ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন, রেজা-নূরের দল যে কারণে বেরিয়ে গেল

নয় মাসের মাথায় ভেঙে গেল সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ এ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শনিবার রাজধানীর পল্টনে দলটির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মাসিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দলটির নেতারা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের কাছ থেকে বিরূপ আচরণ ও যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে একক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবেন তারা। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেও থাকবেন। পালটা অভিযোগ করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানান, গণঅধিকার পরিষদের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ব্যাপারে আগে থেকেই অস্বস্তি ছিল। আজ মঞ্চের বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টি এজেন্ডায়ও রাখা হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর যুগান্তরকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চে এখন থেকে গণঅধিকার পরিষদ নেই। জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু কারণ তো নিশ্চয় আছে। তবে চলমান আন্দোলকে নিজেদের জায়গা থেকে আরও বেগবান করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এককভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করব। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেও থাকব।

তিনি আরও বলেন, বাম, ডান দলমত নির্বিশেষে মানুষের একটা প্রত্যাশা যে, আমরা শুধু ছয়টা সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সবাইকে নিয়ে একটা বৃহৎ আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাই। যে কারণে চেষ্টা করছি নিজেদের সেই জায়গা থেকে একটা বৃহৎ ভূমিকায় নেওয়ার। যেটা গণতন্ত্র মঞ্চে থাকলে চাইলেই নিজেদের মতো করে করা যায় না। এজন্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

জানা গেছে, মঞ্চ গঠনের শুরু থেকেই গণঅধিকার পরিষদের তরুণ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেওয়া, সমাবেশে অংশগ্রহণসহ অনেক বিষয়ে অসন্তোষ ছিল। বিগত রমজানে এই অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়।

গণঅধিকার পরিষদের জোট ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের বেশ কিছু অরাজনৈতিক বক্তব্য, রাজনৈতিক তৎপরতা এবং মঞ্চের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ব্যাপারে শরিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি ছিল, আপত্তি আছে। এ নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনাও আছে। এসব আমাদের মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। রোববার গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের অসাংগঠনিক আচরণসহ আরও বিষয় মিলে আলোচনা হওয়ার কথা। সর্বশেষ ২ মে অনুষ্ঠিত মঞ্চের বৈঠকে তাদের নেতা রাশেদ খানসহ তিনজন এসেছিলেন। ওই সময় এ এজেন্ডা ওদের সামনেই ঠিক করা হয়েছিল।

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ যুগান্তরকে বলেন, এখন থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো মূলত বাম ধারার রাজনীতি করতে চায়। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদ বাম-ডান নয়, দেশের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে চায়। এই জায়গায় গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে মঞ্চের মতপার্থক্য।

গত বছরের ৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাত দলীয় জোটের গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়। সে সময় জোটে ছিল- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাষানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। ডিসেম্বর থেকে এ জোট বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে। গণঅধিকার পরিষদ বেরিয়ে যাওয়ায় গণতন্ত্র মঞ্চে আর ছয়টি দল থাকল।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন, রেজা-নূরের দল যে কারণে বেরিয়ে গেল

আপডেট সময় ০৪:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ মে ২০২৩

নয় মাসের মাথায় ভেঙে গেল সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ এ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শনিবার রাজধানীর পল্টনে দলটির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মাসিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দলটির নেতারা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের কাছ থেকে বিরূপ আচরণ ও যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে একক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবেন তারা। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেও থাকবেন। পালটা অভিযোগ করে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানান, গণঅধিকার পরিষদের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ব্যাপারে আগে থেকেই অস্বস্তি ছিল। আজ মঞ্চের বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টি এজেন্ডায়ও রাখা হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর যুগান্তরকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চে এখন থেকে গণঅধিকার পরিষদ নেই। জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু কারণ তো নিশ্চয় আছে। তবে চলমান আন্দোলকে নিজেদের জায়গা থেকে আরও বেগবান করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে এককভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করব। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনেও থাকব।

তিনি আরও বলেন, বাম, ডান দলমত নির্বিশেষে মানুষের একটা প্রত্যাশা যে, আমরা শুধু ছয়টা সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সবাইকে নিয়ে একটা বৃহৎ আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাই। যে কারণে চেষ্টা করছি নিজেদের সেই জায়গা থেকে একটা বৃহৎ ভূমিকায় নেওয়ার। যেটা গণতন্ত্র মঞ্চে থাকলে চাইলেই নিজেদের মতো করে করা যায় না। এজন্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

জানা গেছে, মঞ্চ গঠনের শুরু থেকেই গণঅধিকার পরিষদের তরুণ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেওয়া, সমাবেশে অংশগ্রহণসহ অনেক বিষয়ে অসন্তোষ ছিল। বিগত রমজানে এই অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়।

গণঅধিকার পরিষদের জোট ত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের বেশ কিছু অরাজনৈতিক বক্তব্য, রাজনৈতিক তৎপরতা এবং মঞ্চের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ব্যাপারে শরিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি ছিল, আপত্তি আছে। এ নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনাও আছে। এসব আমাদের মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। রোববার গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের অসাংগঠনিক আচরণসহ আরও বিষয় মিলে আলোচনা হওয়ার কথা। সর্বশেষ ২ মে অনুষ্ঠিত মঞ্চের বৈঠকে তাদের নেতা রাশেদ খানসহ তিনজন এসেছিলেন। ওই সময় এ এজেন্ডা ওদের সামনেই ঠিক করা হয়েছিল।

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ যুগান্তরকে বলেন, এখন থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো মূলত বাম ধারার রাজনীতি করতে চায়। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদ বাম-ডান নয়, দেশের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে চায়। এই জায়গায় গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে মঞ্চের মতপার্থক্য।

গত বছরের ৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাত দলীয় জোটের গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়। সে সময় জোটে ছিল- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাষানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। ডিসেম্বর থেকে এ জোট বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে। গণঅধিকার পরিষদ বেরিয়ে যাওয়ায় গণতন্ত্র মঞ্চে আর ছয়টি দল থাকল।