ঢাকা , রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo খুশির ঈদযাত্রা : ট্রেন ছাড়ছে সময় মতোই, উচ্ছ্বসিত ঘরমুখো মানুষ Logo পুশ-ইন অব্যাহত রেখেছে ভারত, ১১৮ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর Logo শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি: সাদরিল Logo শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও তবারক বিতরণ Logo ওলামা কল্যান পরিষদের নবগঠিত কমিটির পরিচিত সভা Logo শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে,গরীব দুঃখীদের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ Logo জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ফুলেল শ্রদ্ধা Logo রিমান্ড শেষে কারাগারে আইভী Logo বন্দরে চোরাইকৃত মিশুকসহ চোর আটক, পুলিশে সোর্পদ Logo বৃষ্টিতে বিপন্ন নারায়ণগঞ্জ শহর, জলাবদ্ধতায় নাকাল জনজীবন

পাচার অর্থ ফেরাতে আপস, তবে লাগবে সঠিক তথ্য : গভর্নর

পাচার হওয়া অর্থ আপসের মাধ্যমে ফেরত আনার বিষয়ে ভাবছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আপসে যেতে হলে সঠিক তথ্য বের করতে হবে। তথ্যে গরমিল হওয়া যাবে না। যত ভালো তথ্য পাব তত ভালো করব আপস বা আদালতে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং সমসাময়িক ব্যাংকিং বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানিলন্ডারিংয়ে বড় ভিকটিম। আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে কতিপয় পরিবার বা গোষ্ঠী মানি লন্ডারিং করে সম্পদ চুরি করে বাইরে নিয়ে গেছে। আমরা সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, রোগের উৎপত্তি রোধ করা প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু রোগ সারানো হচ্ছে পরে। চুরি হওয়ার পরে বুদ্ধি বাড়িয়ে লাভ নেই। চুরি হওয়ার আগেই ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনোভাবে না হয়।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই আউট অব কোর্ট স্যাটেলমেন্ট বলে একটা কথা আছে। মামলায় সবসময় দীর্ঘসূত্রিতায় যাওয়ার মানে হয় না। কারণ, ভালোভাবে ধরতে পারলে আপসটাও ভালোভাবে হয়। আর সম্পদ শনাক্ত না করতে পারলে আমরা ঠকে যাব। আপসে যেতে হলে সঠিক তথ্য বের করতে হবে। তথ্যে গরমিল হওয়া যাবে না। যত ভালো তথ্য পাব তত ভালো করব আপস বা আদালতে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার যে উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য এটা একেবারেই নতুন। সিস্টেমেটিকেলি এ ধরনের প্রবলেম আগে ফেইস করিনি, করে থাকলেও এ ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। এই প্রথম আমরা এটা করছি। সেজন্য আমাদের অনেক শিখতে হচ্ছে। এটা তো দেশের আইনে হবে না। বিদেশিদের সঙ্গে আমাকে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তাদের আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করতে হবে। প্রথম ধাপে চেষ্টা করতে হবে সম্পদগুলো চিহ্নিত করা। সেই ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করছি। আইনি সহায়তার জন্য আমরা চিঠি পাঠাচ্ছি। বিভিন্ন ল’ ফার্মের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের হয়ত খুব শিগগির হায়ার করব।

তিনি আরও বলেন, আমরা কিছু ফার্মের সঙ্গে কথা বলছি যারা কার সম্পদ কোথায় আছে, তা বের করবে। আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি বিদেশিদের কাছ থেকে। তারপরও জিনিসটা এত সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের লক্ষ্য ছয় মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে সম্পদ শনাক্ত করা। এরপর আদালতে যেতে হয়। কয়েক বছর লেগে যায়।

গভর্নর জানান, চট্টগ্রামের কিছু বড় গ্রুপ অন্তত সোয়া লাখ কোটি টাকা থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা নিয়েছে ব্যাংকিং খাত থেকে। আরও কিছু গ্রুপ আছে যারা ২০, ৪০, ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। আমার ধারণা ছোটগুলো বাদেই বড় গ্রুপগুলোর আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে। সেগুলোও আদায় করতে হবে অর্থঋণ আদালতসহ অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ায়।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। আমাদের রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। বিভিন্ন রকমের গোলযোগ-আন্দোলন সত্ত্বেও রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়েনি, বাড়ছে। ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখতে পাচ্ছি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক। এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছি। সব মিলিয়ে ম্যাক্রো ইকোনমিক এক্সটারনাল সেক্টরে একটা স্বস্তির জায়গায় আমরা চলে এসেছি। কোনো ধরনের ক্রাইসিস আছে বলে আমি মনে করি না এবং হবে বলে আমি মনে করি না। আমরা একটা সুদৃঢ় অবস্থানে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা চলমান। খাদ্যে সেপ্টেম্বরে সাড়ে ১৪ শতাংশ, গত মাসে ৮ শতাংশের একটু বেশি আছে। যেটা মোটামুটি সন্তোষজনক। নন ফুড সাড়ে ১২ থেকে কমে এখন সাড়ে ৯ শতাংশে নেমেছে। আমি আশাবাদী, এটা আরও কমবে সামনে। আর সাধারণত খাদ্য মূল্য বাড়লেই নন ফুড মূল্যস্ফীতিও বাড়ে। খাদ্য মূল্য বাড়লে রিকশাভাড়া, বাড়ি ভাড়া, চুল কাটার খরচও বাড়ে। খাদ্য মূল্য কমলে তখন আবার নন ফুড ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমরা একটা স্বস্তির জায়গার দিকে যাচ্ছি। জুনের শেষে জুলাই মাসে হয়ত রেজাল্ট পাব। মূল্যস্ফীতি হয়ত ৭-৮ এর মধ্যে রয়েছে। ইনশাআল্লাহ আগামী বছর এটাকে ৫ বা তার নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

পলিসি রেসপন্সে সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওষুধ দিলেই সব রোগী ভালো হয়ে যায় না, সময় লাগে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি সব সার যেন সময়মতো আসে। বোরো ধান বুনতে যেন কোনো অসুবিধা না হয় কৃষকের। বিদ্যুতের সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা তা করতে পেরেছি। আমাদের নিজের টাকাতেই করেছি।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

খুশির ঈদযাত্রা : ট্রেন ছাড়ছে সময় মতোই, উচ্ছ্বসিত ঘরমুখো মানুষ

পাচার অর্থ ফেরাতে আপস, তবে লাগবে সঠিক তথ্য : গভর্নর

আপডেট সময় ১০:২৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

পাচার হওয়া অর্থ আপসের মাধ্যমে ফেরত আনার বিষয়ে ভাবছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আপসে যেতে হলে সঠিক তথ্য বের করতে হবে। তথ্যে গরমিল হওয়া যাবে না। যত ভালো তথ্য পাব তত ভালো করব আপস বা আদালতে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং সমসাময়িক ব্যাংকিং বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানিলন্ডারিংয়ে বড় ভিকটিম। আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে কতিপয় পরিবার বা গোষ্ঠী মানি লন্ডারিং করে সম্পদ চুরি করে বাইরে নিয়ে গেছে। আমরা সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, রোগের উৎপত্তি রোধ করা প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু রোগ সারানো হচ্ছে পরে। চুরি হওয়ার পরে বুদ্ধি বাড়িয়ে লাভ নেই। চুরি হওয়ার আগেই ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনোভাবে না হয়।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই আউট অব কোর্ট স্যাটেলমেন্ট বলে একটা কথা আছে। মামলায় সবসময় দীর্ঘসূত্রিতায় যাওয়ার মানে হয় না। কারণ, ভালোভাবে ধরতে পারলে আপসটাও ভালোভাবে হয়। আর সম্পদ শনাক্ত না করতে পারলে আমরা ঠকে যাব। আপসে যেতে হলে সঠিক তথ্য বের করতে হবে। তথ্যে গরমিল হওয়া যাবে না। যত ভালো তথ্য পাব তত ভালো করব আপস বা আদালতে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার যে উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য এটা একেবারেই নতুন। সিস্টেমেটিকেলি এ ধরনের প্রবলেম আগে ফেইস করিনি, করে থাকলেও এ ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। এই প্রথম আমরা এটা করছি। সেজন্য আমাদের অনেক শিখতে হচ্ছে। এটা তো দেশের আইনে হবে না। বিদেশিদের সঙ্গে আমাকে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তাদের আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করতে হবে। প্রথম ধাপে চেষ্টা করতে হবে সম্পদগুলো চিহ্নিত করা। সেই ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করছি। আইনি সহায়তার জন্য আমরা চিঠি পাঠাচ্ছি। বিভিন্ন ল’ ফার্মের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের হয়ত খুব শিগগির হায়ার করব।

তিনি আরও বলেন, আমরা কিছু ফার্মের সঙ্গে কথা বলছি যারা কার সম্পদ কোথায় আছে, তা বের করবে। আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি বিদেশিদের কাছ থেকে। তারপরও জিনিসটা এত সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের লক্ষ্য ছয় মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে সম্পদ শনাক্ত করা। এরপর আদালতে যেতে হয়। কয়েক বছর লেগে যায়।

গভর্নর জানান, চট্টগ্রামের কিছু বড় গ্রুপ অন্তত সোয়া লাখ কোটি টাকা থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা নিয়েছে ব্যাংকিং খাত থেকে। আরও কিছু গ্রুপ আছে যারা ২০, ৪০, ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। আমার ধারণা ছোটগুলো বাদেই বড় গ্রুপগুলোর আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে। সেগুলোও আদায় করতে হবে অর্থঋণ আদালতসহ অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ায়।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। আমাদের রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। বিভিন্ন রকমের গোলযোগ-আন্দোলন সত্ত্বেও রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়েনি, বাড়ছে। ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখতে পাচ্ছি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক। এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছি। সব মিলিয়ে ম্যাক্রো ইকোনমিক এক্সটারনাল সেক্টরে একটা স্বস্তির জায়গায় আমরা চলে এসেছি। কোনো ধরনের ক্রাইসিস আছে বলে আমি মনে করি না এবং হবে বলে আমি মনে করি না। আমরা একটা সুদৃঢ় অবস্থানে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা চলমান। খাদ্যে সেপ্টেম্বরে সাড়ে ১৪ শতাংশ, গত মাসে ৮ শতাংশের একটু বেশি আছে। যেটা মোটামুটি সন্তোষজনক। নন ফুড সাড়ে ১২ থেকে কমে এখন সাড়ে ৯ শতাংশে নেমেছে। আমি আশাবাদী, এটা আরও কমবে সামনে। আর সাধারণত খাদ্য মূল্য বাড়লেই নন ফুড মূল্যস্ফীতিও বাড়ে। খাদ্য মূল্য বাড়লে রিকশাভাড়া, বাড়ি ভাড়া, চুল কাটার খরচও বাড়ে। খাদ্য মূল্য কমলে তখন আবার নন ফুড ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমরা একটা স্বস্তির জায়গার দিকে যাচ্ছি। জুনের শেষে জুলাই মাসে হয়ত রেজাল্ট পাব। মূল্যস্ফীতি হয়ত ৭-৮ এর মধ্যে রয়েছে। ইনশাআল্লাহ আগামী বছর এটাকে ৫ বা তার নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

পলিসি রেসপন্সে সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওষুধ দিলেই সব রোগী ভালো হয়ে যায় না, সময় লাগে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি সব সার যেন সময়মতো আসে। বোরো ধান বুনতে যেন কোনো অসুবিধা না হয় কৃষকের। বিদ্যুতের সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয়। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা তা করতে পেরেছি। আমাদের নিজের টাকাতেই করেছি।