ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুশরা নির্দোষ, তথ্যগত ভুলে মামলা হয়েছে: প্রতিবেদন

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে (২৪) শোকে হতবিহ্বল হয়ে তথ্যগত ভুলে আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তদন্ত করে ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় বুশরার কোনও সম্পৃক্ততা পাইনি। সেজন্য এ মামলা থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মামলাটির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তাকে পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করতে হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্পেনে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও সে প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় হতাশায় ভুগছিল। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে বুয়েটে চলমান পরীক্ষার ফলাফল ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ার বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ করতে থাকে। এবং জীবনের শেষ মুহূর্তে সে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ করতে থাকে, যা ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে।

ফারদিন জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফারদিন নূর পরশ মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ায় স্পেনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একই সঙ্গে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরবর্তীতে কাউকে কোনও কিছু না বলে সকলের অগোচরে ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর বেলা ৩টা হতে পরদিন ৫ নভেম্বর বেলা ২টা ০৩ মিনিট পর্যন্ত অস্বাভাবিক আচরণ করে। এদিন রাত ২টায় যাত্রাবাড়ী মোড়ে একা হেঁটে বরপাগামী একটি লেগুনাতে করে ২টা ২৫ মিনিটের সময় সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর পৌঁছায় এবং ২টা ৩৫ মিনিটের সময় বা তার কিছুক্ষণ আগে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর হতে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তদন্তকালীন সিডিআর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় যার সত্যতা পাওয়া যায় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যাদির ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরা (২২)-কে গ্রেফতার করা হলেও ব্যাপক ও গভীর তদন্তপ্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে আমাতুল্লাহ বুশরা জড়িত ছিল মর্মে কোনও তথ্য না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। নথি সংযুক্ত মুরতা, ময়নাতদন্ত, ভিসেরা প্রতিবেদন, আইটি বিশেষজ্ঞের মতামত ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনাটি একটি খুনের ঘটনা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া মামলাটির তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় বাদীর অভিযোগে বর্ণিত অজ্ঞাতনামা আসামিদের মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কোনও তথ্যও পাওয়া যায়নি।

এর আগে বুশরার জামিন শুনানির দিন নিহত ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বলেন, “আমার ছেলের হত্যার পেছনে বুশরার ইন্ধন আছে। এ মামলা থেকে বুশরা অব্যাহতি পেতে পারে না। আমরা পুলিশের এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিবো।”

এ ঘটনায় বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা বারবার বলেও এ বিষয়টি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি যে বুশরা কোনোভাবেই ফারদিন হত্যার সাথে জড়িত না, বুশরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। বিনা কারণে জেল খেটেছে সে। এখন পুলিশ তদন্ত করেই তো বলেছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেছে।”

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

বুশরা নির্দোষ, তথ্যগত ভুলে মামলা হয়েছে: প্রতিবেদন

আপডেট সময় ০৬:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে (২৪) শোকে হতবিহ্বল হয়ে তথ্যগত ভুলে আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তদন্ত করে ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় বুশরার কোনও সম্পৃক্ততা পাইনি। সেজন্য এ মামলা থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মামলাটির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তাকে পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করতে হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্পেনে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও সে প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় হতাশায় ভুগছিল। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে বুয়েটে চলমান পরীক্ষার ফলাফল ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ার বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ করতে থাকে। এবং জীবনের শেষ মুহূর্তে সে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ করতে থাকে, যা ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে।

ফারদিন জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফারদিন নূর পরশ মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ায় স্পেনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একই সঙ্গে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরবর্তীতে কাউকে কোনও কিছু না বলে সকলের অগোচরে ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর বেলা ৩টা হতে পরদিন ৫ নভেম্বর বেলা ২টা ০৩ মিনিট পর্যন্ত অস্বাভাবিক আচরণ করে। এদিন রাত ২টায় যাত্রাবাড়ী মোড়ে একা হেঁটে বরপাগামী একটি লেগুনাতে করে ২টা ২৫ মিনিটের সময় সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর পৌঁছায় এবং ২টা ৩৫ মিনিটের সময় বা তার কিছুক্ষণ আগে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর হতে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তদন্তকালীন সিডিআর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় যার সত্যতা পাওয়া যায় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তকালে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যাদির ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরা (২২)-কে গ্রেফতার করা হলেও ব্যাপক ও গভীর তদন্তপ্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে আমাতুল্লাহ বুশরা জড়িত ছিল মর্মে কোনও তথ্য না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। নথি সংযুক্ত মুরতা, ময়নাতদন্ত, ভিসেরা প্রতিবেদন, আইটি বিশেষজ্ঞের মতামত ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনাটি একটি খুনের ঘটনা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া মামলাটির তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় বাদীর অভিযোগে বর্ণিত অজ্ঞাতনামা আসামিদের মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কোনও তথ্যও পাওয়া যায়নি।

এর আগে বুশরার জামিন শুনানির দিন নিহত ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বলেন, “আমার ছেলের হত্যার পেছনে বুশরার ইন্ধন আছে। এ মামলা থেকে বুশরা অব্যাহতি পেতে পারে না। আমরা পুলিশের এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিবো।”

এ ঘটনায় বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা বারবার বলেও এ বিষয়টি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি যে বুশরা কোনোভাবেই ফারদিন হত্যার সাথে জড়িত না, বুশরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। বিনা কারণে জেল খেটেছে সে। এখন পুলিশ তদন্ত করেই তো বলেছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেছে।”