ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিহত বিএনপি নেতার বাড়িতে শোকের মাতম, পুলিশের মামলা

কেন্দ্র ঘোষিত মিছিল কর্মসূচিতে পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশ। ৫১ বছর বয়সী আরেফিন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।

রোববার সকাল থেকেই জানাজায় অংশ নিতে আরেফিনের গ্রামের বাড়ি ময়দানদিঘী ইউনিয়নের চন্দনপাড়া এলাকায় স্বজনরা আসতে থাকেন।

নিহত বিএনপি নেতার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে ছুটে আসেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘গণমিছিলের সময় পুলিশের নির্মম মারধর ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন আরেফিন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, তার মৃত্যু হয়েছে।’

এদিকে স্বামীর কথা মনে হতেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আরেফিনের স্ত্রী চামেলী বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘যারা আমার স্বামীকে মেরেছে, আল্লাহ তুমি তাদের বিচার করো।’

বাবা হত্যার বিচার চেয়ে ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহী বলেন, ‘যারা আমার বাবাকে মেরেছে আমি তাদের বিচার চাই। এরা অনেক লোককে মেরেছে, আরও মানুষ মারবে।’

আরেফিনের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘এখন কোনো বিএনপি নেতা মারা গেলে পুলিশ বলে- হৃদরোগে মারা গেছে।

‘এটা এখন তাদের বুলি হয়ে গেছে। এ হত্যার জবাব আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে দেব।’

আরেফিনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘হাসপাতাল সূত্রে জেনেছি হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে। সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মযনাতদন্তে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ।’

পুলিশের পাঁচ মামলায় সহস্রাধিক আসামি

পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক ৫টি মামলা হয়েছে। পুলিশের করা এসব মামলায় ৮১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে এ তথ্য জানান পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।

ঘটনার পর থেকেই জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হযেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর বল প্রয়োগ, ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ এবং জানমালের ক্ষতি করায় পঞ্চগড় সদর থানায় করা পাঁচ মামলায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পঞ্চগড় সদরের একজন, দেবীগঞ্জ উপজেলার দুজন, বোদা উপজেলার একজন, আটোয়ারীর দুজন এবং তেঁতুলিয়ার দুজন।

এর মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলার দুজন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং বাকিরা বিএনপির।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘গতকাল বিএনপির পূর্বনির্ধারিত গণমিছিলের কর্মসূচি ছিল। আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে অনুরোধ করি। নিরাপত্তার কারণে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করি। কিন্তু তারা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে এবং পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পরে কোনো কারণ ছাড়াই তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং রাস্তায় ভাঙচুরের চেষ্টা হচ্ছিল, তাই পুলিশ টিয়ার শেল এবং শটগানের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় মিছিলকারীদের ২০-২৫ জন এবং পুলিশের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।’

সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলাগুলোতে কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে না বলেও জানান পুলিশ সুপার।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

নিহত বিএনপি নেতার বাড়িতে শোকের মাতম, পুলিশের মামলা

আপডেট সময় ০৩:৪০:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

কেন্দ্র ঘোষিত মিছিল কর্মসূচিতে পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশ। ৫১ বছর বয়সী আরেফিন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।

রোববার সকাল থেকেই জানাজায় অংশ নিতে আরেফিনের গ্রামের বাড়ি ময়দানদিঘী ইউনিয়নের চন্দনপাড়া এলাকায় স্বজনরা আসতে থাকেন।

নিহত বিএনপি নেতার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে ছুটে আসেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘গণমিছিলের সময় পুলিশের নির্মম মারধর ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন আরেফিন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানান, তার মৃত্যু হয়েছে।’

এদিকে স্বামীর কথা মনে হতেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন আরেফিনের স্ত্রী চামেলী বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘যারা আমার স্বামীকে মেরেছে, আল্লাহ তুমি তাদের বিচার করো।’

বাবা হত্যার বিচার চেয়ে ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহী বলেন, ‘যারা আমার বাবাকে মেরেছে আমি তাদের বিচার চাই। এরা অনেক লোককে মেরেছে, আরও মানুষ মারবে।’

আরেফিনের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘এখন কোনো বিএনপি নেতা মারা গেলে পুলিশ বলে- হৃদরোগে মারা গেছে।

‘এটা এখন তাদের বুলি হয়ে গেছে। এ হত্যার জবাব আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে দেব।’

আরেফিনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘হাসপাতাল সূত্রে জেনেছি হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে। সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মযনাতদন্তে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ।’

পুলিশের পাঁচ মামলায় সহস্রাধিক আসামি

পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক ৫টি মামলা হয়েছে। পুলিশের করা এসব মামলায় ৮১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে এ তথ্য জানান পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।

ঘটনার পর থেকেই জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হযেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর বল প্রয়োগ, ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ এবং জানমালের ক্ষতি করায় পঞ্চগড় সদর থানায় করা পাঁচ মামলায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পঞ্চগড় সদরের একজন, দেবীগঞ্জ উপজেলার দুজন, বোদা উপজেলার একজন, আটোয়ারীর দুজন এবং তেঁতুলিয়ার দুজন।

এর মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলার দুজন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং বাকিরা বিএনপির।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘গতকাল বিএনপির পূর্বনির্ধারিত গণমিছিলের কর্মসূচি ছিল। আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে অনুরোধ করি। নিরাপত্তার কারণে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করি। কিন্তু তারা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে এবং পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পরে কোনো কারণ ছাড়াই তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং রাস্তায় ভাঙচুরের চেষ্টা হচ্ছিল, তাই পুলিশ টিয়ার শেল এবং শটগানের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় মিছিলকারীদের ২০-২৫ জন এবং পুলিশের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।’

সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলাগুলোতে কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে না বলেও জানান পুলিশ সুপার।