জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থার ওপর দেশের মানুষের আস্থা নেই। বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, আওয়ামী লীগের এক মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছেন তিনি কত শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন।
পাশাপাশি কোন প্রার্থী কত ভোট পাবেন, তিনি সেটিও বলে বেড়াচ্ছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। আমরা জয়ী হতেই নির্বাচন করব। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীরা ভালো ফল করবেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পার্টির সংসদ-সদস্যদের এক যৌথ সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কূটনীতিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। কূটনীতিকরা যেন আমাদের দেশে নিরাপদে কাজ করতে পারেন। এজন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জিএম কাদের।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি হযবরল হতে পারে। রাজনীতির মাঠে কী হয়, আমরা কেউই জানি না। এমন বাস্তবতায় সরকার ও বিরোধী শিবিরের সবাই ঝুঁকিতে আছেন। তাই রাজনীতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, তারাই বিপদগ্রস্ত হবে। রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।
তিনি বলেন, জনগণের সামনে আমাদের রাজনীতি পরিষ্কার করতে চাই। আমরা কোনো দলের বি-টিম নই। নির্বাচনের আগে দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সঠিক রাজনীতি দিতে হবে। নির্বাচনের মাঠে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে থাকব। জাতীয় পার্টির ঐক্য বিনষ্ট করার শক্তি কারও নেই।
সভায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাঠে বিকল্প শক্তি হিসাবে আছে। অনেকেই বলেছেন এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু জাতীয় পার্টি এখনো অনেক শক্তিশালী। তিনি বলেন, ইন্ধন আছে; কিন্তু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনেকেই জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে গেছেন, তারা কেউই কিছু করতে পারেননি। আমাদের জীবনের সোনালি সময়টা জাতীয় পার্টিকে দিয়েছি, বাকি জীবনেও জাতীয় পার্টির সঙ্গেই থাকব।
পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, দেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিয়ে ভাবছে না। দেশের মানুষ চায় জাতীয় পার্টি যেন আরও শক্তিশালীভাবে রাজনীতির মাঠে থাকে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতির মাঠে থাকলে দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকেই সমর্থন দেবে।
কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। দেশের মানুষ জানে, ঐক্যই আমাদের অঙ্গীকার। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে পরীক্ষিত, পরিপক্ব ও ত্যাগী নেতার অভাব নেই। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব।
কো-চেয়াম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, ঐক্যের বিকল্প নেই। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতির মাঠে আছে। কোনো বিভক্তি নেই জাতীয় পার্টিতে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমান সুযোগ পেলে দেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো।
কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর বিরক্ত। তারা এ দুটি দলকে আর চায় না। তাই যার যার নির্বাচনি এলাকায় শক্তভাবে কাজ করতে হবে। শক্তভাবে রাজনীতির হাল ধরতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আবুল কাশেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সাহিদুর রহমান টেপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভরায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, সোলায়মান আলম শেঠ, আব্দুর রশিদ সরকার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ দিদার বক্স, নাজমা আখতার এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল, সংসদ-সদস্য রওশন আরা মান্নান, শেরীফা কাদের, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, নুরুল ইসলাম তালুকদার, আহসান আদেলুর রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।