুঃসাহস দেখালে কেন? আর খাইতে ভাত পাওনা, আন্দোলন করো, এত দামি মোবাইল পাইলা কই?

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে মেয়র আইভীকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে বিষয়টি এমন না। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বেতন ভাতাসহ ৬ দফা দাবিতে নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। পড়ে তাদের বুঝিয়ে সড়িয়ে নেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি লাইভে দেখা গেছে মেয়র প্রস্থানের সময় পরিচ্ছন্নকর্মীরা নাসিকের মূল ফটক আটকে তাকে অবরুদ্ধ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, তাকে কিছু সময়ের জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঘেড়াও করেন। এসময় তাদের নিবৃত করে সড়িয়ে মেয়রকে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়া হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

মেয়র আইভীর ওপর খেপলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

আপডেট সময় ০৪:২০:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের রোষানলে নগর ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন মেয়র আইভী। এসময় ৬ দফা দাবিতে নগর ভবন ঘেরাও করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় নগর ভবন ত্যাগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বেলা ১১টা থেকে তিন শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মী ঝাড়ু নিয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ আবর্জনা ফেলে প্রতিবাদ জানিয়ে নগর ভবন ঘেরাও করেন।
পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এই তিনটি অঞ্চলে মোট ১২০০ পরিচ্ছন্নকর্মী শহর পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত। সিটি করপোরেশন এই পরিচ্ছন্নকর্মীদের তাদের আধুনিক বাসস্থানের আশ্বাস দিয়ে আদি বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করে। তবে ১২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে কিছু কর্মীকে তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাসে স্থানান্তর করেছেন। তবে সেই সংখ্যা মাত্র এক চতুর্থাংশ। যাদের সেখানে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে ঘর ভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের যোক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করার সময় নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ তাদের নিবৃত করে সরিয়ে দিতে চাইলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মেয়র আইভীর সঙ্গে কথা বলে দাবি দাওয়া পূরণে মেয়রের আশ্বাস চাইলে পুলিশের সঙ্গে তিনি নগর ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।

এসময় নগর ভবনে ময়লা রেখে প্রতিবাদ করায় উত্তেজিত হয়ে যান তিনি। দাবি-দাওয়ার আশ্বাস না দিয়ে উল্টো চাকরিচুত্য করার হুমকি দেন মেয়র। মেয়রের এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এসময় পরিচ্ছন্নকর্মীদের রোষানলে পালিয়ে যান পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের দায়িত্বরত সুপারভাইজার শ্যমল চন্দ্র দাস।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নকর্মী উমারানী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাসে থাকে। কোথাও এভাবে ফ্লাটে থাকার জন্য ভাড়া দিতে হয় না। কিন্ত মেয়র আইভী আমাদের বলে এই ভবনগুলো সরকারি টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়নি, বিদেশ থেকে ফান্ড এনে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই আমাদের মাসে পাঁচ হাজার করে ভাড়া দিতে হবে। আমরা সারা মাস কাজ করে বেতন পাই আটত্রিশ শত টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। যদিও তিন মাস আগে আট হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে এই বেতন কার্যকর করা হয়নি। এর মধ্যে পূজা বাবদ অগ্রিম প্রদত্ত টাকা থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়। এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বাবদ কেটে নেওয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না।

নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের বাসন্তি রানী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেখানে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেবেন মেয়র, সেখানে আমাদের দাবি-দাওয়া তোয়াক্বা না করে উল্টো আমাদের চাকরিচুত্য করার হুমকি দিয়ে গেলেন। আজকে আমাদের সভাপতি শিমুল আন্দোলন ও প্রতিবাদ করায় বরখাস্তের হুমকি দিয়ে গেলেন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

অপরদিকে, নগরভবনে মেয়র আইভী পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে যান মেয়র। সাংবাদিকদের তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে এমন কী হয়েছে যে আসতে হবে, ফাউল কোথাকার! পরে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল দাস ও সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালসহ সেখানে উপস্থিত মামুন চন্দ্র দাসকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।

এসময় মেয়র আইভী বলেন, গত তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সচিব ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। তবে ফান্ডে টাকা না থাকায় তিন মাস ধরে কাউকেই বর্ধিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। আর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ কোনো সিটি করপোরেশনেই পরিচ্ছন্নকর্মীরা চাকরিতে স্থায়ী না। সরকার কাউকেই স্থায়ী করে নাই, তোমাদের আমি রাখলেও রাখতে পারি, নাও রাখতে পারি। এই নগর ভবনে ময়লা ফেলার দুঃসাহস দেখালে কেন? আর খাইতে ভাত পাওনা, আন্দোলন করো, এত দামি মোবাইল পাইলা কই?

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে মেয়র আইভীকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে বিষয়টি এমন না। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বেতন ভাতাসহ ৬ দফা দাবিতে নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। পড়ে তাদের বুঝিয়ে সড়িয়ে নেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি লাইভে দেখা গেছে মেয়র প্রস্থানের সময় পরিচ্ছন্নকর্মীরা নাসিকের মূল ফটক আটকে তাকে অবরুদ্ধ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, তাকে কিছু সময়ের জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঘেড়াও করেন। এসময় তাদের নিবৃত করে সড়িয়ে মেয়রকে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়া হয়।