ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারো উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে পায়রায়

কয়লা না থাকায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আবারো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডলার-সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এখন যে কয়লা আছে, তা দিয়ে একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী ২ জুন পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কয়লা আসার কথা জুনের শেষে। তখন আবার উৎপাদনে যাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বাড়তে পারে লোডশেডিং।

এর আগে ডলার-সংকটে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন উৎপাদনে রয়েছে। পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট মিলে উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই কেন্দ্র দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে ২ জুন পর্যন্ত চলতে পারে। এরপর আগামী ৩ জুন থেকে প্রায় এক মাসের জন্য পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিসিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার সরবরাহের চেষ্টা করছে। এ মাসের মধ্যেই ১০ কোটি ডলার ব্যবস্থা করার আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে। এটি দিয়ে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে রাজি করানো হচ্ছে। এতে তারা নতুন করে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সেই হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। এটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না।

জ্বালানিসংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর আবার উৎপাদনে গেছে কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৬ মে রাত ৯টা ১০ মিনিটে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ–ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। এর আগে কয়লার অভাবে ১৪ জানুয়ারি থেকে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মূলত, ডলার-সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে কয়লার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এক মাস পর উৎপাদনে ফিরেছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত ডিসেম্বরে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।

বিআইএফপিসিএলে উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, আপাতত কয়লার সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও ২৫ দিনের কয়লা মজুত আছে। নতুন করে আরও কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

আবারো উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে পায়রায়

আপডেট সময় ০৪:১৭:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

কয়লা না থাকায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আবারো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডলার-সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এখন যে কয়লা আছে, তা দিয়ে একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী ২ জুন পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কয়লা আসার কথা জুনের শেষে। তখন আবার উৎপাদনে যাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বাড়তে পারে লোডশেডিং।

এর আগে ডলার-সংকটে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন উৎপাদনে রয়েছে। পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট মিলে উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই কেন্দ্র দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে ২ জুন পর্যন্ত চলতে পারে। এরপর আগামী ৩ জুন থেকে প্রায় এক মাসের জন্য পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিসিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার সরবরাহের চেষ্টা করছে। এ মাসের মধ্যেই ১০ কোটি ডলার ব্যবস্থা করার আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে। এটি দিয়ে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে রাজি করানো হচ্ছে। এতে তারা নতুন করে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সেই হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। এটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না।

জ্বালানিসংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর আবার উৎপাদনে গেছে কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৬ মে রাত ৯টা ১০ মিনিটে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ–ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। এর আগে কয়লার অভাবে ১৪ জানুয়ারি থেকে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মূলত, ডলার-সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে কয়লার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এক মাস পর উৎপাদনে ফিরেছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত ডিসেম্বরে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।

বিআইএফপিসিএলে উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, আপাতত কয়লার সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও ২৫ দিনের কয়লা মজুত আছে। নতুন করে আরও কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।