ঢাকা , বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমুদ্রপথে হজযাত্রায় খরচ কমবে ৪০ শতাংশ

সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে সৌদি আরব সরকার। বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলে যেতে পারবেন হজযাত্রীরা।

চলতি বছরই সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। খরচ কম হবে তাই আগ্রহী হজযাত্রীরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে জাহাজ। কারণ সমুদ্রপথে হাজিদের পাঠাতে প্রয়োজন চার্টার্ড জাহাজ, যা বাংলাদেশে নেই। এই জাহাজ ভাড়া করে আনতে সময় লাগবে, এ ছাড়া এর জন্য ২ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

সমুদ্রপথে হজযাত্রী পরিবহনে এখন পর্যন্ত একটিমাত্র কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদেরও নেই চার্টার্ড জাহাজ। ফলে এই বছর সমুদ্রপথে হজযাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে জাহাজে হজযাত্রার বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করছেন হজ গমনেচ্ছুরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলছেন, জাহাজে হজ করতে গেলে বিমানের চেয়ে ভাড়া ৪০ শতাংশ কম হবে।
হজে যেতে ইচ্ছুক এমন অনেকেই বলছেন, সাধারণত মধ্যবিত্তদের মধ্যে হজে যাওয়ার আগ্রহ বেশি কিন্তু তাদের সক্ষমতা অতটা নেই। তারা জমানো টাকা দিয়ে হজ করতে যাওয়ার কথা চিন্তা করে। হজের খরচ বেশি হলে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বে যেতে পারে না। জাহাজে গেলে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। তাই সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার আগ্রহ বেশি।

জানা গেছে, ব্রিটিশ ভারতের সময়কালে মুসলমানরা মূলত জাহাজে করে হজ করতে যেতেন। বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ববাংলা) থেকে প্রথম হজযাত্রা ১৯২৭ সালে জাহাজে শুরু হয়। সত্তর দশকের আগ পর্যন্ত বড় বড় জাহাজে হাজার হাজার হজযাত্রী যাত্রা করতেন ও তা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ এবং চ্যালেঞ্জিং। সাধারণত ২ কিংবা ৩ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগত বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে পৌঁছাতে। ওই ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার প্রভাব, সমুদ্রের ঝড় ও জাহাজের গতি ইত্যাদি বিষয়গুলো যাত্রীদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসত। পূর্ব পাকিস্তানের সময়ে ‘সেলিম’, ‘সিন্ধু’, ‘মির্জা’, ‘বালুচিস্তান’ ইত্যাদি নামে জাহাজগুলো হজযাত্রী পরিবহন করত।

সত্তর দশকের পরে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে করে হজযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে বিমানপথে হজযাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে হজযাত্রা অনেক দ্রুত এবং নিরাপদ, বিমানপথে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি আরবে পৌঁছানো যায়। জাহাজে হজযাত্রার সময় যেখানে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগত, এখন সেটি সম্পন্ন হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজে হজ করতে গেলে বিমানের চেয়ে ভাড়া ৪০ শতাংশ কম হবে। খরচ কম হলে যাদের টাকা কম তারা আগ্রহী হবেন। অনেক আগে থেকেই সমুদ্রপথে হজযাত্রার তাগিদ রয়েছে। এ বিষয়ে অসংখ্যবার সৌদি আরবের সঙ্গে কথা হলেও এবারই তারা নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে। আমরা এই বছরই জাহাজে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বিমানে যেমন খরচ বেশি সময় কম লাগে, তেমনই সমুদ্রপথেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ ও দুর্ঘটনার শঙ্কা। যদিও এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জাহাজেও সময় অনেক কম লাগে এবং যাত্রাও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তাই বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

হাব বলছে, এটি খুবই ভালো খবর। সমুদ্রপথে হাজিদের পাঠানো সম্ভব হলে এই খাতে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

হজ অনুবিভাগ বলছে, সৌদি আরব পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব চেয়েছে, সেটি তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত পাঠানো হবে। পাশাপাশি জাহাজ কোম্পানির সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তবে আমাদের দেশে এখন সমুদ্রপথে হাজিদের পাঠানোর মতো জাহাজ নেই, এটি প্রতিবন্ধকতা। এটি দূর করারও চেষ্টা করা হচ্ছে। সৌদি আরব চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর এই প্রতিবন্ধকতাও থাকবে না।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘জাহাজে হাজিদের পাঠানো হলে চার্টার শিপ ভাড়া করতে হবে। এটি করতে গেলে আমাদের ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। সৌদি সরকার থেকে অনুমোদন পেলে সরকারের অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে ২ হাজার কোটি টাকা যদি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দেয়, তা হলে হাজিদের নেওয়া হবে। একটা শিপিং কোম্পানি জানিয়েছে, তারা লাভের আশায় নয়, সওয়াবের আশায় এটি করবে। এটি করা হলে বিমানের চেয়ে ৪০ শতাংশ ভাড়া কম লাগবে জাহাজে। আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’

সরকার হজ প্যাকেজে খরচ কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তারা ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে কত কমাবে, তারা তা বলেনি। আমরা আশা করছি, হজ প্যাকেজ যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারব।’

সমুদপথে হজযাত্রার বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক প্রেসিডেন্ট শরিফ আহমেদ মজুমদার সময়ের আলোকে বলেন, এটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমান সরকার এটি করতে পারলে ভালো হবে। মানুষের আগ্রহ আছে। আমরা চাই হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ুক। তবে চলতি বছর এটির (সমুদ্রপথে যাত্রা) সম্ভাবনা কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আমরাও নৌপথে হজযাত্রার আরেকটি প্যাকেজ করতে চাই। এ জন্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ম উপদেষ্টার নির্দেশে সৌদি গিয়েছিলাম। সেখানে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়। সেখানে নৌপথে হাজি পাঠানোর জন্য আমরা প্রস্তাব দিই। তিনি প্রাথমিকভাবে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়ে আমাদের প্রস্তাব জমা দিতে বলেছেন। আমরা ফাইল পাঠানোর জন্য রেডি করেছি।

তিনি বলেন, নৌপথে হজযাত্রী পাঠাতে আগ্রহী কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয়ও বৈঠক করেছে। তারা বলেছে, শিপ আনতে হবে, এ জন্য সময় লাগবে। তারা যদি শিপ আনতে পারে তা হলে এ বছরই নৌপথে হজযাত্রী পাঠানো যাবে। না হলে আগামী বছর হবে। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ছাড়া এখনও কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তারা শুরু করলে অন্যরাও আগ্রহী হবে।
হজের নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মাসে নিবন্ধনের তারিখ শেষ না। আমরা বলেছি, আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে যদি আমরা একটি ভালোসংখ্যক হজযাত্রী পেয়ে যাই, তা হলে মিনার কাছাকাছি জোনে তাঁবু নেওয়াটা সহজ হবে। আমরা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় দিয়েছি।

তিনি বলেন, এই মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথমে প্যাকেজ ঘোষণা করব। প্যাকেজ ঘোষণার জন্য যদি আমরা নিবন্ধন আটকে রাখি, অন্যবার যেটি করি, তাতে সব কাজ পিছিয়ে যায়। সে জন্য যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রাথমিক নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হজ প্যাকেজ ঘোষণার জন্য দরকার হলো সৌদি পর্বে কি কি খরচ হবে আর বাংলাদেশ পর্বে বিমান ভাড়া। এই দুটো তথ্য আমরা জানার চেষ্টা করছি। সৌদি অংশের খরচগুলো অনলাইনেই দিয়ে দেওয়া হয়। এটি গোপন বিষয় নয়। এটি না পাওয়া পর্যন্ত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা যাবে না। কোন খাতে কত খরচ সেটি তো জানতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, আমরা চেষ্টা করছি এবার হজের খরচ কমানোর জন্য। সৌদি আরবে যদি কিছু খরচ কমানো যায়, পাশাপাশি বিমান ভাড়া কমানো যায় তা হলে কমতে পারে।

এর আগে ২০২২ সালে দেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী খরচে ২০২৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম-জেদ্দা ৩২ তলাবিশিষ্ট জাহাজ চালানোর অনুমোদন চেয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশিদ বলেন, জাহাজে যেতে আসতে আট দিন করে সময় লাগবে। খরচও কমবে। এখন যেখানে ৬ লাখ টাকা লাগে, সেখানে আমরা ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটা প্যাকেজের হিসাব দিয়েছি।

তিনি বলেন, জাহাজ ভাড়া করে আনলে খরচ পোষানো যাবে না। জাহাজ নির্মাণকারীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা ফান্ড আছে। সেখান থেকে জাহাজ কেনার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়েছি। সৌদি আরব মুখে অনুমতি দিয়েছে, আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিলে আর আমাদের সরকার আন্তরিক হলে এ বছরই সমুদ্রপথে হাজি পাঠানো সম্ভব। প্রাথমিকভাবে আমরা ৩ থেকে ৪ হাজার যাত্রী পাঠানোর চিন্তা করছি।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

সমুদ্রপথে হজযাত্রায় খরচ কমবে ৪০ শতাংশ

আপডেট সময় ০৯:৫৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে সৌদি আরব সরকার। বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলে যেতে পারবেন হজযাত্রীরা।

চলতি বছরই সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। খরচ কম হবে তাই আগ্রহী হজযাত্রীরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে জাহাজ। কারণ সমুদ্রপথে হাজিদের পাঠাতে প্রয়োজন চার্টার্ড জাহাজ, যা বাংলাদেশে নেই। এই জাহাজ ভাড়া করে আনতে সময় লাগবে, এ ছাড়া এর জন্য ২ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

সমুদ্রপথে হজযাত্রী পরিবহনে এখন পর্যন্ত একটিমাত্র কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদেরও নেই চার্টার্ড জাহাজ। ফলে এই বছর সমুদ্রপথে হজযাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে জাহাজে হজযাত্রার বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করছেন হজ গমনেচ্ছুরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলছেন, জাহাজে হজ করতে গেলে বিমানের চেয়ে ভাড়া ৪০ শতাংশ কম হবে।
হজে যেতে ইচ্ছুক এমন অনেকেই বলছেন, সাধারণত মধ্যবিত্তদের মধ্যে হজে যাওয়ার আগ্রহ বেশি কিন্তু তাদের সক্ষমতা অতটা নেই। তারা জমানো টাকা দিয়ে হজ করতে যাওয়ার কথা চিন্তা করে। হজের খরচ বেশি হলে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বে যেতে পারে না। জাহাজে গেলে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। তাই সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার আগ্রহ বেশি।

জানা গেছে, ব্রিটিশ ভারতের সময়কালে মুসলমানরা মূলত জাহাজে করে হজ করতে যেতেন। বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ববাংলা) থেকে প্রথম হজযাত্রা ১৯২৭ সালে জাহাজে শুরু হয়। সত্তর দশকের আগ পর্যন্ত বড় বড় জাহাজে হাজার হাজার হজযাত্রী যাত্রা করতেন ও তা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ এবং চ্যালেঞ্জিং। সাধারণত ২ কিংবা ৩ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগত বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে পৌঁছাতে। ওই ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার প্রভাব, সমুদ্রের ঝড় ও জাহাজের গতি ইত্যাদি বিষয়গুলো যাত্রীদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসত। পূর্ব পাকিস্তানের সময়ে ‘সেলিম’, ‘সিন্ধু’, ‘মির্জা’, ‘বালুচিস্তান’ ইত্যাদি নামে জাহাজগুলো হজযাত্রী পরিবহন করত।

সত্তর দশকের পরে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে করে হজযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে বিমানপথে হজযাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে হজযাত্রা অনেক দ্রুত এবং নিরাপদ, বিমানপথে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি আরবে পৌঁছানো যায়। জাহাজে হজযাত্রার সময় যেখানে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগত, এখন সেটি সম্পন্ন হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজে হজ করতে গেলে বিমানের চেয়ে ভাড়া ৪০ শতাংশ কম হবে। খরচ কম হলে যাদের টাকা কম তারা আগ্রহী হবেন। অনেক আগে থেকেই সমুদ্রপথে হজযাত্রার তাগিদ রয়েছে। এ বিষয়ে অসংখ্যবার সৌদি আরবের সঙ্গে কথা হলেও এবারই তারা নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে। আমরা এই বছরই জাহাজে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বিমানে যেমন খরচ বেশি সময় কম লাগে, তেমনই সমুদ্রপথেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ ও দুর্ঘটনার শঙ্কা। যদিও এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জাহাজেও সময় অনেক কম লাগে এবং যাত্রাও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তাই বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

হাব বলছে, এটি খুবই ভালো খবর। সমুদ্রপথে হাজিদের পাঠানো সম্ভব হলে এই খাতে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

হজ অনুবিভাগ বলছে, সৌদি আরব পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব চেয়েছে, সেটি তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত পাঠানো হবে। পাশাপাশি জাহাজ কোম্পানির সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তবে আমাদের দেশে এখন সমুদ্রপথে হাজিদের পাঠানোর মতো জাহাজ নেই, এটি প্রতিবন্ধকতা। এটি দূর করারও চেষ্টা করা হচ্ছে। সৌদি আরব চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার পর এই প্রতিবন্ধকতাও থাকবে না।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘জাহাজে হাজিদের পাঠানো হলে চার্টার শিপ ভাড়া করতে হবে। এটি করতে গেলে আমাদের ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। সৌদি সরকার থেকে অনুমোদন পেলে সরকারের অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে ২ হাজার কোটি টাকা যদি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দেয়, তা হলে হাজিদের নেওয়া হবে। একটা শিপিং কোম্পানি জানিয়েছে, তারা লাভের আশায় নয়, সওয়াবের আশায় এটি করবে। এটি করা হলে বিমানের চেয়ে ৪০ শতাংশ ভাড়া কম লাগবে জাহাজে। আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’

সরকার হজ প্যাকেজে খরচ কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তারা ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে কত কমাবে, তারা তা বলেনি। আমরা আশা করছি, হজ প্যাকেজ যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারব।’

সমুদপথে হজযাত্রার বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক প্রেসিডেন্ট শরিফ আহমেদ মজুমদার সময়ের আলোকে বলেন, এটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমান সরকার এটি করতে পারলে ভালো হবে। মানুষের আগ্রহ আছে। আমরা চাই হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ুক। তবে চলতি বছর এটির (সমুদ্রপথে যাত্রা) সম্ভাবনা কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আমরাও নৌপথে হজযাত্রার আরেকটি প্যাকেজ করতে চাই। এ জন্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ম উপদেষ্টার নির্দেশে সৌদি গিয়েছিলাম। সেখানে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়। সেখানে নৌপথে হাজি পাঠানোর জন্য আমরা প্রস্তাব দিই। তিনি প্রাথমিকভাবে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়ে আমাদের প্রস্তাব জমা দিতে বলেছেন। আমরা ফাইল পাঠানোর জন্য রেডি করেছি।

তিনি বলেন, নৌপথে হজযাত্রী পাঠাতে আগ্রহী কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয়ও বৈঠক করেছে। তারা বলেছে, শিপ আনতে হবে, এ জন্য সময় লাগবে। তারা যদি শিপ আনতে পারে তা হলে এ বছরই নৌপথে হজযাত্রী পাঠানো যাবে। না হলে আগামী বছর হবে। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ছাড়া এখনও কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তারা শুরু করলে অন্যরাও আগ্রহী হবে।
হজের নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মাসে নিবন্ধনের তারিখ শেষ না। আমরা বলেছি, আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে যদি আমরা একটি ভালোসংখ্যক হজযাত্রী পেয়ে যাই, তা হলে মিনার কাছাকাছি জোনে তাঁবু নেওয়াটা সহজ হবে। আমরা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় দিয়েছি।

তিনি বলেন, এই মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথমে প্যাকেজ ঘোষণা করব। প্যাকেজ ঘোষণার জন্য যদি আমরা নিবন্ধন আটকে রাখি, অন্যবার যেটি করি, তাতে সব কাজ পিছিয়ে যায়। সে জন্য যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রাথমিক নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হজ প্যাকেজ ঘোষণার জন্য দরকার হলো সৌদি পর্বে কি কি খরচ হবে আর বাংলাদেশ পর্বে বিমান ভাড়া। এই দুটো তথ্য আমরা জানার চেষ্টা করছি। সৌদি অংশের খরচগুলো অনলাইনেই দিয়ে দেওয়া হয়। এটি গোপন বিষয় নয়। এটি না পাওয়া পর্যন্ত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা যাবে না। কোন খাতে কত খরচ সেটি তো জানতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, আমরা চেষ্টা করছি এবার হজের খরচ কমানোর জন্য। সৌদি আরবে যদি কিছু খরচ কমানো যায়, পাশাপাশি বিমান ভাড়া কমানো যায় তা হলে কমতে পারে।

এর আগে ২০২২ সালে দেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী খরচে ২০২৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম-জেদ্দা ৩২ তলাবিশিষ্ট জাহাজ চালানোর অনুমোদন চেয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশিদ বলেন, জাহাজে যেতে আসতে আট দিন করে সময় লাগবে। খরচও কমবে। এখন যেখানে ৬ লাখ টাকা লাগে, সেখানে আমরা ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটা প্যাকেজের হিসাব দিয়েছি।

তিনি বলেন, জাহাজ ভাড়া করে আনলে খরচ পোষানো যাবে না। জাহাজ নির্মাণকারীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা ফান্ড আছে। সেখান থেকে জাহাজ কেনার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়েছি। সৌদি আরব মুখে অনুমতি দিয়েছে, আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিলে আর আমাদের সরকার আন্তরিক হলে এ বছরই সমুদ্রপথে হাজি পাঠানো সম্ভব। প্রাথমিকভাবে আমরা ৩ থেকে ৪ হাজার যাত্রী পাঠানোর চিন্তা করছি।