ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে তারা’

তদন্ত কমিটির ডাকে ক্যাম্পাসে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ছাত্রী। তিনি তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকার শেষে তিনি বলেন- আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্তরা।

বুধবার তৃতীয়বারের মতো তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ছাত্রী। এ সময় তার বাবা আতাউর রহমানও সঙ্গে ছিলেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীও বিচার পেতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা ও তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রাখতে চান। অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। কোনো প্রকার ভয় না পেয়ে নিজের অবস্থানে অটল রয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার শেষে বিকাল ৫টার দিকে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনোরকম ভয় পাইনি। বরং তাদের সামনেই (অভিযুক্তদের) সব ঘটনা বলেছি। তদন্ত কমিটির কাছে আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। এ সময় তারা আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে; কিন্তু আমি যা সত্য তাই বলেছি। এছাড়াও তারা কান্না-কান্না ভাব নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে। তদন্ত কমিটির কাছে আমি এ ঘটনার সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেছি। আমি সঠিক বিচার চাই, কারণ এমন ঘটনা যেন আর কখনো কারো সঙ্গে না ঘটে।

বেলা ১২টা থেকে দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেয় হল তদন্ত কমিটি। এ সময় ভুক্তভোগী ঘটনার তেরো পাতার লিখিত বর্ণনা নিজ হাতে লিখে স্বাক্ষর করে জমা দেন কমিটির কাছে।

হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হক বলেন, তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগীকে আজও ডাকা হয়। আমরা তার সাথে বিস্তারিত কথা বলেছি। অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলবো। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাই না।

হল কমিটির সাক্ষাতকার শেষে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের এক কক্ষে মুখোমুখি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডলের কক্ষে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, হালিমা খাতুন উর্মি ও ইশরাত জাহান মীমকে উপস্থিত করানো হয়।

এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. দেবাশীষ শর্মা, ড. মুর্শিদ আলম ও কর্মকর্তা আলীবদ্দী খান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও মুখ খুলেনি অভিযুক্তরা। অভিযুক্তরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে ঘটনার ১২ দিনেও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা এখনো ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। হার্ডডিস্কে সমস্যা হওয়ায় ফুটেজ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।

আইসিটি সেলের প্রধান ড. আহসানুল আম্বিয়া বলেন, সিসিটিভির বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট থাকায় আমরা ফুটেজ সংগ্রহে হল কর্তৃপক্ষের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেছি। প্রশাসন যদি মনে করে প্রফেশনাল রিকভারি টিমকে জানাতে পারে। তবে আমার যতটুকু ধারণা রিকভারি করার আশা খুবই কম।

প্রসঙ্গত, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে ৪ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীর ভাষ্য মতে, শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার ৭-৮ জন অনুসারী নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি ও ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

‘আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে তারা’

আপডেট সময় ০৪:২২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

তদন্ত কমিটির ডাকে ক্যাম্পাসে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ছাত্রী। তিনি তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকার শেষে তিনি বলেন- আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্তরা।

বুধবার তৃতীয়বারের মতো তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ছাত্রী। এ সময় তার বাবা আতাউর রহমানও সঙ্গে ছিলেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীও বিচার পেতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা ও তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রাখতে চান। অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। কোনো প্রকার ভয় না পেয়ে নিজের অবস্থানে অটল রয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকার শেষে বিকাল ৫টার দিকে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি কোনোরকম ভয় পাইনি। বরং তাদের সামনেই (অভিযুক্তদের) সব ঘটনা বলেছি। তদন্ত কমিটির কাছে আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। এ সময় তারা আমার হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে; কিন্তু আমি যা সত্য তাই বলেছি। এছাড়াও তারা কান্না-কান্না ভাব নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে। তদন্ত কমিটির কাছে আমি এ ঘটনার সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেছি। আমি সঠিক বিচার চাই, কারণ এমন ঘটনা যেন আর কখনো কারো সঙ্গে না ঘটে।

বেলা ১২টা থেকে দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেয় হল তদন্ত কমিটি। এ সময় ভুক্তভোগী ঘটনার তেরো পাতার লিখিত বর্ণনা নিজ হাতে লিখে স্বাক্ষর করে জমা দেন কমিটির কাছে।

হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হক বলেন, তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগীকে আজও ডাকা হয়। আমরা তার সাথে বিস্তারিত কথা বলেছি। অভিযুক্তদের সঙ্গেও কথা বলবো। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাই না।

হল কমিটির সাক্ষাতকার শেষে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের এক কক্ষে মুখোমুখি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডলের কক্ষে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, হালিমা খাতুন উর্মি ও ইশরাত জাহান মীমকে উপস্থিত করানো হয়।

এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. দেবাশীষ শর্মা, ড. মুর্শিদ আলম ও কর্মকর্তা আলীবদ্দী খান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও মুখ খুলেনি অভিযুক্তরা। অভিযুক্তরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে ঘটনার ১২ দিনেও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা এখনো ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। হার্ডডিস্কে সমস্যা হওয়ায় ফুটেজ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।

আইসিটি সেলের প্রধান ড. আহসানুল আম্বিয়া বলেন, সিসিটিভির বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট থাকায় আমরা ফুটেজ সংগ্রহে হল কর্তৃপক্ষের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেছি। প্রশাসন যদি মনে করে প্রফেশনাল রিকভারি টিমকে জানাতে পারে। তবে আমার যতটুকু ধারণা রিকভারি করার আশা খুবই কম।

প্রসঙ্গত, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে ৪ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীর ভাষ্য মতে, শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার ৭-৮ জন অনুসারী নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি ও ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়।