যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ-সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন মুখপাত্র। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ ইউরোপের অনেক কট্টরপন্থি নেতা এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। খবর পলিটিকোর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ওপরের সারিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেইর নাম রয়েছে। এর মধ্যে মিলেই এক মাস আগেই নিশ্চিত করেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে মেলোনি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের মার-ই-লাগো রিসোর্টে যান। ট্রাম্প তাকে তখন এক ‘দুর্দান্ত নারী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানেও তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মেলোনির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রশংসাকারী হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবানও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে অরবানের কার্যালয় থেকে হাঙ্গেরির সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, তিনি ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে গত মাসেই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের হবু প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গত মাসে ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, এই অনুরোধ ‘শির সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় ট্রাম্পের আগ্রহকে’ ইঙ্গিত করছে। ওয়াশিংটনে বেইজিং দূতাবাস থেকে এখনও আমন্ত্রণপত্র পাওয়া না-পাওয়ার বিষয়টি কিংবা শি সাড়া দিয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে কোনো চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিত হওয়ার নজির নেই। শি জিনপিং চাইলেও তার উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ চীনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশটি বেশ কঠোর নিয়মনীতি অনুসরণ করে। ভ্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে কয়েক মাস লেগে যায়। শি উপস্থিত না থাকলেও এই অনুষ্ঠানে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাঠানোর মধ্য দিয়ে তিনি নিশ্চিতভাবে ট্রাম্পের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিতে চান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ সম্বোধনকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি। শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বিষয়টি এড়িয়ে যান। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াও নিশ্চিত করেছেন, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তার।
অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ব্রাজিলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলার কারণে পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ও শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের পাশাপাশি শপথ অনুষ্ঠানে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকছেন।
ট্রাম্পের সহযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্সের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ডানপন্থি রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র মাস্কের সঙ্গে ফারাজের প্রকাশ্য বিবাদ সত্ত্বেও ফারাজ তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। ফ্রান্স থেকে অভিবাসনবিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ‘দ্য ফরাসি সুইসাইড’ বইয়ের লেখক জেমোর তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। তার সঙ্গী ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা সারাহ নাফোও অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তিনি উপস্থিত থাকবেন।