ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

তিন জেলায় পানিবন্দি সাড়ে ৩ লাখের বেশি মানুষ

কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোনার ১৩টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে রান্নাবান্না। চরম সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির।

বন্যার পানিতে ডুবে শেরপুরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জন। বন্যার্ত দুর্গতদের অভিযোগ, তাদের যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ত্রাণের পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা। ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, নতুন করে কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কারণে কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় পঞ্চম দিনে নতুন করে তিন উপজেলায় আরও ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলায় পানিবন্দি হয়ে আছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। টানা পাঁচ দিনের পাহাড়ি ঢলের পানিতে।

মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে রান্নাবান্না। চরম সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির। কংস নদীর তীরবর্তী আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে পানি ওঠায় দুর্ভোগে গৃহছাড়া বাসিন্দারা। সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষুদ্ধ বানভাসি মানুষ। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংগঠন বন্যার্তদের মাঝে শুকনা খাবার ও ত্রাণসমাগ্রী বিতরণ করছেন। তিন উপজেলায় নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার ভোর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। অন্তত ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তিন উপজেলায় নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া। ও ফুলপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-শিশুসহ কয়েকশ মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে কংস নদীর তীরবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে বাসিন্দাদের।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বেড়েছে, সেই সঙ্গে নতুন করে ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বানভাসি মানুষকে শুকনা খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ করছি।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নতুন করে উপজেলার চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

হালুয়াঘাট ভুবনকুড়া গ্রামের ২০-২৫টি বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ফসলি ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। ধুপাজুড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের রাস্তা ভেঙে যাতায়াতের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদুল আহমেদ জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিতদের মধ্যে ২৫ হাজার টন চাল, ১ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনী: হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার দুর্গম এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল সেনাবাহিনীর সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের তত্ত্বাবধানে কমান্ডার ৪০৩ ব্যাটেল গ্রুপের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ত্রাণ বিতরণ করে। গত দুদিনে ২১ ইস্ট বেঙ্গল কর্তৃক দিনব্যাপী পানিবন্দি বহু মানুষকে উদ্ধার করে। এ সময় কর্নেল স্টাফ ও সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবারও পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, গত পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার ৫টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। এখনও বন্ধ রয়েছে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। চরম দুর্ভোগে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ। ত্রাণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, উপদাখালী, কংস ও ধনু নদীর পানি বেড়েছে। উপদাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্য সব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কংস নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পূর্বধলা, নেত্রকোনা সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। সোমবার সারা দিন কোনো বৃষ্টিপাত না থাকায় কংস নদীর পানি কমতে শুরু করে। তবে কলমাকান্দা উপদাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় রোপা আমন ফসল। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ যানবাহন চলাচল। বন্যার পানির তোড়ে ভেড়ে পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ। ক্ষতির সম্মুখীন অনেক খামারি। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়।

নেত্রকোনা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইমদাদুল হক জানান, বন্যার কারণে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পানি ঢুকে পড়ায় চার উপজেলায় ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থ াকবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। এবারের আকস্মিক বন্যায় দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার ২২ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২৭৯ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, জেলার ৫টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে ২২ হাজার মানুষ। ৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০৬ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনা খাবার, চালসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রশাসনের লোকজন কাজ করছে।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ৫টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি ইউনিয়নের মধ্যে রোববার থেকে ১৫টি ইউনিয়নের বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে রেখে গেছে এর ক্ষতচিহ্ন। প্রাণহানিসহ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, পুকুর-ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এ জেলায়। অন্যদিকে বাকি ১৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৭টিতে এখনও ভয়াবহ বন্যা চলছে। এসব ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। আংশিক বন্যা রয়েছে ছয়টিতে। যদিও এসব এলাকার বন্যার পানি সোমবার থেকে কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতির কারণে বন্যার পানি পুরোপুরি কমতে অন্তত সপ্তাহখানেক পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ জেলায় ১০ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী, বিএনপি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে নারী ও শিশুসহ মারা গেছেন ১০ জন। তারা হলো-নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী (৬৬), অভয়পুর গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬), বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের গৃহবধূ অমিজা খাতুন (৪৫), বাতকুচি গ্রামের বৃদ্ধা জহুরা খাতুন (৭০), নালিতাবাড়ীতে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসা শেরপুরের ধলা ইউনিয়নের চান্দেরনগর কড়ইতলা গ্রামের জামানের ৮ বছর বয়সি কন্যাশিশু জিমি আক্তার, নকলা উপজেলার জালালপুর চিকনা এলাকার উজ্জল মিয়া (৫০), গণপদ্দি গজারিয়া এলাকায় আবদুর রাজ্জাক (৬০) ও নকলা উপজেলার টালকি ইউনিয়নের বড়পাগলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের পাঁচ বছর বয়সি ছেলে রহিম। এ ছাড়াও ঝিনাইগাতিতে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বন্যার পানি সরে যাওয়া এলাকাগুলোতে পানি নামলেও কমেনি দুর্ভোগ। পানির তোড়ে বাড়িঘর হারিয়ে দিশাহারা কয়েকশ পরিবার। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হওয়ায় রয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আকস্মিক বন্যায় আসবাবপত্র থেকে খাদ্যসামগ্রী পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় পড়েছেন মহাসংকটে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ত্রাণও পৌঁছে না সেসব এলাকায়। ফলে খাবার সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং পুনর্বাসন জরুরি বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে জেলার নিচু প্রায় ১২টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। পানিবন্দি রয়েছে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। গবাদিপশুর জায়গা হয়েছে উঁচু সড়ক বা সেতুতে। ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন সেসব এলাকায় গেলেও প্রয়োজনীয় নৌযানের অভাবে বন্যাদুর্গত সবার কাছে পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছে।

কলসপাড় ইউনিয়নের ঘোনপাড়া গ্রামের ফুলবানু জানান, ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও উঠানে হাঁটু পানি। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাই নাতি-নাতনি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। চার দিন ধরে রান্না-বান্না নেই। চিড়া-মুড়ি খাই, আত্মীয় বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার পাঠায়। সেসব খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।

বন্যায় জেলার অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে প্রায় পৌনে দুই হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ। এতে প্রায় ৫০০ কোটির টাকার ক্ষয়ক্ষতি শঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। ভেসে গেছে প্রায় ৭ হাজার পুকুরের ৭০ কোটি টাকার মাছ। বন্ধ রয়েছে ২ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় দ্রুত ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবি এলাকাবাসীর।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানিয়েছেন, জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ও প্রায় পৌনে দুই হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ নষ্ট হয়েছে। আমরা আশা করছি, এর মধ্যে কিছু রিকভার হবে। সবমিলিয়ে প্রাথ মিকভাবে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বলে জানান তিনি।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

হোম অ্যাডভান্টেজ নেবে বাংলাদেশ

তিন জেলায় পানিবন্দি সাড়ে ৩ লাখের বেশি মানুষ

আপডেট সময় ১১:০২:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোনার ১৩টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। মঙ্গলবারও ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে রান্নাবান্না। চরম সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির।

বন্যার পানিতে ডুবে শেরপুরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জন। বন্যার্ত দুর্গতদের অভিযোগ, তাদের যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ত্রাণের পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা। ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, নতুন করে কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কারণে কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় পঞ্চম দিনে নতুন করে তিন উপজেলায় আরও ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলায় পানিবন্দি হয়ে আছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। টানা পাঁচ দিনের পাহাড়ি ঢলের পানিতে।

মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে রান্নাবান্না। চরম সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির। কংস নদীর তীরবর্তী আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে পানি ওঠায় দুর্ভোগে গৃহছাড়া বাসিন্দারা। সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষুদ্ধ বানভাসি মানুষ। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংগঠন বন্যার্তদের মাঝে শুকনা খাবার ও ত্রাণসমাগ্রী বিতরণ করছেন। তিন উপজেলায় নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার ভোর থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। কংস ও নেতাই নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। অন্তত ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তিন উপজেলায় নগদ ৭ লাখ টাকা ও ৬৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া। ও ফুলপুর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-শিশুসহ কয়েকশ মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে কংস নদীর তীরবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার আইলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে বাসিন্দাদের।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বেড়েছে, সেই সঙ্গে নতুন করে ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বানভাসি মানুষকে শুকনা খাবারের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ করছি।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নতুন করে উপজেলার চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

হালুয়াঘাট ভুবনকুড়া গ্রামের ২০-২৫টি বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ফসলি ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। ধুপাজুড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের রাস্তা ভেঙে যাতায়াতের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদুল আহমেদ জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিতদের মধ্যে ২৫ হাজার টন চাল, ১ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনী: হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার দুর্গম এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল সেনাবাহিনীর সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের তত্ত্বাবধানে কমান্ডার ৪০৩ ব্যাটেল গ্রুপের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ত্রাণ বিতরণ করে। গত দুদিনে ২১ ইস্ট বেঙ্গল কর্তৃক দিনব্যাপী পানিবন্দি বহু মানুষকে উদ্ধার করে। এ সময় কর্নেল স্টাফ ও সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবারও পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, গত পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার ৫টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। এখনও বন্ধ রয়েছে ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। চরম দুর্ভোগে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ। ত্রাণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, উপদাখালী, কংস ও ধনু নদীর পানি বেড়েছে। উপদাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্য সব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কংস নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পূর্বধলা, নেত্রকোনা সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। সোমবার সারা দিন কোনো বৃষ্টিপাত না থাকায় কংস নদীর পানি কমতে শুরু করে। তবে কলমাকান্দা উপদাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় রোপা আমন ফসল। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ যানবাহন চলাচল। বন্যার পানির তোড়ে ভেড়ে পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ। ক্ষতির সম্মুখীন অনেক খামারি। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়।

নেত্রকোনা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইমদাদুল হক জানান, বন্যার কারণে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পানি ঢুকে পড়ায় চার উপজেলায় ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থ াকবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। এবারের আকস্মিক বন্যায় দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার ২২ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২৭৯ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, জেলার ৫টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে ২২ হাজার মানুষ। ৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০৬ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনা খাবার, চালসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রশাসনের লোকজন কাজ করছে।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ৫টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি ইউনিয়নের মধ্যে রোববার থেকে ১৫টি ইউনিয়নের বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে রেখে গেছে এর ক্ষতচিহ্ন। প্রাণহানিসহ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, পুকুর-ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এ জেলায়। অন্যদিকে বাকি ১৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৭টিতে এখনও ভয়াবহ বন্যা চলছে। এসব ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। আংশিক বন্যা রয়েছে ছয়টিতে। যদিও এসব এলাকার বন্যার পানি সোমবার থেকে কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতির কারণে বন্যার পানি পুরোপুরি কমতে অন্তত সপ্তাহখানেক পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ জেলায় ১০ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী, বিএনপি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে নারী ও শিশুসহ মারা গেছেন ১০ জন। তারা হলো-নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী (৬৬), অভয়পুর গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬), বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের গৃহবধূ অমিজা খাতুন (৪৫), বাতকুচি গ্রামের বৃদ্ধা জহুরা খাতুন (৭০), নালিতাবাড়ীতে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসা শেরপুরের ধলা ইউনিয়নের চান্দেরনগর কড়ইতলা গ্রামের জামানের ৮ বছর বয়সি কন্যাশিশু জিমি আক্তার, নকলা উপজেলার জালালপুর চিকনা এলাকার উজ্জল মিয়া (৫০), গণপদ্দি গজারিয়া এলাকায় আবদুর রাজ্জাক (৬০) ও নকলা উপজেলার টালকি ইউনিয়নের বড়পাগলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের পাঁচ বছর বয়সি ছেলে রহিম। এ ছাড়াও ঝিনাইগাতিতে বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বন্যার পানি সরে যাওয়া এলাকাগুলোতে পানি নামলেও কমেনি দুর্ভোগ। পানির তোড়ে বাড়িঘর হারিয়ে দিশাহারা কয়েকশ পরিবার। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হওয়ায় রয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আকস্মিক বন্যায় আসবাবপত্র থেকে খাদ্যসামগ্রী পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় পড়েছেন মহাসংকটে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ত্রাণও পৌঁছে না সেসব এলাকায়। ফলে খাবার সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং পুনর্বাসন জরুরি বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে জেলার নিচু প্রায় ১২টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। পানিবন্দি রয়েছে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। গবাদিপশুর জায়গা হয়েছে উঁচু সড়ক বা সেতুতে। ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন সেসব এলাকায় গেলেও প্রয়োজনীয় নৌযানের অভাবে বন্যাদুর্গত সবার কাছে পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছে।

কলসপাড় ইউনিয়নের ঘোনপাড়া গ্রামের ফুলবানু জানান, ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও উঠানে হাঁটু পানি। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাই নাতি-নাতনি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। চার দিন ধরে রান্না-বান্না নেই। চিড়া-মুড়ি খাই, আত্মীয় বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার পাঠায়। সেসব খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।

বন্যায় জেলার অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে প্রায় পৌনে দুই হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ। এতে প্রায় ৫০০ কোটির টাকার ক্ষয়ক্ষতি শঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। ভেসে গেছে প্রায় ৭ হাজার পুকুরের ৭০ কোটি টাকার মাছ। বন্ধ রয়েছে ২ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় দ্রুত ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি পুনর্বাসনের দাবি এলাকাবাসীর।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানিয়েছেন, জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ও প্রায় পৌনে দুই হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ নষ্ট হয়েছে। আমরা আশা করছি, এর মধ্যে কিছু রিকভার হবে। সবমিলিয়ে প্রাথ মিকভাবে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বলে জানান তিনি।