মুসলমানদের সিয়াম সাধনার (রোজা) মাস রমজান শুরু হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দিন। প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় বেশকিছু খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এর মধ্যে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা থাকায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।
রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলো লেবু, শসা, ধনেপাতা, বেগুন, ছোলা। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে বড় এক পিস লেবু ২৫ টাকা হিসেবে হালি ১০০ টাকা, আর ডজন ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট লেবুর হালি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ বাজারে ধনেপাতার আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা।
অন্যদিকে, কয়েক মাস ধরে গরু ও খাসির গোশত ছোঁয়াই যাচ্ছে না। অবশ্য মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে রেকর্ড গড়লেও রমজানের শুরুর দিন কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে ব্রয়লারের দাম। পোলট্রি খাতের চার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এইচ এম সফিকুজ্জামান। বৈঠকের পরের দিনই ব্রয়লার মুরগির দাম কমলো। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। তবে, গোশতের প্রভাব দেখা গেছে সবজি ও মাছের বাজারে। রমজানের শুরুতেই মাছের দাম নাগালের বাইরে। সবজির বাজারেও আগুন। সবজি ও মাছের অসহনীয় মূল্যে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।
রাজধানীর তালতলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম। বিশেষ করে বেগুন, লেবু, শসা, টমেটো, ধনেপাতা, কাঁচামরিচসহ ইফতারিতে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে অত্যধিক। তালতলা বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ৫০ টাকা দামে শসা কিনলাম না কমবে বলে। অথচ শুক্রবার ৮০ টাকা। ৬০ টাকার বেগুন ১০০ টাকা। এক পিস লেবু ২৫ টাকা। আগে লেবু ডজন হিসাবে কিনতাম, এরপর কিছুদিন ধরে হালি হিসাবে কিনছি। দাম বাড়ায় পিস হিসাবে কিনতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লম্বা বেগুনের দাম ১০০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা কেজি, ধনেপাতা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তা ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বৃহস্পতিবারও ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর গতকাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বলে জানিয়েছেন একজন পাইকারি ব্যবসায়ী।
রমজানের প্রথম দিনে বেশ বেড়েছে মাছের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পর থেকেই মাছের দামে পরিবর্তন এসেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন আড়তে মাছের দাম বাড়ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল চাষের রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকায়। তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। এসব মাছের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়) মাছের দাম। এখন মলা ৫০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ছোট আকারের টেংরা ৫০০, আর বড় আকারের ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আকারভেদে চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ এবং গলদা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা খালেক বলেন, দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ গোশত খেতে পারছেন না। যে কারণে মাছের ওপর প্রভাব বাড়ছে, এ জন্য মাছের দাম বেড়েছে। শেষ এক সপ্তাহে সবধরনের মাছের দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি নির্ধারণের পরেই বাজারে এমন নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেলো। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা দরে। যা গতকাল ২৭০-২৮০ টাকা ছিল। এদিকে সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলতে ছিল দেশের পোলট্রি খাতে- এমন অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনটির দাবি, এই খাতের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর গোশতের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। আর খাসির গোশতের দাম ১১০০-১২০০ টাকা কেজি।
ঢাকা
,
রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::










নিত্যপণ্যের দামে আগুন
-
রুদ্রকন্ঠ২৪ ডেস্ক :
- আপডেট সময় ০৩:১০:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
- ৫৩২ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ