১ জানুয়ারি (রবিবার) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে এবার মেলার আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। তবে অধিকাংশ দোকানের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা।
মেলার দেশি-বিদেশি পণ্যের স্টলগুলোতে আশানুরূপ ক্রেতাসমাগম হয়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মেলা জমে উঠবে এবং ক্রেতাসমাগম বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিক্রেতা ও মেলার আয়োজকরা।
মেলার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১টি স্টল বসেছে। মূলত করোনাসহ নানা কারণে গত বছর স্বল্প পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এবার সেই তুলনায় বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলবে। মেলায় ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হল রুম ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের জন্য আলাদা একটি মিনি পার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরেজমিনে উদ্বোধনের পর থেকে সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়। হল রুমের পশ্চিম পাশের অংশে ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পোশাক, কসমেটিকস, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন পণ্যের স্টল দেখা যায়। তবে হল রুমের পূর্ব পাশ্বের অংশে কিছু স্টল চালু হয়েছে, অধিকাংশ স্টলের কাজ চলছে এবং বন্ধ রয়েছে। আবার অনেক স্টলের স্থান ফাঁকা রয়েছে। একইভাবে হল রুমের বাইরের অংশে অধিকাংশ স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়নি। শিশুদের জন্য তৈরি করার মিনি পার্কের কাজও চলমান রয়েছে। কাজ সমাপ্ত হলে এগুলো চালু করা হবে। মেলার আয়োজন শুরু হলেও স্টলের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
৪০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলায় কিছুই নেই। এখনও অনেক স্টল বন্ধ রয়েছে। কোনও কোনও স্টলের কাজ চলছে। এ কারণে মেলায় ঘুরতে পারছি না। শিশুদের মিনি পার্ক এখনও চালু হয়নি। এখনও মেলা জমে ওঠেনি। হতাশ হয়েছি।
এ বিষয়ে স্টল মালিক ও নির্মাণ শ্রমিকরা বলছেন, গত দুই দিন সেভাবে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া একই শ্রমিক বিভিন্ন স্টলে কাজ করেছে। ফলে অনেক কাজ পিছিয়ে গেছে। দেশি স্টলের পাশাপাশি বিদেশি স্টল রয়েছে। মেলায় মনের মতো করে ডেকোরেশন করতে সময় একটু বেশি লেগেছে।
হল রুমের পূর্ব পাশে পোশাকের দোকানের জন্য কাঠের ফ্রেম তৈরি করছেন মিস্ত্রি রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১৫ দিন কাজ করে ১২টা দোকান নির্মাণ ও ডেকোরেশনের কাজ
করেছি। এখনও তিনটি দোকানের কাজ চলমান রয়েছে।
হল রুমের বাইরের অংশে আসবাবপত্রের একটি স্টলের জন্য কাজ করছিলেন মিস্ত্রি নুরুল হক। তিনি বলেন, ২০ দিন ধরে বিভিন্ন স্টলের ডেকোরেশনের কাজ করছি। একেক দিন একেক স্থানে কাজ করেছি। আজ এই দোকানের কাজ করছি। আমিসহ আরও দুজন কাজ করছে। আগামী কালের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করেছেন। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মেলার স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও কিছু স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে স্টলের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, মেলায় দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মোট ৩৩১টি স্টল রয়েছে। যার মধ্যে প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বড় পরিসরে এ বছর মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলার স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর আমি সব স্টলের দোকানিকে চিঠি দিয়েছি। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো করতে পারলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শেষ করতে পারেনি। শেষ মুহূর্তে উদ্বোধনের প্রস্তুতির কারণে অনেকে কাজ করতে পারেনি।
জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো শাটল বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে, প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ থাকবে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।