ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বব্যাপী করোনার জরুরি অবস্থা তুলে নিলো ডব্লিউএইচও

করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যে স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল তা তুলে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রায় তিন বছর পর এই ঘোষণা দেওয়া হলো। মহামারি শেষ হওয়ার জন্য এটিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলছে সংস্থাটি। গতকাল শুক্রবার এ ঘোষণা দেয় ডব্লিউএইচও। এতে জানানো হয়, এখন আর স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই।
করোনা মহামারি সংক্রান্ত বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার অবসান ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল শুক্রবার সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস নিজে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা মহামারির কারণে ৬ দশমিক ৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করেছে এটি। তবে এখন আর স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরুরি কমিটি বৈঠক করে। এই কমিটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘোষণা দিলো ডব্লিউএইচও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, অত্যন্ত আশার কথা হলো যে, আমি বিশ্বব্যাপী করোনার জরুরি অবস্থার সমাপ্তি ঘোষণা করছি। তার মানে এই নয় যে, কোভিড বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে শেষ হয়ে গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। যা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। এরপর ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করে ডব্লিউএইচও।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, বড় আশা নিয়ে আজ আমি করোনা মহামারি সংক্রান্ত বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার অবসান ঘোষণা করছি। প্রত্যাশা করছি, আমাদের সামনের দিনগুলো সুন্দর ও নিরাপদ হবে।
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ডব্লিউএইচওর বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার প্রত্যাহার সংক্রান্ত এই ঘোষণার আলাদা তাৎপর্য আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক ডব্লিউএইচওর এই ঘোষণা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।
তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৯৬৮ জন এবং এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৯ জন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের পরিসংখ্যানের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি।
করোনা মহামারির সময় ভারতের কেন্দ্রীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বপালন করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. শ্রীনাথ রেড্ডি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, একদম সঠিক সময়ে মহামারির জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডব্লিউএইচও। কারণ একদিকে গত প্রায় আড়াই বছরে দেশে দেশে টিকাদান কর্মসূচির কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহে করোনা প্রতিরোধী শক্তির উপস্থিতি দৃঢ়ভাবে বিদ্যমান, অন্যদিকে— টানা সাড়ে তিন বছরে কোটি কোটি মানুষের দেহে ছড়ানোর ফলে ভাইরাসটির প্রাণঘাতী ক্ষমতাও অনেক কমে এসেছে।
করোনা এখন আর কোনো বিপদের নাম নয়; বরং বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মানুষ এবং নভেল করোনাভাইরাস অনেকটাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রয়েছে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন ড. রেড্ডি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বব্যাপী করোনার জরুরি অবস্থা তুলে নিলো ডব্লিউএইচও

আপডেট সময় ০৪:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ মে ২০২৩

করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যে স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল তা তুলে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। প্রায় তিন বছর পর এই ঘোষণা দেওয়া হলো। মহামারি শেষ হওয়ার জন্য এটিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলছে সংস্থাটি। গতকাল শুক্রবার এ ঘোষণা দেয় ডব্লিউএইচও। এতে জানানো হয়, এখন আর স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই।
করোনা মহামারি সংক্রান্ত বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার অবসান ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল শুক্রবার সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস নিজে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা মহামারির কারণে ৬ দশমিক ৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাহত করেছে এটি। তবে এখন আর স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরুরি কমিটি বৈঠক করে। এই কমিটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘোষণা দিলো ডব্লিউএইচও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, অত্যন্ত আশার কথা হলো যে, আমি বিশ্বব্যাপী করোনার জরুরি অবস্থার সমাপ্তি ঘোষণা করছি। তার মানে এই নয় যে, কোভিড বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে শেষ হয়ে গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। যা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। এরপর ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করে ডব্লিউএইচও।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, বড় আশা নিয়ে আজ আমি করোনা মহামারি সংক্রান্ত বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার অবসান ঘোষণা করছি। প্রত্যাশা করছি, আমাদের সামনের দিনগুলো সুন্দর ও নিরাপদ হবে।
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ডব্লিউএইচওর বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার প্রত্যাহার সংক্রান্ত এই ঘোষণার আলাদা তাৎপর্য আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক ডব্লিউএইচওর এই ঘোষণা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।
তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৯৬৮ জন এবং এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৯ জন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের পরিসংখ্যানের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি।
করোনা মহামারির সময় ভারতের কেন্দ্রীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বপালন করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. শ্রীনাথ রেড্ডি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, একদম সঠিক সময়ে মহামারির জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডব্লিউএইচও। কারণ একদিকে গত প্রায় আড়াই বছরে দেশে দেশে টিকাদান কর্মসূচির কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহে করোনা প্রতিরোধী শক্তির উপস্থিতি দৃঢ়ভাবে বিদ্যমান, অন্যদিকে— টানা সাড়ে তিন বছরে কোটি কোটি মানুষের দেহে ছড়ানোর ফলে ভাইরাসটির প্রাণঘাতী ক্ষমতাও অনেক কমে এসেছে।
করোনা এখন আর কোনো বিপদের নাম নয়; বরং বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মানুষ এবং নভেল করোনাভাইরাস অনেকটাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রয়েছে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন ড. রেড্ডি।