ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্দোলন করে কেউ কিছু করতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই আন্দোলন সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না। দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি কেউ রুখতে পারবে না।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা আস্থা রাখতে পারেন যে, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। কারণ আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই জনগণ যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো’ এবং ‘পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো’।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।

তিনি আবারো সবাইকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় বিপদের শঙ্কা রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই। এই গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।

প্রধানমন্ত্রী সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশে প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং পূর্বাচল থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে এবং এলিভেটেড উভয় সুবিধা সংবলিত ৩১ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট উদ্বোধন করা হবে এবং ডিএমটিসিএল এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।

এমআরটি লাইন-১ এর দুটি অংশ থাকবে। একটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (বিমানবন্দর রুট) ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার অংশ। এটি হবে ভূগর্ভস্থ এবং এতে ১২টি স্টেশন থাকবে। অপর অংশটি নতুনবাজার থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইনসহ পূর্বাচল পর্যন্ত (পূর্বাচল রুট)। এতে সাতটি স্টেশন থাকবে। অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুনবাজার এবং নদ্দা স্টেশন হবে ভূগর্ভস্থ ।

বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজের জন্য ৫২ হাজার ৫৬১.৪৩ কোটি টাকার ব্যয়ভার বহন করবে। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্প সহায়তা (পিএ) হিসেবে দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০.৩২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশে জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুছি তোমোহাইড। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে এমআরটি লাইন-১ এর ওপর একটি ভিডিও চিত্র এবং প্রকল্পের ওপর এটুআই নির্মিত একটি ‘থিম সং’ পরিবেশিত হয়।

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এত বছর মানুষের জন্য কাজ করায় এবং উপকার করায় তারা আমাদের ভোট দিচ্ছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে সমর্থ হয়েছি। এ পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি, জনগণের সেবক। আমরা জনগণের ভাগ্য তৈরি করতে এসেছি, তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। আমরা জনগণকে দিতে এসেছি, তাই এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে না।’

তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকার যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল চালু করা। আমরা সেটা করেছি। আওয়ামী লীগ কথা দিলে কথা রাখে। আমরা সেটা রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ নির্মাণকাজ করতে গিয়ে কোনো পরিষেবা স্থানান্তর করতে হবে না। সবকিছু স্বাভাবিক রেখেই এই পাতাল রেলের নির্মাণকাজ চলবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হলো। এর আগে মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি। সেটি ওপর দিয়ে যাবে। এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে পাতাল রেল। বাংলাদেশে এ ধরনের আয়োজন প্রথম।’

পাতাল রেলের নির্মাণকাজ করার সময় জনগণের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাটির নিচে শব্দহীন বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ করা হবে। তাই ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মাটির নিচে কাজ চলছে। প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব হবে এবং জনগণের যেন কোনো অনুবিধা না হয় নির্মাণ কাজে সেটিরও খেয়াল রাখা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাজধানীতে মোট ছয়টি মেট্রোরেল হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লাইনগুলো করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিজিবিলিটি স্টাডিও শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে তিনটি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে অনেক কাজ হচ্ছে। তিনটি ফাস্ট ট্র্যাকসহ ৪৬টি ছোট বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন করা হবে, যেটাতে জাপান বিনিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন শহর পূর্বাচল গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পূর্বাচল একটি স্মার্ট সিটি হবে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরকে আমরা স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। সারা দেশে একই দিনে ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ করেছে, যেটা বোধ হয় কখনো কেউ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত মেট্রোরেলের কাজে যুক্ত সাত জাপানি পরামর্শককে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তাদের স্মরণে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে উত্তরা দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়েছে, যা পরবর্তিতে এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ : নর্দার্ন রুটের নতুনবাজার আন্তঃলাইন সংযোগ স্টেশনে স্থানান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

ওই ঘটনার পরও জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবে ও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

আন্দোলন করে কেউ কিছু করতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় ০৪:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। কাজেই আন্দোলন সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না। দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি কেউ রুখতে পারবে না।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা আস্থা রাখতে পারেন যে, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। কারণ আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই জনগণ যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

তিনি বলেন, পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো’ এবং ‘পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো’।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।

তিনি আবারো সবাইকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় বিপদের শঙ্কা রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই। এই গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।

প্রধানমন্ত্রী সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশে প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং পূর্বাচল থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে এবং এলিভেটেড উভয় সুবিধা সংবলিত ৩১ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট উদ্বোধন করা হবে এবং ডিএমটিসিএল এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।

এমআরটি লাইন-১ এর দুটি অংশ থাকবে। একটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (বিমানবন্দর রুট) ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার অংশ। এটি হবে ভূগর্ভস্থ এবং এতে ১২টি স্টেশন থাকবে। অপর অংশটি নতুনবাজার থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইনসহ পূর্বাচল পর্যন্ত (পূর্বাচল রুট)। এতে সাতটি স্টেশন থাকবে। অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুনবাজার এবং নদ্দা স্টেশন হবে ভূগর্ভস্থ ।

বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজের জন্য ৫২ হাজার ৫৬১.৪৩ কোটি টাকার ব্যয়ভার বহন করবে। এর মধ্যে জাইকা প্রকল্প সহায়তা (পিএ) হিসেবে দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০.৩২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশে জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুছি তোমোহাইড। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে এমআরটি লাইন-১ এর ওপর একটি ভিডিও চিত্র এবং প্রকল্পের ওপর এটুআই নির্মিত একটি ‘থিম সং’ পরিবেশিত হয়।

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এত বছর মানুষের জন্য কাজ করায় এবং উপকার করায় তারা আমাদের ভোট দিচ্ছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে সমর্থ হয়েছি। এ পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি, জনগণের সেবক। আমরা জনগণের ভাগ্য তৈরি করতে এসেছি, তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। আমরা জনগণকে দিতে এসেছি, তাই এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে না।’

তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকার যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল চালু করা। আমরা সেটা করেছি। আওয়ামী লীগ কথা দিলে কথা রাখে। আমরা সেটা রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১ নির্মাণকাজ করতে গিয়ে কোনো পরিষেবা স্থানান্তর করতে হবে না। সবকিছু স্বাভাবিক রেখেই এই পাতাল রেলের নির্মাণকাজ চলবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হলো। এর আগে মেট্রোরেল উপহার দিয়েছি। সেটি ওপর দিয়ে যাবে। এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে পাতাল রেল। বাংলাদেশে এ ধরনের আয়োজন প্রথম।’

পাতাল রেলের নির্মাণকাজ করার সময় জনগণের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাটির নিচে শব্দহীন বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ করা হবে। তাই ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মাটির নিচে কাজ চলছে। প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব হবে এবং জনগণের যেন কোনো অনুবিধা না হয় নির্মাণ কাজে সেটিরও খেয়াল রাখা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাজধানীতে মোট ছয়টি মেট্রোরেল হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লাইনগুলো করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিজিবিলিটি স্টাডিও শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে তিনটি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে অনেক কাজ হচ্ছে। তিনটি ফাস্ট ট্র্যাকসহ ৪৬টি ছোট বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন করা হবে, যেটাতে জাপান বিনিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন শহর পূর্বাচল গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পূর্বাচল একটি স্মার্ট সিটি হবে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরকে আমরা স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। সারা দেশে একই দিনে ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ করেছে, যেটা বোধ হয় কখনো কেউ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত মেট্রোরেলের কাজে যুক্ত সাত জাপানি পরামর্শককে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তাদের স্মরণে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে উত্তরা দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়েছে, যা পরবর্তিতে এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ : নর্দার্ন রুটের নতুনবাজার আন্তঃলাইন সংযোগ স্টেশনে স্থানান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

ওই ঘটনার পরও জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবে ও দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।