ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

অস্থির দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। রেকর্ড পরিমাণ আমদানির পরও কাটছে না সঙ্কট। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানো হলেও স্থিতিশীল হচ্ছে না বাজার। এ অবস্থায় দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বাজারে এখন ভোজ্যতেলের কোনো সঙ্কট না থাকলেও সিন্ডিকেটের কবলে বাড়ছে দাম। মিলগুলোর কারসাজির কারণে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বেড়েছে। এতে করে এক লিটার তেলের দাম হয়েছে ১৯৯ টাকা, যা আগে ১৮৭ টাকা ছিল। তবে নতুন দামের তেল এখনো বাজারে আসেনি। কিন্তু তার আগেই ভোক্তার কাছে পুরোনো দামের তেল বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। অথচ বোতলের গায়ে পুরোনো দামই লেখা। এদিকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল তো সরকার নির্ধারিত নতুন দামের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। খুচরার সঙ্গে পাইকারি বিক্রেতারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা পুরোনো তেলে লিটারপ্রতি ৩-৮ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতলে ১৮৭ টাকা লেখা। অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০-১৯৫ টাকায়। আর ৩৭৪ টাকার দুই লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৩৯০ এবং ৯০৬ টাকার পাঁচ লিটার তেল ৯১৫-৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ৩ মে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ১৮৭ টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৬০ টাকা, যা ছিল ৯০৬ টাকা। এর মানে নতুন করে বাড়ছে ৫৪ টাকা। অন্যদিকে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম হচ্ছে ১৭৬ টাকা। এতদিন বিক্রি হয়েছে ১৬৭ টাকায়। আর প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। খোলা সয়াবিন ১৮০ ও পাম তেল ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা সরকার নির্ধারিত নতুন দামের চেয়েও বেশি। এ বিষয়ে তালতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ‘সততা স্টোরে’র আমজাদ হোসেন বলেন, তেল নিয়ে কোম্পানি কি শুরু করেছে তা কেউ জানে না। তারা তেল দিচ্ছে না। এছাড়া পুরোনো তেল বিক্রি করছে বাড়তি দামে। তিনি জানান, কোম্পানি অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। বলছে, নতুন দামের তেল আরও কয়েকদিন পর বাজারে আসবে। এই ব্যবসায়ী বলেন, শেষ রোববার পাঁচ লিটারের চারটি বোতলের এক কার্টন তেল পরিবেশকদের কাছ থেকে তিন হাজার ৫২০ টাকায় কিনেছিলাম। পরের দিন কিনেছি তিন হাজার ৫৬০ টাকায়। আমরা বেশি দামে কিনে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি। কোম্পানি রশিদও দিচ্ছে না। দিলেও নতুন নির্ধারণ করা দাম লিখছে।

শুধু আমজাদ হোসেন নয়, অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন দাম বাড়ানোর পরও তারা পরিবেশকদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছে না। খোলা তেলের দাম নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।

পাড়া-মহল্লা ও বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও দাম কমতে সময় লাগে। তবে দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলেই পাইকারি ব্যবসায়ী ও পরিবেশকেরা সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দেন। এতে তাদের বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে তেল বিক্রি করতে হয়। যে কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের বাকবিত-ায় জড়াতে হচ্ছে। রামপুরা বাজারের এক মুদি দোকানি বলেন, আমার কাছে দাম বাড়ার ঘোষণায় প্রতি বোতলের (৫ লিটার) দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে রাখা হলো। অথচ এগুলো পুরোনো দামের তেল। আমি যখন ক্রেতার কাছে বেশি চাইছি, তখন গ-গোল বেধে যাচ্ছে। এ জন্য তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি বলছে, আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের দাম প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ ২০৫ টাকায় উঠেছিল গত বছরের জুনে। এরপর কয়েক দফায় দাম সমন্বয়ের ফলে এ দাম কমে গত অক্টোবরে ১৭৮ টাকায় নামে। ফের তা ১৯৯ টাকায় উঠেছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

আপডেট সময় ০৩:৪২:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩

অস্থির দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। রেকর্ড পরিমাণ আমদানির পরও কাটছে না সঙ্কট। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়ানো হলেও স্থিতিশীল হচ্ছে না বাজার। এ অবস্থায় দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বাজারে এখন ভোজ্যতেলের কোনো সঙ্কট না থাকলেও সিন্ডিকেটের কবলে বাড়ছে দাম। মিলগুলোর কারসাজির কারণে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বেড়েছে। এতে করে এক লিটার তেলের দাম হয়েছে ১৯৯ টাকা, যা আগে ১৮৭ টাকা ছিল। তবে নতুন দামের তেল এখনো বাজারে আসেনি। কিন্তু তার আগেই ভোক্তার কাছে পুরোনো দামের তেল বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। অথচ বোতলের গায়ে পুরোনো দামই লেখা। এদিকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল তো সরকার নির্ধারিত নতুন দামের থেকেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। খুচরার সঙ্গে পাইকারি বিক্রেতারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা পুরোনো তেলে লিটারপ্রতি ৩-৮ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতলে ১৮৭ টাকা লেখা। অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০-১৯৫ টাকায়। আর ৩৭৪ টাকার দুই লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৩৯০ এবং ৯০৬ টাকার পাঁচ লিটার তেল ৯১৫-৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ৩ মে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ১৮৭ টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৬০ টাকা, যা ছিল ৯০৬ টাকা। এর মানে নতুন করে বাড়ছে ৫৪ টাকা। অন্যদিকে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম হচ্ছে ১৭৬ টাকা। এতদিন বিক্রি হয়েছে ১৬৭ টাকায়। আর প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। খোলা সয়াবিন ১৮০ ও পাম তেল ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা সরকার নির্ধারিত নতুন দামের চেয়েও বেশি। এ বিষয়ে তালতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ‘সততা স্টোরে’র আমজাদ হোসেন বলেন, তেল নিয়ে কোম্পানি কি শুরু করেছে তা কেউ জানে না। তারা তেল দিচ্ছে না। এছাড়া পুরোনো তেল বিক্রি করছে বাড়তি দামে। তিনি জানান, কোম্পানি অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। বলছে, নতুন দামের তেল আরও কয়েকদিন পর বাজারে আসবে। এই ব্যবসায়ী বলেন, শেষ রোববার পাঁচ লিটারের চারটি বোতলের এক কার্টন তেল পরিবেশকদের কাছ থেকে তিন হাজার ৫২০ টাকায় কিনেছিলাম। পরের দিন কিনেছি তিন হাজার ৫৬০ টাকায়। আমরা বেশি দামে কিনে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি। কোম্পানি রশিদও দিচ্ছে না। দিলেও নতুন নির্ধারণ করা দাম লিখছে।

শুধু আমজাদ হোসেন নয়, অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন দাম বাড়ানোর পরও তারা পরিবেশকদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছে না। খোলা তেলের দাম নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।

পাড়া-মহল্লা ও বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও দাম কমতে সময় লাগে। তবে দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলেই পাইকারি ব্যবসায়ী ও পরিবেশকেরা সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দেন। এতে তাদের বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে তেল বিক্রি করতে হয়। যে কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের বাকবিত-ায় জড়াতে হচ্ছে। রামপুরা বাজারের এক মুদি দোকানি বলেন, আমার কাছে দাম বাড়ার ঘোষণায় প্রতি বোতলের (৫ লিটার) দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে রাখা হলো। অথচ এগুলো পুরোনো দামের তেল। আমি যখন ক্রেতার কাছে বেশি চাইছি, তখন গ-গোল বেধে যাচ্ছে। এ জন্য তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি বলছে, আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের দাম প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ ২০৫ টাকায় উঠেছিল গত বছরের জুনে। এরপর কয়েক দফায় দাম সমন্বয়ের ফলে এ দাম কমে গত অক্টোবরে ১৭৮ টাকায় নামে। ফের তা ১৯৯ টাকায় উঠেছে।