ঢাকা , বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল

মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের কাছে মানবিক করিডর (হিউম্যান পেসেজ) দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শেখ বাজার এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গাজায় এখন যুদ্ধ চলছে। সেখানে যাওয়া যায় না। কিন্তু জাতিসংঘ থেকে সেখানে খাবার, ওষুধ পাঠাতে হলে জর্ডান থেকে অথবা মিসর থেকে রাস্তা তৈরি করে, ওদিক দিয়ে গাজায় পাঠানো হচ্ছে। ভালো কথা, মানবিকতার দরকার আছে। আমার কথা হচ্ছে আজকে বাংলাদেশকে ওই জায়গায় পৌঁছাতে হলো যে, বাংলাদেশকে একটা হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডর) দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত আছে। সরকারের উচিত ছিল এ বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা। তারা এটা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডর) দিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, জাতিগতভাবে মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আমরা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। একে তো রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। আবার মানবিক করিডর দিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হোক তা চাই না। সেগুলো আলোচনা করে করিডর দেওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছর আমরা কথা বলারও সুযোগ পাইনি। মিটিং-মিছিল করতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরেছে, নির্যাতন চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন সেই অধিকার ফেরত আনতে আমরা আন্দোলন করছি। সরকার যদি সত্যিই নির্বাচনের ইচ্ছা রাখে, স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।

তিনি বলেন, এই ১৫ বছরে আমাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের ভাইয়ের হাত পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। বহুবার আমাদের লোকজনকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ছাত্র-জনতা মিলে নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। সেই সরকারের প্রধান হিসাবে আমরা বেছে নিয়েছি নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। আমরা বিশ্বাস করি, তার নেতৃত্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।

জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? তখন উপস্থিত জনতা ‘না’ সূচক উত্তর দেন।

তিনি বলেন, এখন সুযোগ এসেছে। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।

পরে বিকালে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শেখবাজার এলাকায় মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এখন এমপি নেই, সমস্যা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তাই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সরকার যদি সত্যিই নির্বাচনের ইচ্ছা রাখে, স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ ১৫ বছর ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। আমরা নির্বাচিত হলে চাকরি, কৃষকের ন্যায্য পাওনা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করব। বিশেষ করে তরুণদের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেব।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল হামিদ, জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, নার্গুন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান পয়গাম আলীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ ও সাংগঠনিক তত্পরতা শুরু করেছেন। তিন দিনের সাংগঠনিক সফর এসে ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন।

মঙ্গলবার জামালপুর ও চিলা রং ইউনিয়নে গণসংযোগ করবেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। পরদিন দেবীপুর ও বড়গাঁ ইউনিয়নে গণসংযোগ শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন তিনি।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল

আপডেট সময় ১২:৫৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের কাছে মানবিক করিডর (হিউম্যান পেসেজ) দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শেখ বাজার এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গাজায় এখন যুদ্ধ চলছে। সেখানে যাওয়া যায় না। কিন্তু জাতিসংঘ থেকে সেখানে খাবার, ওষুধ পাঠাতে হলে জর্ডান থেকে অথবা মিসর থেকে রাস্তা তৈরি করে, ওদিক দিয়ে গাজায় পাঠানো হচ্ছে। ভালো কথা, মানবিকতার দরকার আছে। আমার কথা হচ্ছে আজকে বাংলাদেশকে ওই জায়গায় পৌঁছাতে হলো যে, বাংলাদেশকে একটা হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডর) দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত আছে। সরকারের উচিত ছিল এ বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা। তারা এটা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডর) দিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, জাতিগতভাবে মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আমরা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। একে তো রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। আবার মানবিক করিডর দিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হোক তা চাই না। সেগুলো আলোচনা করে করিডর দেওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছর আমরা কথা বলারও সুযোগ পাইনি। মিটিং-মিছিল করতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরেছে, নির্যাতন চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন সেই অধিকার ফেরত আনতে আমরা আন্দোলন করছি। সরকার যদি সত্যিই নির্বাচনের ইচ্ছা রাখে, স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।

তিনি বলেন, এই ১৫ বছরে আমাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের ভাইয়ের হাত পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। বহুবার আমাদের লোকজনকে কারাবরণ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ছাত্র-জনতা মিলে নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছি। সেই সরকারের প্রধান হিসাবে আমরা বেছে নিয়েছি নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। আমরা বিশ্বাস করি, তার নেতৃত্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।

জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? তখন উপস্থিত জনতা ‘না’ সূচক উত্তর দেন।

তিনি বলেন, এখন সুযোগ এসেছে। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।

পরে বিকালে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের শেখবাজার এলাকায় মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, এখন এমপি নেই, সমস্যা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তাই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। সরকার যদি সত্যিই নির্বাচনের ইচ্ছা রাখে, স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ ১৫ বছর ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। আমরা নির্বাচিত হলে চাকরি, কৃষকের ন্যায্য পাওনা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করব। বিশেষ করে তরুণদের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেব।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল হামিদ, জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, নার্গুন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান পয়গাম আলীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ ও সাংগঠনিক তত্পরতা শুরু করেছেন। তিন দিনের সাংগঠনিক সফর এসে ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন।

মঙ্গলবার জামালপুর ও চিলা রং ইউনিয়নে গণসংযোগ করবেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। পরদিন দেবীপুর ও বড়গাঁ ইউনিয়নে গণসংযোগ শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন তিনি।