ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ কোরিয়া কেন ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বছর পেরিয়ে গেছে এবং এ সময়ে এই যুদ্ধকে ঘিরে অনেক বিস্ময় তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন এই সংঘাতে হয়তো উচ্চ-প্রযুক্তির অনেক প্রয়োগ দেখা যাবে যা থেকে ধারণা করা যাবে ভবিষ্যতের যুদ্ধের রূপ কেমন হবে।

সেই ধারণা কিছুটা হয়তো বাস্তবে দেখা গেছে, কিন্তু এও প্রমাণিত হচ্ছে যে যুদ্ধে এখনও ট্যাংক বা কামানের মত প্রচলিত মারণাস্ত্র কতটা প্রাসঙ্গিক। এবং এই বাস্তবতায় দক্ষিণ কোরিয়া এই যুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাধারণভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাবমূর্তির সাথে পপ সঙ্গীত এবং স্যামসাংয়ের মত প্রযুক্তি জায়ান্টের নাম ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কিন্তু একথা হয়তো অনেকেই জানেন যে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ।

গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপরি) মার্চে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২২ সালে গুরুত্বপূর্ণ মারণাস্ত্রের রপ্তানিতে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ছিল নবম। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসাবে গত বছর দেশটি অস্ত্র রপ্তানি করে রেকর্ড ১৭০০ কোটি ডলার আয় করেছে। কেন দক্ষিণ কোরিয়া এত বড় অস্ত্র নির্মাতা দেশ হয়েছে – সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য খুব কঠিন নয়। কারণ দেশটি কাগজে-কলমে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। কারণ ১৯৫৩ সালে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও দুদেশের মধ্যে কোনও শান্তি চুক্তি এখনও হয়নি।

“অস্ত্র এবং গোলাবারুদ মজুদের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের এক নম্বর না হলেও শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ। বিশেষ করে গোলা-বারুদ তৈরির অসামান্য সক্ষমতা অর্জন করেছে তারা,” বলেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের কোরিয়া প্রোগ্রামের প্রধান ড. ভিক্টর চা। “এবং এখন এই যুদ্ধে ইউক্রেনের যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন তা হলো গোলা। নেটো জোটের যে সব দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করছে তাদেরও এখন গোলার চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে,” প্রেসিডেন্ট উনের যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ড. চা।

ফলে ইউক্রেনকে অস্ত্র গোলাবারুদ দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে থেকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চাপ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছিল বুধবার হোয়াইট হাউজে উনের সাথে বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য চাপ বাড়াবেন। কিন্তু অন্তত প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রেসিডেন্ট তাদের বৈঠকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কোনেও আলোচনা করেননি। তবে ঐ কর্মকর্তা স্বীকার করেন ইউক্রেন ইস্যু বৈঠকে উঠেছিল। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ইউক্রেনকে অস্ত্র যোগান দেয়ার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর আমেরিকানদের চাপ অব্যাহত থাকবে।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের গোপন রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার জন্য আমেরিকান চাপ নিয়ে সিউল সরকারের উঁচু মহলে চরম অস্বস্তি চলছে। দক্ষিণ কোরিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে শুধু মানবিক এবং আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। যেমন, গ্যাস মাস্ক, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং ওষুধপত্র। কিন্তু ইউক্রেনকে মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এমনকি যেসব দেশ যুদ্ধে লিপ্ত সেখানে অস্ত্র না পাঠানো নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

তাদের এই অবস্থানের কারণ সম্ভবত তাদের নিজের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও প্রতিবেশী দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না দক্ষিণ কোরিয়া। ঐ দুই দেশে অর্থনৈতিক স্বার্থও তাদের কম নয়। রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস কেনে দক্ষিণ কোরিয়া।

কিন্তু মূল যে বিবেচনা তা হলো উত্তর কোরিয়ার ওপর রাশিয়ার প্রভাব। “যে কোনও দেশের জন্যই ইউক্রেনের মত একটি যুদ্ধে – যেখানে আদর্শিক রেষারেষি চরম রূপ নিয়েছে – কোনও পক্ষ নেওয়া কঠিন, সেখানে কোরিয়ার মত বিভক্ত একটি দেশের পক্ষে পক্ষ নেওয়া নেহাতই পাগলামি,” বিবিসিকে বলেন সোলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক কিম ডং-ইয়াপ। “কূটনীতিতে কৌশলগত সার্বভৌমত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটির গুরুত্ব কৌশলগত অস্বচ্ছতা বা কৌশলগত একটি অবস্থান নেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি। সংঘাতে লিপ্ত একটি পক্ষকে অস্ত্র দিলে সেই সার্বভৌমত্ব হারাতে হবে – যেটি বড় ভুল।” সেই ঝুঁকির ইঙ্গিত সাথে সাথেই দেখা গেছে।

প্রেসিডেন্ট উন এ সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন রাশিয়া যদি ইউক্রেনে বেসামরিক লোকজনের ওপর বড় কোনও হামলা চালায়, তাহলে তার দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার কথা ভাববে। প্রায় সাথে সাথেই রাশিয়া পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট এবং পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভিয়েদেফ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেন, “আমাদের সহযোগী উত্তর কোরিয়ার কাছে যখন আমাদের সর্বাধুনিক অস্ত্র যাবে, তখন সেদেশের (দক্ষিণ কোরিয়া) মানুষ কী বলবে তা ভাবার চেষ্টা করছি। কথায় আছে – ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হবে।“

তবে এই উত্তেজনাকর আবহের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়া হয়তো পর্দার আড়ালে এরই মধ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার প্রশ্নে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডের সাথে এ যাবতকালের মধ্যে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় তারা পোল্যান্ডকে যুদ্ধবিমান এবং ট্যাংক পাঠাবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক ‘ডংআ ইলবো’র খবর অনুযায়ী গত মাসে সোল সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে পাঁচ লাখ রাউন্ড ১৫৫এমএম কামানের গোলা ধার দেওয়ার ব্যাপারে একটি চুক্তি সই করেছে। সরাসরি বিক্রির বদলে ধার দেওয়ার চুক্তি করার কারণ হয়তো সেই গোলা যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে পাঠালেও যেন প্রেসিডেন্ট উনের সরকারকে দেশের মধ্যে আইন ভঙ্গের দায়ে পড়তে না হয়।

ইউক্রেনকে দিতে গিয়ে নেটো জোটের দেশগুলোর নিজেদের গোলাবারুদের মজুদে বড় ধরনের টান পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পোল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র গোলা বারুদ পেলে নেটো জোট সেগুলো নিজেদের টান পড়া মজুদ পূরণ করতে পারবে, এবং সেই সুযোগে তখন নিজেদেরগুলো ইউক্রেনকে পাঠাতে পারবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

দক্ষিণ কোরিয়া কেন ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে

আপডেট সময় ০৩:৪৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর বছর পেরিয়ে গেছে এবং এ সময়ে এই যুদ্ধকে ঘিরে অনেক বিস্ময় তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন এই সংঘাতে হয়তো উচ্চ-প্রযুক্তির অনেক প্রয়োগ দেখা যাবে যা থেকে ধারণা করা যাবে ভবিষ্যতের যুদ্ধের রূপ কেমন হবে।

সেই ধারণা কিছুটা হয়তো বাস্তবে দেখা গেছে, কিন্তু এও প্রমাণিত হচ্ছে যে যুদ্ধে এখনও ট্যাংক বা কামানের মত প্রচলিত মারণাস্ত্র কতটা প্রাসঙ্গিক। এবং এই বাস্তবতায় দক্ষিণ কোরিয়া এই যুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাধারণভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাবমূর্তির সাথে পপ সঙ্গীত এবং স্যামসাংয়ের মত প্রযুক্তি জায়ান্টের নাম ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কিন্তু একথা হয়তো অনেকেই জানেন যে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ।

গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপরি) মার্চে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২২ সালে গুরুত্বপূর্ণ মারণাস্ত্রের রপ্তানিতে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ছিল নবম। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া হিসাবে গত বছর দেশটি অস্ত্র রপ্তানি করে রেকর্ড ১৭০০ কোটি ডলার আয় করেছে। কেন দক্ষিণ কোরিয়া এত বড় অস্ত্র নির্মাতা দেশ হয়েছে – সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য খুব কঠিন নয়। কারণ দেশটি কাগজে-কলমে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। কারণ ১৯৫৩ সালে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও দুদেশের মধ্যে কোনও শান্তি চুক্তি এখনও হয়নি।

“অস্ত্র এবং গোলাবারুদ মজুদের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের এক নম্বর না হলেও শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ। বিশেষ করে গোলা-বারুদ তৈরির অসামান্য সক্ষমতা অর্জন করেছে তারা,” বলেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের কোরিয়া প্রোগ্রামের প্রধান ড. ভিক্টর চা। “এবং এখন এই যুদ্ধে ইউক্রেনের যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন তা হলো গোলা। নেটো জোটের যে সব দেশ ইউক্রেনকে সাহায্য করছে তাদেরও এখন গোলার চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে,” প্রেসিডেন্ট উনের যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ড. চা।

ফলে ইউক্রেনকে অস্ত্র গোলাবারুদ দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে থেকে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চাপ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছিল বুধবার হোয়াইট হাউজে উনের সাথে বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য চাপ বাড়াবেন। কিন্তু অন্তত প্রকাশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রেসিডেন্ট তাদের বৈঠকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কোনেও আলোচনা করেননি। তবে ঐ কর্মকর্তা স্বীকার করেন ইউক্রেন ইস্যু বৈঠকে উঠেছিল। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ইউক্রেনকে অস্ত্র যোগান দেয়ার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর আমেরিকানদের চাপ অব্যাহত থাকবে।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের গোপন রিপোর্টেও বলা হয়েছে যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার জন্য আমেরিকান চাপ নিয়ে সিউল সরকারের উঁচু মহলে চরম অস্বস্তি চলছে। দক্ষিণ কোরিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে শুধু মানবিক এবং আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। যেমন, গ্যাস মাস্ক, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং ওষুধপত্র। কিন্তু ইউক্রেনকে মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এমনকি যেসব দেশ যুদ্ধে লিপ্ত সেখানে অস্ত্র না পাঠানো নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

তাদের এই অবস্থানের কারণ সম্ভবত তাদের নিজের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও প্রতিবেশী দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না দক্ষিণ কোরিয়া। ঐ দুই দেশে অর্থনৈতিক স্বার্থও তাদের কম নয়। রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস কেনে দক্ষিণ কোরিয়া।

কিন্তু মূল যে বিবেচনা তা হলো উত্তর কোরিয়ার ওপর রাশিয়ার প্রভাব। “যে কোনও দেশের জন্যই ইউক্রেনের মত একটি যুদ্ধে – যেখানে আদর্শিক রেষারেষি চরম রূপ নিয়েছে – কোনও পক্ষ নেওয়া কঠিন, সেখানে কোরিয়ার মত বিভক্ত একটি দেশের পক্ষে পক্ষ নেওয়া নেহাতই পাগলামি,” বিবিসিকে বলেন সোলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক কিম ডং-ইয়াপ। “কূটনীতিতে কৌশলগত সার্বভৌমত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটির গুরুত্ব কৌশলগত অস্বচ্ছতা বা কৌশলগত একটি অবস্থান নেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি। সংঘাতে লিপ্ত একটি পক্ষকে অস্ত্র দিলে সেই সার্বভৌমত্ব হারাতে হবে – যেটি বড় ভুল।” সেই ঝুঁকির ইঙ্গিত সাথে সাথেই দেখা গেছে।

প্রেসিডেন্ট উন এ সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন রাশিয়া যদি ইউক্রেনে বেসামরিক লোকজনের ওপর বড় কোনও হামলা চালায়, তাহলে তার দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার কথা ভাববে। প্রায় সাথে সাথেই রাশিয়া পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট এবং পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভিয়েদেফ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেন, “আমাদের সহযোগী উত্তর কোরিয়ার কাছে যখন আমাদের সর্বাধুনিক অস্ত্র যাবে, তখন সেদেশের (দক্ষিণ কোরিয়া) মানুষ কী বলবে তা ভাবার চেষ্টা করছি। কথায় আছে – ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হবে।“

তবে এই উত্তেজনাকর আবহের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়া হয়তো পর্দার আড়ালে এরই মধ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার প্রশ্নে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডের সাথে এ যাবতকালের মধ্যে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় তারা পোল্যান্ডকে যুদ্ধবিমান এবং ট্যাংক পাঠাবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক ‘ডংআ ইলবো’র খবর অনুযায়ী গত মাসে সোল সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে পাঁচ লাখ রাউন্ড ১৫৫এমএম কামানের গোলা ধার দেওয়ার ব্যাপারে একটি চুক্তি সই করেছে। সরাসরি বিক্রির বদলে ধার দেওয়ার চুক্তি করার কারণ হয়তো সেই গোলা যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে পাঠালেও যেন প্রেসিডেন্ট উনের সরকারকে দেশের মধ্যে আইন ভঙ্গের দায়ে পড়তে না হয়।

ইউক্রেনকে দিতে গিয়ে নেটো জোটের দেশগুলোর নিজেদের গোলাবারুদের মজুদে বড় ধরনের টান পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পোল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র গোলা বারুদ পেলে নেটো জোট সেগুলো নিজেদের টান পড়া মজুদ পূরণ করতে পারবে, এবং সেই সুযোগে তখন নিজেদেরগুলো ইউক্রেনকে পাঠাতে পারবে।