ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে ফের অনিশ্চয়তা

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের আকাশে ফের কালো মেঘের ঘনঘটা। দেশটির নীতি-নির্ধারকরা অতিরিক্ত অ্যাপ্রুভাল ও নানা কারণে বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা নেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন জমা দেয়ার স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ফলে বাংলাদেশসহ সোর্স কান্ট্রি থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের আবেদনের অনুমতি স্থগিত হয়ে গেল। তবে অনুমোদনপ্রাপ্ত ভিসার কর্মীরা মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়া শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু প্রবাসী শ্রমিকদের যাত্রা অনিশ্চতার মুখে পড়ে গেছে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমার জানান, ফরেন ওয়ার্কার অ্যামপ্লয়মেন্ট রিল্যাক্সেশন প্ল্যানে (পিকেপিপিএ) বিদেশি কর্মীদের জন্য কোটার আবেদন ও অনুমোদন ১৮ মার্চ থেকে পরবর্তী সময়ে তারিখ ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টর থেকে বিদেশিকর্মীদের জন্য মোট ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৩৯৬টি কর্মসংস্থান কোটা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করার পরে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এতে দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে নতুনভাবে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ স্থগিতাদেশ অব্যাহত থাকলে আগামী মে মাসের মধ্যে দেশটিতে কর্মী নিয়োগের সিন্ডিকেট প্রক্রিয়া বন্ধ হতে পারে মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এ আভাস দিয়েছে। আরোপিত স্থগিতাদেশ দীর্ঘদিন কার্যকর থাকলে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে অনুমোদিত অপেক্ষমাণ কর্মীরা দেশেটি যাওয়ার সুযোগ পাবে। বায়রার নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।

দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী ও ব্যবসায়ীরা ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে একথা জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যেখানে জানুয়ারিতে এসেছিল প্রায় ১৯৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে মাস ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বেশি এসেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরের মতো ধর্মীয় উৎসব থাকায় প্রবাসী আয়ের পালে সুবাতাসই বইবে। কাজেই সামনে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

বিএমইটির সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩৭ জন নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে শুধু গত ১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সউদী আরবে গিয়েছে ২৩ হাজার ৫৩০ জন এবং একই সময়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছে ২১ হাজার ৪৬১ জন গিয়েছে।
কুয়ালালামপুর থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৬ জন বিদেশি কর্মী রয়েছে, যাদের অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস রয়েছে এবং উৎপাদন খাতে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৮ বিদেশি কর্মী রেকর্ড করা হয়েছে, তারপরে নির্মাণ খাতে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৩২ জন এবং পরিষেবা ২ লাখ ২১ হাজার ৬২১ জন। এই পরিসংখ্যানে ২০২২ সালে নিযুক্ত ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৬ নতুন বিদেশি কর্মীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের তিনটি সর্বোচ্চ জাতীয়তা হলো বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপাল। বাংলাদেশে যেখানে নিবন্ধিত এজেন্সি সংখ্যা ২০০০-এর বেশি। সেখানে প্রথমে মাত্র ২৫ সিন্ডিকেট কর্মী প্রেরণের অনুমতি লাভ করে। পরে বায়রার অনুরোধে আরো ৭৫টিসহ মোট ১০০টি বাংলাদেশি এজেন্সি কর্মী পাঠানোর অনুমতি পায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর ২০২২ সালের ৮ আগস্ট ৪৮ জন কর্মী প্রেরণের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হয়।

গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। এদিকে, গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ায় মোট ২৫ হাজার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ করেছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২৭ হাজার যেখানে মার্চ মাসে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। মালয়েশিয়া সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশি ১০০টি এজেন্সির মতে, এখনও ৪৮ হাজার ৫০০টিরও বেশি কার্যাদেশ তাদের হাতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানিয়েছিল ‘বরাদ্দকৃত কাজের চাহিদার অধীনে উৎস দেশগুলো থেকে এমন কি বাংলাদেশ থেকে ও বাংলাদেশি শ্রমিক আমদানি বন্ধ করা হবে না, কিন্তু হালনাগাদ শ্রম চাহিদা নির্ধারণের আগে নতুন শ্রম চাহিদা বরাদ্দ অনুমোদন করা হবে না।’

আল নাঈম ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. বাবুল হোসেন গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুর থেকে ইনকিলাবকে জানান, অতিরিক্ত অ্যাপ্রুভালসহ নানা কারণে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ছুটির দিনে জরুরি সার্কুলার জারি করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা নেয়ার বিষয়টি স্থগিত ঘোষণা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা নেয়ার স্থগিতাদেশ বহাল থাকলে আগামী মে মাসের মধ্যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া বন্ধ হবার আশঙ্কা রয়েছে।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তবে কয়েক বছর চলার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আবার ২০০৬ সাল থেকে কর্মী প্রেরণ শুরু করে বাংলাদেশ। তবে বিপুলসংখ্যক অবৈধ শ্রমিক ধরা পড়ায় ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে আবারও দুদেশের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ‘জিটুজি-প্লাস’ নামে যে এসপিপিএ সিস্টেমের আওতায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিত, সে পদ্ধতি স্থগিত হওয়ার কারণেই ওই নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। দেশটিতে দীর্ঘ ৪ বছর জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকার পর গত বছর ৮ আগস্ট থেকে নতুনভাবে ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী যাওয়ার কথা শোনা গেলেও জমিজমা বিক্রি, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৪ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশটিতে যাচ্ছে কর্মীরা। সিন্ডিকেট চক্রের চড়া অভিবাসন ব্যয়ের অর্থ জোগাতে নাভিশ্বাস উঠছে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুকর্মীদের।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া। দীর্ঘদিন দেনদরবার ও নানা অনিশ্চয়তার ২০২২ সালের ২ জুন মালয়েশিয়ার তৎকালিন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের নেতৃত্বে ঢাকায় দুই দেশের বৈঠকে কারিগরি বিষয়সহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান হয়। শ্রমবাজার খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দুই মন্ত্রী।

 

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে ফের অনিশ্চয়তা

আপডেট সময় ০৪:১৩:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের আকাশে ফের কালো মেঘের ঘনঘটা। দেশটির নীতি-নির্ধারকরা অতিরিক্ত অ্যাপ্রুভাল ও নানা কারণে বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা নেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন জমা দেয়ার স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ফলে বাংলাদেশসহ সোর্স কান্ট্রি থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের আবেদনের অনুমতি স্থগিত হয়ে গেল। তবে অনুমোদনপ্রাপ্ত ভিসার কর্মীরা মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়া শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু প্রবাসী শ্রমিকদের যাত্রা অনিশ্চতার মুখে পড়ে গেছে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমার জানান, ফরেন ওয়ার্কার অ্যামপ্লয়মেন্ট রিল্যাক্সেশন প্ল্যানে (পিকেপিপিএ) বিদেশি কর্মীদের জন্য কোটার আবেদন ও অনুমোদন ১৮ মার্চ থেকে পরবর্তী সময়ে তারিখ ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টর থেকে বিদেশিকর্মীদের জন্য মোট ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৩৯৬টি কর্মসংস্থান কোটা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করার পরে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এতে দেশটির শ্রমবাজার নিয়ে নতুনভাবে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ স্থগিতাদেশ অব্যাহত থাকলে আগামী মে মাসের মধ্যে দেশটিতে কর্মী নিয়োগের সিন্ডিকেট প্রক্রিয়া বন্ধ হতে পারে মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এ আভাস দিয়েছে। আরোপিত স্থগিতাদেশ দীর্ঘদিন কার্যকর থাকলে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে অনুমোদিত অপেক্ষমাণ কর্মীরা দেশেটি যাওয়ার সুযোগ পাবে। বায়রার নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।

দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী ও ব্যবসায়ীরা ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে একথা জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যেখানে জানুয়ারিতে এসেছিল প্রায় ১৯৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে মাস ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বেশি এসেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতরের মতো ধর্মীয় উৎসব থাকায় প্রবাসী আয়ের পালে সুবাতাসই বইবে। কাজেই সামনে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

বিএমইটির সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩৭ জন নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে শুধু গত ১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সউদী আরবে গিয়েছে ২৩ হাজার ৫৩০ জন এবং একই সময়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছে ২১ হাজার ৪৬১ জন গিয়েছে।
কুয়ালালামপুর থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৬ জন বিদেশি কর্মী রয়েছে, যাদের অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস রয়েছে এবং উৎপাদন খাতে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৮ বিদেশি কর্মী রেকর্ড করা হয়েছে, তারপরে নির্মাণ খাতে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৩২ জন এবং পরিষেবা ২ লাখ ২১ হাজার ৬২১ জন। এই পরিসংখ্যানে ২০২২ সালে নিযুক্ত ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৬ নতুন বিদেশি কর্মীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের তিনটি সর্বোচ্চ জাতীয়তা হলো বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপাল। বাংলাদেশে যেখানে নিবন্ধিত এজেন্সি সংখ্যা ২০০০-এর বেশি। সেখানে প্রথমে মাত্র ২৫ সিন্ডিকেট কর্মী প্রেরণের অনুমতি লাভ করে। পরে বায়রার অনুরোধে আরো ৭৫টিসহ মোট ১০০টি বাংলাদেশি এজেন্সি কর্মী পাঠানোর অনুমতি পায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর ২০২২ সালের ৮ আগস্ট ৪৮ জন কর্মী প্রেরণের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হয়।

গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। এদিকে, গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ায় মোট ২৫ হাজার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ করেছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২৭ হাজার যেখানে মার্চ মাসে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। মালয়েশিয়া সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশি ১০০টি এজেন্সির মতে, এখনও ৪৮ হাজার ৫০০টিরও বেশি কার্যাদেশ তাদের হাতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানিয়েছিল ‘বরাদ্দকৃত কাজের চাহিদার অধীনে উৎস দেশগুলো থেকে এমন কি বাংলাদেশ থেকে ও বাংলাদেশি শ্রমিক আমদানি বন্ধ করা হবে না, কিন্তু হালনাগাদ শ্রম চাহিদা নির্ধারণের আগে নতুন শ্রম চাহিদা বরাদ্দ অনুমোদন করা হবে না।’

আল নাঈম ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. বাবুল হোসেন গতকাল বুধবার কুয়ালালামপুর থেকে ইনকিলাবকে জানান, অতিরিক্ত অ্যাপ্রুভালসহ নানা কারণে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ছুটির দিনে জরুরি সার্কুলার জারি করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা নেয়ার বিষয়টি স্থগিত ঘোষণা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা নেয়ার স্থগিতাদেশ বহাল থাকলে আগামী মে মাসের মধ্যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া বন্ধ হবার আশঙ্কা রয়েছে।

মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তবে কয়েক বছর চলার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আবার ২০০৬ সাল থেকে কর্মী প্রেরণ শুরু করে বাংলাদেশ। তবে বিপুলসংখ্যক অবৈধ শ্রমিক ধরা পড়ায় ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ২০১২ সালে আবারও দুদেশের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ‘জিটুজি-প্লাস’ নামে যে এসপিপিএ সিস্টেমের আওতায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিত, সে পদ্ধতি স্থগিত হওয়ার কারণেই ওই নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। দেশটিতে দীর্ঘ ৪ বছর জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকার পর গত বছর ৮ আগস্ট থেকে নতুনভাবে ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী যাওয়ার কথা শোনা গেলেও জমিজমা বিক্রি, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৪ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশটিতে যাচ্ছে কর্মীরা। সিন্ডিকেট চক্রের চড়া অভিবাসন ব্যয়ের অর্থ জোগাতে নাভিশ্বাস উঠছে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুকর্মীদের।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া। দীর্ঘদিন দেনদরবার ও নানা অনিশ্চয়তার ২০২২ সালের ২ জুন মালয়েশিয়ার তৎকালিন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের নেতৃত্বে ঢাকায় দুই দেশের বৈঠকে কারিগরি বিষয়সহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান হয়। শ্রমবাজার খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দুই মন্ত্রী।