ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তিন খণ্ড সুদান

দুই জেনারেলের ক্ষমতা দখল দ্বন্দ্বে ৪ দিন থেকেই তুমুল লড়াই চলছে সুদানে। সিংহাসনকে নিজের কুক্ষিগত করতে সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আদা সামরিক বাহিনী আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলো দুজনই মরিয়া। কিন্তু সামরিক শাসনকে দূরে সরিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে দেশটির আরেকটি পক্ষ। সাধারণ জনগন, রাজনৈতিক নেতা এবং কূটনীতিবিদরাসহ দেশটির অধিকার কর্মীরা। তৃতীয় এই পক্ষের চাওয়া গণতন্ত্র। ফলে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী সুদান এখন ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তিন খণ্ডে বিভক্ত। এএফপি।

 

স্বর্ণসমৃদ্ধ মাটি, লোহিত সাগরের সম্পদের লোভে গত এক দশকে ক্ষমতার স্বাদ নিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির থেকে শুরু হয়ে বর্তমান দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বে এসে ঠেকেছে। বুরহান এবং দাগলো কর্তৃক ২০২১ সালের অক্টোবরের বশিরকে সরাতে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় দুই বছর পর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবার একে অপরের দিকে ঘুরে গেছে। গণতন্ত্র বিরোধী এই দুই জেনারেল দেশটিতে এক রকম যুদ্ধই শুরু করে দিয়েছে। দাগলো (হেমেতি নামেই বেশি পরিচিত) বলেছেন, ‘আমি বুরহানকে কুকুরের মতো শিকার করব।’ এদিকে বুরহান বলেছেন, ‘প্রতিটি যুদ্ধের সমাপ্তি হয় আলোচনার মাধ্যমে। এমনকি প্রতপক্ষ পরাজিত হলেও।’

এখন প্রশ্ন হলো, কবে-কোথা থেকে শুরু হলো দেশটির এমন পরিবেশ? প্রায় ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থি স্বৈরশাসক ওমর আল-বশির সুদানে জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধের ঘোষণা এবং অন্যান্য কঠোরতা ব্যবস্থা চালু করার পর থেকেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে। সে সময় শিশুসহ ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এছাড়াও শতাধিক আহত গ্রেফতার হয়। প্রতিরোধ ঠেকাতে সেসময়ই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহায়তায় র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে একটি আধাসামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠিত করেন বশির। পরে এই আরএসএফই তার পতনের কারণ হয়ে ওঠে।

আরএসএফের প্রধান হেমেতি একজন নিরক্ষর দারফুরি যুদ্ধবাজ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। বশিরের অনুগত থাকতে থাকতেই একসময় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। যদিও খার্তুমে হেমেতিকে তখনো বহিরাগত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আরএসএফই ছিল বশিরের শক্তির মূল অংশ। ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এরপর হেমেতি এবং বুরহান উভয়ে মিলে ২০২১-এ সেনা অভ্যুত্থান ঘটান। বশিরকে অপসারণের পরপরই বুরহান সেনাবাহিনীর প্রধান হন। কিন্তু আরএসএফও একটি নিজস্ব সত্তা হিসাবে সামনে আসতে শুরু করে। আর এখন বাহিনীটি সুদানে এক রকম স্বাধীন ভাবেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চালাচ্ছে। দুই বৃহত্তর শত্রু হিসাবে সুদানের সিংহাসন পাওয়া নেশায় তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

দুই জেনারেলের এ দ্বন্দ্বে খার্তুম ভূতের শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী খার্তুম। দল বেঁধে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। নিরপরাধ জনগণ এখন ক্রসফায়ার. আর্টিলারি শেল, বিমান ও বন্দুক হামলা থেকে বাঁচতে চায়। সামরিক শাসন চায় না। দেশের বেসামরিক নেতৃত্বের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন চান তার। সুদানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিহাদ মাশামাউন এএফপিকে বলেন, বশির শাসনের সামরিক কর্মকর্তাদের এভাবে সুদানের অশান্তি সৃষ্টি করা উচিত নয়। সুদানের গণতন্ত্র উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক হস্তক্ষেপ দরকার। তিনি আরও বলেন, এক দশক আগে বশিরের করা একটি পদক্ষেপ জনগণকে গণতন্ত্র থেকে দূরে রাখার জন্য শৃঙ্খল তৈরি করেছে। যা সুদানকে আরও অশান্তির গভীরে নিয়ে গেছে।। সারা আবদেলগালিল (একজন ডাক্তার এবং লন্ডনে বসবাসরত সুদানের বিরোধী দলের দীর্ঘদিনের সদস্য) বলেন, যতই সহিংসতা হোক শেষ পর্যন্ত সুদানে গণতন্ত্র আসবে। এটা ঘটবেই। কারণ বিপ্লব প্রতিটি ঘরেই আছে। এতে হয়তো কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। সুদানের জনগণকে অনেক মূল্য চুকাতে হতে পারে। আমি একজন ডাক্তার এবং আমি দেখছি বাচ্চাদের হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু তরুণদের মধ্যে গণতন্ত্র পাওয়ার জন্য সচেতনতা রয়েছে।

ডিসেম্বরেই দেশটিকে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় একটি কাঠামো চুক্তি উভয় জেনারেল স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার আর বাস্তবায়ন হয়নি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তিন খণ্ড সুদান

আপডেট সময় ০৪:৩৫:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

দুই জেনারেলের ক্ষমতা দখল দ্বন্দ্বে ৪ দিন থেকেই তুমুল লড়াই চলছে সুদানে। সিংহাসনকে নিজের কুক্ষিগত করতে সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আদা সামরিক বাহিনী আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলো দুজনই মরিয়া। কিন্তু সামরিক শাসনকে দূরে সরিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে দেশটির আরেকটি পক্ষ। সাধারণ জনগন, রাজনৈতিক নেতা এবং কূটনীতিবিদরাসহ দেশটির অধিকার কর্মীরা। তৃতীয় এই পক্ষের চাওয়া গণতন্ত্র। ফলে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী সুদান এখন ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তিন খণ্ডে বিভক্ত। এএফপি।

 

স্বর্ণসমৃদ্ধ মাটি, লোহিত সাগরের সম্পদের লোভে গত এক দশকে ক্ষমতার স্বাদ নিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির থেকে শুরু হয়ে বর্তমান দুই জেনারেলের দ্বন্দ্বে এসে ঠেকেছে। বুরহান এবং দাগলো কর্তৃক ২০২১ সালের অক্টোবরের বশিরকে সরাতে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় দুই বছর পর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবার একে অপরের দিকে ঘুরে গেছে। গণতন্ত্র বিরোধী এই দুই জেনারেল দেশটিতে এক রকম যুদ্ধই শুরু করে দিয়েছে। দাগলো (হেমেতি নামেই বেশি পরিচিত) বলেছেন, ‘আমি বুরহানকে কুকুরের মতো শিকার করব।’ এদিকে বুরহান বলেছেন, ‘প্রতিটি যুদ্ধের সমাপ্তি হয় আলোচনার মাধ্যমে। এমনকি প্রতপক্ষ পরাজিত হলেও।’

এখন প্রশ্ন হলো, কবে-কোথা থেকে শুরু হলো দেশটির এমন পরিবেশ? প্রায় ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থি স্বৈরশাসক ওমর আল-বশির সুদানে জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধের ঘোষণা এবং অন্যান্য কঠোরতা ব্যবস্থা চালু করার পর থেকেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে। সে সময় শিশুসহ ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এছাড়াও শতাধিক আহত গ্রেফতার হয়। প্রতিরোধ ঠেকাতে সেসময়ই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহায়তায় র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে একটি আধাসামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠিত করেন বশির। পরে এই আরএসএফই তার পতনের কারণ হয়ে ওঠে।

আরএসএফের প্রধান হেমেতি একজন নিরক্ষর দারফুরি যুদ্ধবাজ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। বশিরের অনুগত থাকতে থাকতেই একসময় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। যদিও খার্তুমে হেমেতিকে তখনো বহিরাগত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আরএসএফই ছিল বশিরের শক্তির মূল অংশ। ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এরপর হেমেতি এবং বুরহান উভয়ে মিলে ২০২১-এ সেনা অভ্যুত্থান ঘটান। বশিরকে অপসারণের পরপরই বুরহান সেনাবাহিনীর প্রধান হন। কিন্তু আরএসএফও একটি নিজস্ব সত্তা হিসাবে সামনে আসতে শুরু করে। আর এখন বাহিনীটি সুদানে এক রকম স্বাধীন ভাবেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চালাচ্ছে। দুই বৃহত্তর শত্রু হিসাবে সুদানের সিংহাসন পাওয়া নেশায় তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

দুই জেনারেলের এ দ্বন্দ্বে খার্তুম ভূতের শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী খার্তুম। দল বেঁধে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। নিরপরাধ জনগণ এখন ক্রসফায়ার. আর্টিলারি শেল, বিমান ও বন্দুক হামলা থেকে বাঁচতে চায়। সামরিক শাসন চায় না। দেশের বেসামরিক নেতৃত্বের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন চান তার। সুদানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিহাদ মাশামাউন এএফপিকে বলেন, বশির শাসনের সামরিক কর্মকর্তাদের এভাবে সুদানের অশান্তি সৃষ্টি করা উচিত নয়। সুদানের গণতন্ত্র উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক হস্তক্ষেপ দরকার। তিনি আরও বলেন, এক দশক আগে বশিরের করা একটি পদক্ষেপ জনগণকে গণতন্ত্র থেকে দূরে রাখার জন্য শৃঙ্খল তৈরি করেছে। যা সুদানকে আরও অশান্তির গভীরে নিয়ে গেছে।। সারা আবদেলগালিল (একজন ডাক্তার এবং লন্ডনে বসবাসরত সুদানের বিরোধী দলের দীর্ঘদিনের সদস্য) বলেন, যতই সহিংসতা হোক শেষ পর্যন্ত সুদানে গণতন্ত্র আসবে। এটা ঘটবেই। কারণ বিপ্লব প্রতিটি ঘরেই আছে। এতে হয়তো কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। সুদানের জনগণকে অনেক মূল্য চুকাতে হতে পারে। আমি একজন ডাক্তার এবং আমি দেখছি বাচ্চাদের হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু তরুণদের মধ্যে গণতন্ত্র পাওয়ার জন্য সচেতনতা রয়েছে।

ডিসেম্বরেই দেশটিকে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় একটি কাঠামো চুক্তি উভয় জেনারেল স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার আর বাস্তবায়ন হয়নি।