বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সনাতনীদের যাতে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। রাষ্ট্রে আইনের শাসন না থাকলে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু কেউ নিরাপদ নয়। একমাত্র আইনের শাসন সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর জেএমসেন হলে সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, সনাতনীদের যাতে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। বিতাড়িত স্বৈরাচারী সরকারের সময় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা তাদের স্থাপনা বসতবাড়িতে হামলা হয়েছে। ঘটনাগুলো যদি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব হাতেগোনা দুএকটি ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশের হামলার ঘটনা কোনো ধর্মীয় কারণে হয়নি। প্রত্যেকটি ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।এসব হামলা ছিল অবৈধ, লোভ-লাভের জন্য দুর্বলের ওপর সবলের হামলা কিংবা অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন,আপনাদের ধর্মীয় পরিচয়কে আর কেউ যাতে নিজেদের হীন স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, গত ১৭ বছর বাংলাদেশে এক নৃশংস স্বৈরাচার জনগণের ওপর জাগ্রত পাথরের মতো চেপে বসেছিল। দল-মত, বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্টের বাংলাদেশ ছেড়ে পালায়। কংসরুপী নৃশংস গণহত্যাকারী স্বৈরাচার পালালেও গণতন্ত্র কিন্তু এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র ক্রমাগত অব্যাহত রয়েছে। পলাতক স্বৈরাচারের দোসর নানা কৌশলে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপচেষ্টায় প্রতিনিয়ত লিপ্ত। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদ ও সরকার যতক্ষণ না গঠিত হবে ততদিন পর্যন্ত গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয়।
তিনি বলেন, আপনারা আমাকে যে আমন্ত্রণ পত্র দিয়েছেন সেখানে লেখা ছিল, গত ১৭ বছর ধরে সংগঠনটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ সনাতনীরা সেটা এখন বুঝতে পেরেছে। নতুনভাবে এ সংগঠনকে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই যে রাজনৈতিকভাবে আপনাদের ব্যবহার করা হয়েছে এ গভীর সত্যটি আপনারা যদি বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই এটা আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি।
রাষ্ট্রে আইনের শাসন না থাকলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন রাষ্ট্র এবং সমাজে নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে কোনো দলীয় পরিচয়ে আবদ্ধ থাকা কারও জন্য জরুরি নয়। পলাতক যে স্বৈরাচারের শাসনামল ছিল সে আমলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যাদেরকে আয়নাঘরের নির্জন জায়গায় মৃত্যু আতঙ্কে কাটাতে হয়েছে সবাই কিন্তু সংখ্যাগুরু সদস্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা একটি ক্রসরুটে দাঁড়িয়ে আছি। এটা আমাদের অতিক্রম করতে হবে। এটা অতিক্রম কোনো একটি গোষ্ঠী বা ধর্ম দ্বারা হবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এ স্পষ্ট বলা আছে সবার কালচার, ইতিহাস ও ভাষাকে প্রটেক্ট করতে হবে। সেটাকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।
শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আর কে দাশ রুপু, দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, স্বামী যোগানন্দ গিরি মহারাজ, স্বামী বেদানন্দ গিরি মহারাজ প্রমুখ।