ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টঙ্গী যাবে মেট্রোরেল

যানজটের শহর ঢাকায় রয়েছে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা। গণপরিবহন নৈরাজ্যের কারণে অতিষ্ঠ নগরবাসীর জীবনে সুফল এনে দিয়েছে মেট্রোরেল। ইতোমধ্যেই রাজধানীর আগারগাঁও থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছে মেট্রোরেল। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের যোগাযোগ হয়েছে সহজ। যানজট ও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই গন্ত্যবে যাতায়াত করতে পারছেন এ এলাকার লোকজন। সেই দিক বিবেচনা করে রাজধানী ঢাকায় উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে চালু হওয়া মেট্রোরেল গাজীপুরের টঙ্গী পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানে সফররত অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে সচিব এই কথা জানান।
সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ঢাকা মেট্রোরেল শুরু হয়েছে। তার নির্দেশনায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় জনবান্ধব গণপরিবহন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষেই মেট্রো আসছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে আপ টু মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন সিক্স সম্প্রসারিত হবে। পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল দিয়াবাড়ী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব জানান, লাইন টু এবং সিক্সের দিয়াবাড়ী থেকে টঙ্গী সম্প্রসারণের কাজটুকু আমাদের বাকি। জাপান আমাদের আরও কো-অপারেশন করবে। জাইকা আগ্রহ দেখিয়েছে আমাদের অন্য লাইনগুলো করার ব্যাপারে। সে কারণে জাপানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুরের কার্যক্রম ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এটা শেষ হওয়ার পর আমরা শুরু করব দিয়াবাড়ী থেকে আপ-টু টঙ্গী। প্রধানমন্ত্রীর ষষ্ঠবারের জাপান সফরে দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা এবং চুক্তি সই হয়েছে। যার মধ্যে মেট্রোরেল রয়েছে। এর আওতায় মেট্রোরেলকে দিয়াবাড়ী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। যার অর্থায়ন করবে জাইকা।
জানা যায়, মেট্রোরেলে থাকবে মোট ১৬টি স্টেশন। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিল। তবে এখন উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্তই চালু রয়েছে। পরবর্তীতে তা মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে। প্রথমে চালু হওয়া অংশে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকছে মোট ৯টি। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ী) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা। পুরো মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এ বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেট্রোরেলের। পরদিন থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে স্বপ্নের মেট্রোরেল। ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন বা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত এই মেট্রোরেলের পুরো পথটি নির্মাণ করা হয়েছে ভায়াডাক্টের (মাটির ওপর দিয়ে নির্মিত রাস্তা বা সেতু) ওপর। এর মধ্য দিয়ে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে বাংলাদেশের। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেলের স্বপ্নপূরণ হয়েছে দেশের মানুষের। কার্যত মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে দেশে যোগাযোগে নতুন বিপ্লব ঘটে গেল। মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা চারটি মাইলফলক স্পর্শ করছি। এক. মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। দুই. এই প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। তিন. মেট্রোরেল দূর-নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা পরিচালিত হবে। তার ফলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি এটা তারই একটি অংশ হিসেবে কাজ করবে। চার. বাংলাদেশ দ্রুতগতির ট্রেনের যুগে পদার্পণ করল। এই মেট্রোরেলের ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি হবে ১১০ কিলোমিটার। রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেলের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, আমি নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেব। পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য সংযোগ স্থাপন করব। আমরা ৬টি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা নিয়েছি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।
উত্তরার উত্তর প্রান্তে উদ্বোধন করে মেট্রোর প্রথম যাত্রী হিসেবে তিনি দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও স্টেশনে এসে নামেন। এ সময় আগারগাঁও স্টেশনে সকাল থেকে অপেক্ষমাণ জনসাধারণের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসাধারণও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রায় জনগণের মাথার মুকুটে অহঙ্কারের আরো একটি পালক যোগ হয়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। আর মেট্রোরেল চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ বৈদ্যুতিক, দূর নিয়ন্ত্রিত এবং দ্রুততম যোগাযোগের যুগে প্রবেশ করেছে।
মেট্রোরেল চালু হওয়ায় বছরে ঢাকার ২ লাখ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণও হ্রাস পাবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০ নাগাদ সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবে এবং বছরে ২ লাখ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণও হ্রাস পাবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দিনটি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, ৫০ টাকার স্মারক নোট, খাম এবং ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী টিকিট কাউন্টার থেকে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ইটিকিট ক্রয় করে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হন। তার বোন শেখ রেহানাও টিকিট ক্রয় করে প্রথম যাত্রায় তার সঙ্গী হন।
গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১টা ৫৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে মেট্রোরেলে দিয়াবাড়ী (উত্তরা) স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেনটি বেলা ২টা ১০ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছায়। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এই মেট্রোরেল। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে। মেট্রোরেলে ভ্রমণ শেষে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। প্রথম যাত্রায় ট্রেনটি চালান মরিয়ম আফিজা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

টঙ্গী যাবে মেট্রোরেল

আপডেট সময় ০৩:৪৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

যানজটের শহর ঢাকায় রয়েছে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা। গণপরিবহন নৈরাজ্যের কারণে অতিষ্ঠ নগরবাসীর জীবনে সুফল এনে দিয়েছে মেট্রোরেল। ইতোমধ্যেই রাজধানীর আগারগাঁও থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছে মেট্রোরেল। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের যোগাযোগ হয়েছে সহজ। যানজট ও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই গন্ত্যবে যাতায়াত করতে পারছেন এ এলাকার লোকজন। সেই দিক বিবেচনা করে রাজধানী ঢাকায় উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে চালু হওয়া মেট্রোরেল গাজীপুরের টঙ্গী পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানে সফররত অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে সচিব এই কথা জানান।
সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ঢাকা মেট্রোরেল শুরু হয়েছে। তার নির্দেশনায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় জনবান্ধব গণপরিবহন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষেই মেট্রো আসছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে আপ টু মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন সিক্স সম্প্রসারিত হবে। পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল দিয়াবাড়ী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব জানান, লাইন টু এবং সিক্সের দিয়াবাড়ী থেকে টঙ্গী সম্প্রসারণের কাজটুকু আমাদের বাকি। জাপান আমাদের আরও কো-অপারেশন করবে। জাইকা আগ্রহ দেখিয়েছে আমাদের অন্য লাইনগুলো করার ব্যাপারে। সে কারণে জাপানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুরের কার্যক্রম ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এটা শেষ হওয়ার পর আমরা শুরু করব দিয়াবাড়ী থেকে আপ-টু টঙ্গী। প্রধানমন্ত্রীর ষষ্ঠবারের জাপান সফরে দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা এবং চুক্তি সই হয়েছে। যার মধ্যে মেট্রোরেল রয়েছে। এর আওতায় মেট্রোরেলকে দিয়াবাড়ী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। যার অর্থায়ন করবে জাইকা।
জানা যায়, মেট্রোরেলে থাকবে মোট ১৬টি স্টেশন। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এবং মতিঝিল। তবে এখন উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্তই চালু রয়েছে। পরবর্তীতে তা মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে। প্রথমে চালু হওয়া অংশে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকছে মোট ৯টি। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ী) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা। পুরো মেট্রোরেল পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এ বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেট্রোরেলের। পরদিন থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে স্বপ্নের মেট্রোরেল। ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন বা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত এই মেট্রোরেলের পুরো পথটি নির্মাণ করা হয়েছে ভায়াডাক্টের (মাটির ওপর দিয়ে নির্মিত রাস্তা বা সেতু) ওপর। এর মধ্য দিয়ে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে বাংলাদেশের। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেলের স্বপ্নপূরণ হয়েছে দেশের মানুষের। কার্যত মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে দেশে যোগাযোগে নতুন বিপ্লব ঘটে গেল। মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা চারটি মাইলফলক স্পর্শ করছি। এক. মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। দুই. এই প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। তিন. মেট্রোরেল দূর-নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা পরিচালিত হবে। তার ফলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি এটা তারই একটি অংশ হিসেবে কাজ করবে। চার. বাংলাদেশ দ্রুতগতির ট্রেনের যুগে পদার্পণ করল। এই মেট্রোরেলের ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি হবে ১১০ কিলোমিটার। রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেলের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, আমি নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেব। পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য সংযোগ স্থাপন করব। আমরা ৬টি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা নিয়েছি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।
উত্তরার উত্তর প্রান্তে উদ্বোধন করে মেট্রোর প্রথম যাত্রী হিসেবে তিনি দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও স্টেশনে এসে নামেন। এ সময় আগারগাঁও স্টেশনে সকাল থেকে অপেক্ষমাণ জনসাধারণের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসাধারণও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রায় জনগণের মাথার মুকুটে অহঙ্কারের আরো একটি পালক যোগ হয়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। আর মেট্রোরেল চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ বৈদ্যুতিক, দূর নিয়ন্ত্রিত এবং দ্রুততম যোগাযোগের যুগে প্রবেশ করেছে।
মেট্রোরেল চালু হওয়ায় বছরে ঢাকার ২ লাখ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণও হ্রাস পাবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০ নাগাদ সম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবে এবং বছরে ২ লাখ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণও হ্রাস পাবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দিনটি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, ৫০ টাকার স্মারক নোট, খাম এবং ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী টিকিট কাউন্টার থেকে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ইটিকিট ক্রয় করে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হন। তার বোন শেখ রেহানাও টিকিট ক্রয় করে প্রথম যাত্রায় তার সঙ্গী হন।
গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১টা ৫৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে মেট্রোরেলে দিয়াবাড়ী (উত্তরা) স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেনটি বেলা ২টা ১০ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছায়। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এই মেট্রোরেল। দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে। মেট্রোরেলে ভ্রমণ শেষে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। প্রথম যাত্রায় ট্রেনটি চালান মরিয়ম আফিজা।