ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৫ সিটিতে নির্বাচন : অংশ নিচ্ছে না বিএনপি

নির্ভার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা

গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা এই ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল গত ৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপি এ সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপি অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অনেকটাই নির্ভার। তবে গাজীপুর, বরিশাল ও সিলেট সিটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ ভিন্ন রূপ নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ৫ সিটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ৫ সিটির মধ্যে ক্ষমতাসীন দল গাজীপুর, সিলেট ও বরিশালে নতুন প্রার্থী দিয়েছে। রাজশাহী ও খুলনাতে পুরোনো মেয়রদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গাজীপুরে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন এডভোকেট আজমত উল্লা খান। বরিশালে চাচা-ভাতিজার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন চাচা। দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বরিশালের রাজনীতিতে নতুন মুখ আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তার ভাতিজা ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ বাদ পড়েছেন। অন্যদিকে সিলেটেও নতুন মুখ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। করোনা মহামারির সময় বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এবার সিলেটে নতুন প্রার্থী হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামান। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জমান লিটন এবং খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেককে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। খুলনা ও বরিশালে ভোট হবে ১২ই জুন। আর ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ। এসব ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)।
গতকাল ছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের শেষ দিন। আমাদের গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিনে গতকাল মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মোট ৩৮৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে মেয়র পদে একজন মহিলাসহ ১২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ১৯টি কাউন্সিলর পদে ৮২ জন ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন প্রার্থী মানোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো: ফরিদুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ সব তথ্য জানান।

তফসিল অনুযায়ী এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। পর দিন ৯ মে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গাজীপুরে মেয়র পদে যারা মানোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম, মো: আবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমের মাতা জায়েদা খাতুন ও মো: অলিউর রহমান। এর আগে বুধবার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মো: আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল এবং মো: হারুন আর রশীদ।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পরে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে। আমি বিশ্বাস করি অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি পত্রিকায় দেখেছি ওনি (জাহাঙ্গীর আলম) ও তার মা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ওনি যেহেতু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের দলের নেতৃত্বের প্রতি যদি ওনার আস্থা থাকে, দেশের উন্নতির প্রতি আস্থা থাকে তবে তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ওনি ওনার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

অন্য দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার মার মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছি। আর আমার মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। আমি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট চাই। আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে ভোটের মাধ্যমে শহরের মানুষ বিচার করবে। আর যদি ভালো করে থাকি, তাহলে অবশ্যই আমার জয়লাভ হবে। সত্যের জয় হবে। আমার বিরুদ্ধে বড় মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। ১৮ মাস এ মিথ্যা বহন করছি। এ থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই।

এদিকে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় শহরজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে নির্বাচনী আলোচনা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমতউল্লা খান ও জাহাঙ্গীর আলম-এ দু’জন। জাহাঙ্গীর আলম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে পারলে আজমতউল্লা খানের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে এমন অভিমত অনেক ভোটারের।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই। তারপরও বরিশালের নির্বাচনে চাচা ভাতিজার লড়াই নিয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিল তুমুল আলোচনা। সব জল্পনা-কল্পনা শেষে অবশেষে ভাতিজাকে পরাজজিত করে চাচা এবার নৌকার মাঝি হয়েছেন। চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ কি করবেন ভোটারদের মধ্যে সে আলোচনা এখন চলছে।

এদিকে গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসাবে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে মনোয়ন ঘোষণা করেছে। বরিশাল ব্যুরো জানায়, গতকাল দুপুরের পরে মহানগরী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে চরমোনাই দরবার শরিফে দলের আমীর সৈয়দ মোহম্মদ রেজাউল করিম তার ছোট ভাই সৈয়দ ফয়জুল করিমকে বরিশাল সিটির মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই পীর ছাহেবের পরিবার ও দলের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছিল। গত ১৮ এপ্রিল প্রার্থিতা ঘোষণার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। পীর ছাহেবের আরেক ছোট ভাই আবুল খায়ের মেয়র পদে প্রার্থী হবার আগ্রহী ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও দলের মধ্যে মতামত গ্রহণ করেও চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দল। পরে সময় পিছিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গতকাল প্রার্থিতা ঘোষণা করল ইসলামী আন্দোলন।

আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে চরমোনাই পীর ছাহেবের ছোট ভাইয়ের মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে খুব একটা উত্তাপ নেই এখনো। ২০১৮-এর সিটি নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলন-এর প্রার্থী সকাল ১১টার পরেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে দেশের মূল বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি আরো দেড় বছর আগেই ইঞ্জিনিয়র ইকবাল হোসেন তাপসকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে রেখেছে। কিন্তু তিনিও এ মহানগরীর বাসিন্দা হলেও রাজধানীতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। ফলে তিনিও এ নগরবাসীর কাছে খুব পরিচিত মুখ নন। তবে ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও দল তাকে সরে দাঁড়াতে বললে তা অমান্য করে ভোটের মাঠে থাকায় তাকে বহিষ্কারও করা হয়। তবে নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতির অভিযোগে সকাল ১১টার পরেই তিনিও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পিতা আবদুর রব সেরনিয়াবতের মৃত্যুর পরে কৈশোরকালে এ নগরী থেকে স্থায়ীভাবে দূরে সরে ছিলেন পরিবারের সাথে মান অভিমানে। নগরীর কালিবাড়ী রোডে পৈত্রিক বাড়ি থাকা সত্তে¡ও বছরখানেক আগে হজরত কালু শাহ (রঃ) সড়কে বাসাভাড়া করে তিনি এখানে বসবাস শুরু করেছেন। ফলে এ নগরবাসীর সাথে তার তেমন চেনাজানা এখনো সৃষ্টি না হলেও নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। ফলে তিন অপরিচিত মুখ নিয়ে কতটা নিরপেক্ষ ও জমজমাট হয় বরিশালের আসন্ন সিটি নির্বাচন, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলও।

রাজশাহী ব্যুরোয় : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও রাজশাহী সিটিতে এখনো তেমনভাবে ভোটের সানাই বাজেনি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ জুন। নির্বাচন নিয়ে সাধারণের মধ্যে খুব একটা আলোচনা নেই। অবশ্য পবিত্র রমজান ব্যবসা-বাণিজ্য আর ঈদ উৎসবকে ঘিরে সবাই ছিল ব্যস্ত। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। বর্তমানের পাশে পুরাতনদের কেউ কেউ প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পোস্টারে। নগর পিতার আসনটি নিয়ে একাই মাঠে চষে ফিরছেন বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ওমরাহ হজ্ব শেষ করে কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এসে নেমে পড়েছেন তার নির্বাচনী কাজে। ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর এবার নিজ দলের সাংগঠনিক ওয়ার্ডগুলো মহল্লা কমিটি নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করছেন। নজর দিয়েছেন দলের সাংগঠনিক দিকে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করছেন। সাথে রয়েছেন দলের নেতৃবৃন্দ। লিটন তার উন্নয়ন কর্মকাÐের কথা তুলে ধরছেন। প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী উন্নয়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। সে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। নির্বাচিত হবার পর রাজশাহীর উন্নয়নে আরো ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ নিয়ে তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান। নগরীর উন্নয়নের পাশপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথা বলছেন। ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ। মেয়র নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই।

ইতিমধ্যেই রাসিক নির্বাচনের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজশাহী এবং রিটার্নিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন। তাতে জানা যায়, ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। বাছাই ২৫ মে ও ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ২১ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

৫ সিটিতে নির্বাচন : অংশ নিচ্ছে না বিএনপি

নির্ভার আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা

আপডেট সময় ০৪:২৬:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা এই ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল গত ৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপি এ সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপি অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অনেকটাই নির্ভার। তবে গাজীপুর, বরিশাল ও সিলেট সিটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী মাঠের পরিবেশ ভিন্ন রূপ নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ৫ সিটিতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ৫ সিটির মধ্যে ক্ষমতাসীন দল গাজীপুর, সিলেট ও বরিশালে নতুন প্রার্থী দিয়েছে। রাজশাহী ও খুলনাতে পুরোনো মেয়রদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গাজীপুরে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন এডভোকেট আজমত উল্লা খান। বরিশালে চাচা-ভাতিজার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন চাচা। দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বরিশালের রাজনীতিতে নতুন মুখ আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তার ভাতিজা ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ বাদ পড়েছেন। অন্যদিকে সিলেটেও নতুন মুখ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। করোনা মহামারির সময় বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুতে এবার সিলেটে নতুন প্রার্থী হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামান। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জমান লিটন এবং খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেককে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। খুলনা ও বরিশালে ভোট হবে ১২ই জুন। আর ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ। এসব ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)।
গতকাল ছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের শেষ দিন। আমাদের গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিনে গতকাল মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মোট ৩৮৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে মেয়র পদে একজন মহিলাসহ ১২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ১৯টি কাউন্সিলর পদে ৮২ জন ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন প্রার্থী মানোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো: ফরিদুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ সব তথ্য জানান।

তফসিল অনুযায়ী এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। পর দিন ৯ মে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গাজীপুরে মেয়র পদে যারা মানোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম, মো: আবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমের মাতা জায়েদা খাতুন ও মো: অলিউর রহমান। এর আগে বুধবার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মো: আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল এবং মো: হারুন আর রশীদ।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পরে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে। আমি বিশ্বাস করি অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি পত্রিকায় দেখেছি ওনি (জাহাঙ্গীর আলম) ও তার মা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ওনি যেহেতু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের দলের নেতৃত্বের প্রতি যদি ওনার আস্থা থাকে, দেশের উন্নতির প্রতি আস্থা থাকে তবে তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ওনি ওনার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

অন্য দিকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার মার মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছি। আর আমার মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। আমি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট চাই। আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে ভোটের মাধ্যমে শহরের মানুষ বিচার করবে। আর যদি ভালো করে থাকি, তাহলে অবশ্যই আমার জয়লাভ হবে। সত্যের জয় হবে। আমার বিরুদ্ধে বড় মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। ১৮ মাস এ মিথ্যা বহন করছি। এ থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই।

এদিকে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় শহরজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে নির্বাচনী আলোচনা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমতউল্লা খান ও জাহাঙ্গীর আলম-এ দু’জন। জাহাঙ্গীর আলম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে পারলে আজমতউল্লা খানের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে এমন অভিমত অনেক ভোটারের।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই। তারপরও বরিশালের নির্বাচনে চাচা ভাতিজার লড়াই নিয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিল তুমুল আলোচনা। সব জল্পনা-কল্পনা শেষে অবশেষে ভাতিজাকে পরাজজিত করে চাচা এবার নৌকার মাঝি হয়েছেন। চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ কি করবেন ভোটারদের মধ্যে সে আলোচনা এখন চলছে।

এদিকে গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসাবে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে মনোয়ন ঘোষণা করেছে। বরিশাল ব্যুরো জানায়, গতকাল দুপুরের পরে মহানগরী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে চরমোনাই দরবার শরিফে দলের আমীর সৈয়দ মোহম্মদ রেজাউল করিম তার ছোট ভাই সৈয়দ ফয়জুল করিমকে বরিশাল সিটির মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই পীর ছাহেবের পরিবার ও দলের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছিল। গত ১৮ এপ্রিল প্রার্থিতা ঘোষণার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। পীর ছাহেবের আরেক ছোট ভাই আবুল খায়ের মেয়র পদে প্রার্থী হবার আগ্রহী ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও দলের মধ্যে মতামত গ্রহণ করেও চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দল। পরে সময় পিছিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গতকাল প্রার্থিতা ঘোষণা করল ইসলামী আন্দোলন।

আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনে চরমোনাই পীর ছাহেবের ছোট ভাইয়ের মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে খুব একটা উত্তাপ নেই এখনো। ২০১৮-এর সিটি নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলন-এর প্রার্থী সকাল ১১টার পরেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে দেশের মূল বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি আরো দেড় বছর আগেই ইঞ্জিনিয়র ইকবাল হোসেন তাপসকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে রেখেছে। কিন্তু তিনিও এ মহানগরীর বাসিন্দা হলেও রাজধানীতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। ফলে তিনিও এ নগরবাসীর কাছে খুব পরিচিত মুখ নন। তবে ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও দল তাকে সরে দাঁড়াতে বললে তা অমান্য করে ভোটের মাঠে থাকায় তাকে বহিষ্কারও করা হয়। তবে নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতির অভিযোগে সকাল ১১টার পরেই তিনিও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পিতা আবদুর রব সেরনিয়াবতের মৃত্যুর পরে কৈশোরকালে এ নগরী থেকে স্থায়ীভাবে দূরে সরে ছিলেন পরিবারের সাথে মান অভিমানে। নগরীর কালিবাড়ী রোডে পৈত্রিক বাড়ি থাকা সত্তে¡ও বছরখানেক আগে হজরত কালু শাহ (রঃ) সড়কে বাসাভাড়া করে তিনি এখানে বসবাস শুরু করেছেন। ফলে এ নগরবাসীর সাথে তার তেমন চেনাজানা এখনো সৃষ্টি না হলেও নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। ফলে তিন অপরিচিত মুখ নিয়ে কতটা নিরপেক্ষ ও জমজমাট হয় বরিশালের আসন্ন সিটি নির্বাচন, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলও।

রাজশাহী ব্যুরোয় : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও রাজশাহী সিটিতে এখনো তেমনভাবে ভোটের সানাই বাজেনি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ জুন। নির্বাচন নিয়ে সাধারণের মধ্যে খুব একটা আলোচনা নেই। অবশ্য পবিত্র রমজান ব্যবসা-বাণিজ্য আর ঈদ উৎসবকে ঘিরে সবাই ছিল ব্যস্ত। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। বর্তমানের পাশে পুরাতনদের কেউ কেউ প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পোস্টারে। নগর পিতার আসনটি নিয়ে একাই মাঠে চষে ফিরছেন বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ওমরাহ হজ্ব শেষ করে কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এসে নেমে পড়েছেন তার নির্বাচনী কাজে। ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর এবার নিজ দলের সাংগঠনিক ওয়ার্ডগুলো মহল্লা কমিটি নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করছেন। নজর দিয়েছেন দলের সাংগঠনিক দিকে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করছেন। সাথে রয়েছেন দলের নেতৃবৃন্দ। লিটন তার উন্নয়ন কর্মকাÐের কথা তুলে ধরছেন। প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী উন্নয়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। সে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। নির্বাচিত হবার পর রাজশাহীর উন্নয়নে আরো ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ নিয়ে তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান। নগরীর উন্নয়নের পাশপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথা বলছেন। ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ। মেয়র নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই।

ইতিমধ্যেই রাসিক নির্বাচনের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজশাহী এবং রিটার্নিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন। তাতে জানা যায়, ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। বাছাই ২৫ মে ও ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ২১ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।