ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মানবতাবিরোধী অপরাধ

তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গা ঢাকা দেন ফাঁসির আসামি ওয়াহেদ

তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে আত্মগোপনে ছিলেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল ওয়াহেদ মÐল (৭০)।
ছদ্মনামে তাবলিগ দলের সঙ্গে নিয়মিত স্থান পরিবর্তন করতেন। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতেন অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রæয়ারি) রাতে রাজধানীর মুগদা থানার মান্ডা এলাকায় ছেলের বাসায় দেখা করতে গেলে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

তিনি জানান, গ্রেফতার ওয়াহেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আব্দুল ওয়াহেদ জামায়াত ইসলামীর গাইবান্ধা সদরের সদস্য সচিব ছিলেন।
তার বাবা আব্দুল জব্বারও একই মামলার মৃতুদÐপ্রাপ্ত আসামি। জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। পিতার সঙ্গে মিলে আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ভাই দুজনেই শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালান।
র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ১৯৭১ সালের ১ জুন ওয়াহেদ তার বাবা-ভাই ও সঙ্গীসহ পাকিস্তান আর্মিকে নিয়ে গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে হিন্দু সম্পদায়ের উপর হামলা চালায়। ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্নভাবে নির‌্যাতন চালিয়ে পরিবারগুলোকে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করে।

 

এ ঘটনায় ২০০৯ সালে গাইবান্ধা নি¤œ আদালতে আব্দুল ওয়াহেদসহ ৫ জনকে আসামি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করেন আব্দুর রউফ। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়।
বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকেন। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এবং পরবর্তী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হলে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ৫ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদÐের রায় প্রদান করেন। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আব্দুর জব্বার ও রঞ্জু মিয়া মারা যান। আরও দুই আসামি জাছিজার রহমান ও মোন্তাজ আলী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং সাভার এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে।
এরপর তিনি তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় আত্মগোপনে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত তাবলিগ দলের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করতেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতাবিরোধী অপরাধ

তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গা ঢাকা দেন ফাঁসির আসামি ওয়াহেদ

আপডেট সময় ০৩:৪৮:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে আত্মগোপনে ছিলেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল ওয়াহেদ মÐল (৭০)।
ছদ্মনামে তাবলিগ দলের সঙ্গে নিয়মিত স্থান পরিবর্তন করতেন। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতেন অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রæয়ারি) রাতে রাজধানীর মুগদা থানার মান্ডা এলাকায় ছেলের বাসায় দেখা করতে গেলে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রæয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

তিনি জানান, গ্রেফতার ওয়াহেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আব্দুল ওয়াহেদ জামায়াত ইসলামীর গাইবান্ধা সদরের সদস্য সচিব ছিলেন।
তার বাবা আব্দুল জব্বারও একই মামলার মৃতুদÐপ্রাপ্ত আসামি। জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। পিতার সঙ্গে মিলে আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ভাই দুজনেই শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালান।
র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ১৯৭১ সালের ১ জুন ওয়াহেদ তার বাবা-ভাই ও সঙ্গীসহ পাকিস্তান আর্মিকে নিয়ে গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে হিন্দু সম্পদায়ের উপর হামলা চালায়। ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্নভাবে নির‌্যাতন চালিয়ে পরিবারগুলোকে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করে।

 

এ ঘটনায় ২০০৯ সালে গাইবান্ধা নি¤œ আদালতে আব্দুল ওয়াহেদসহ ৫ জনকে আসামি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করেন আব্দুর রউফ। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়।
বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকেন। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এবং পরবর্তী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হলে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ৫ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদÐের রায় প্রদান করেন। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আব্দুর জব্বার ও রঞ্জু মিয়া মারা যান। আরও দুই আসামি জাছিজার রহমান ও মোন্তাজ আলী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং সাভার এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে।
এরপর তিনি তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় আত্মগোপনে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত তাবলিগ দলের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করতেন।