ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫ Logo চুলের রহস্য ফাঁস করলেন ক্যাটরিনা Logo গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন Logo ১২ ম্যাচে নবম হার ম্যানসিটির, আর্সেনালের বড় জয় Logo নারায়নগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হলেন- মোঃ সোলায়মান Logo ডোপ টেস্টে চালকসহ দুইজনের মদপানের সত্যতা মিলেছে Logo জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি-রাজাকার’ বলায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা Logo ৩০ ডিসেম্বর চুনকা পাঠাগারে আন্তর্জাতিক লেখক দিবস উদযাপন করবে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব নারায়ণগঞ্জ Logo মদনগঞ্জ দারুস সালাম মাদরাসা’র বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ, পুরস্কার বিতরণ ও দোয়ার অনুষ্ঠান Logo উত্তর ভারতের প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামানো হচ্ছে ‘পুষ্পা-২’

পাল্টে যাচ্ছে রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়

পাল্টে যাচ্ছে ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চেহারা। জীর্ণশীর্ণ, রংচটা ভবনগুলো ভেঙে ফেলে গড়ে তোলা হবে একেবারে দৃষ্টিনন্দন করে। একইসঙ্গে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের চারপাশে ফুলের বাগান গড়ে তোলাসহ একেবারে সবুজে সাজানো হবে। এ জন্য ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি, উত্তরার ৩টি এবং পূর্বাচলে নতুনভাবে স্থাপন করা ১১টিসহ মোট ৩৫৬টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭টি বিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান ইতিমধ্যে সম্পন্ন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ৮২টি বিদ্যালয়ের এবং দরপত্র হয়ে গেছে ১১৫টি বিদ্যালয়ের। এছাড়া ১০৪টি বিদ্যালয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং ৬৭টি বিদ্যালয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে একটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ১০টি বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সময়ের আলোকে বলেন, ‘আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে আমরা বেশ কিছু ভালো কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষার মান কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষার মান নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন তোলা হয়। আমরা এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি কীভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ভবন ও পরিবেশ আরও কীভাবে সুন্দর করা যায় সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তার আলোকেই প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগরীর স্কুল ভবনগুলো ও প্রাঙ্গণ দৃষ্টিনন্দন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে যে ধারণা রয়েছে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। প্রথম ফেইজে এ কার্যক্রম ঢাকার স্কুলে করা হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই করা হবে।’

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-প্রাথমিক শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টির বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ করা, ১৭৭টি বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৬৭টি কক্ষের অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা, উত্তরায় ৩টি এবং পূর্বাচলে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটানো, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, উচ্চশিক্ষা এবং পরিপূর্ণ উন্নতির ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিতসহ শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা হবে।

জানা যায়, ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন হয়। প্রথমে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থ সরকার বহন করবে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উল্লেখ করা হলেও কাজ শেষ হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়- উভয়ই বাড়ানো হয়েছে। মূলত মহামারি করোনার কারণে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রেট শিডিউল পরিবর্তন করা হয়। এতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজে দেরি হয়। এ কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয় এবং ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এখন ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ কতদিন বাড়ানো হবে সেটিও এখন ঠিক হয়নি। কারণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত হলেও কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০০টি বিদ্যালয় ভবন পুনর্নির্মাণ ও মেরামত করার লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

নতুন আঙ্গিকে আসছে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও খাদ্য কার্যক্রম
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আরেকটি বড় কাজ করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায়। বিদ্যালয়গুলোতে পিইডিপির আওতায় শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও খাদ্য কার্যক্রম চলে। এ প্রকল্প মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এবং এর চতুর্থ ফেজের কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমও চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যেত, কিন্তু করোনার কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটায় আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ কাজকে কীভাবে ভালোমতো শেষ করা যায় সেটা নিয়েও তৎপর রয়েছে মন্ত্রণালয়। কারণ এ প্রকল্পের কাজে প্রচুর বিদেশি ফান্ড রয়েছে। দেখা যায় অনেক প্রকল্পেই কাজ শেষ না হওয়ার কারণে প্রকল্পের টাকা ফেরত যায়। তবে এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তেমনটি হচ্ছে না। এ প্রকল্পের কাজ পুরোটাই সফলভাবে করা হচ্ছে।

এছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলের কার্যক্রম শেষ হলে আবার নতুন করে এবং নতুন আঙ্গিকে চালু করবে, যাতে মিড-ডে মিলে শিশুদের পুষ্টির দিক বিবেচনা করে আরও নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করা যায়। এটা প্রস্তুতের কাজ চলছে। পিইডিপি-৫-এর আওতায় এই মিড-ডে মিল পরিচালনা করা হবে। এর প্রথম ফেজে দেড়শ উপজেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব উপজেলার প্রত্যেক স্কুলের সব শিশু মিড-ডে মিল পাবে। একেক দিন একেক রকম খাবার দেওয়া হবে। খাবারের মধ্যে থাকবে ডিম, দুধ, পাউরুটি, কলা, মৌসুমি ফল। ইতিমধ্যে এ প্রকল্প নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রাথমিকের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। প্রধান উপদেষ্টা এটা অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে দ্রুত পাস করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রকল্প পাস হয়ে গেলে এ কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রাথমিকের আরও কিছু ভালো খবর
প্রাথমিকের আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯৫০ কোটি টাকার একটি ফান্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে পাস হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তিনি তার কাজ বুঝে নিয়েছেন। অর্থাৎ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

আরও জানা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের বদলে দুই বছর করা হচ্ছে। সুতরাং প্রি-প্রাইমারিতে এখন দুটি বছর যুক্ত হতে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারুকলার শিক্ষকের পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটাও প্রথমে ক্লাস্টারভিত্তিক করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশের স্কুলে এ পদ সৃষ্টি করা হবে। চারুকলার শিক্ষকের পদও ৫ হাজারের অধিক হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে এতগুলো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য জেলাভিত্তিক পরিদর্শন টিম তৈরি করা হচ্ছে। তারা কী পরিদর্শন করবে, তাদের কাজ কী হবে তার দিকনির্দেশনাও তৈরি করা হয়েছে।

প্রাথমিকের শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট আছে। যারা অবহেলিত বা পথশিশু রয়েছে তাদের লক্ষ্য করে ওই ট্রাস্টের অধীনে কিছু স্কুল পরিচালনা করা হয়। সকাল, দুপুর বা সন্ধ্যা যখন এসব শিশুকে একত্রে পাওয়া যাবে বা একত্র করা যাবে তখন সেখানে এ স্কুল পরিচালনা করা হবে। এটা অনেকটা ভাসমান স্কুলের মতো। এসব স্কুল পরিচালনার জন্য ওই শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করে। এ ট্রাস্ট অনেক দিন ধরেই অকার্যকর অবস্থায় ছিল। একে আবার সচল করা হচ্ছে। এসব স্কুলের শিক্ষকরা মূলত ওই ট্রাস্টের অধীনে নিয়োগ পায়। এ ট্রাস্টে অনুদান দেয় সরকার। এছাড়া ট্রাস্টেরও নিজস্ব তহবিল রয়েছে। এ দুই খাতের অর্থে স্কুলের খরচ বহন করা হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

পাল্টে যাচ্ছে রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়

আপডেট সময় ১০:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাল্টে যাচ্ছে ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চেহারা। জীর্ণশীর্ণ, রংচটা ভবনগুলো ভেঙে ফেলে গড়ে তোলা হবে একেবারে দৃষ্টিনন্দন করে। একইসঙ্গে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের চারপাশে ফুলের বাগান গড়ে তোলাসহ একেবারে সবুজে সাজানো হবে। এ জন্য ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি, উত্তরার ৩টি এবং পূর্বাচলে নতুনভাবে স্থাপন করা ১১টিসহ মোট ৩৫৬টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭টি বিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান ইতিমধ্যে সম্পন্ন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ৮২টি বিদ্যালয়ের এবং দরপত্র হয়ে গেছে ১১৫টি বিদ্যালয়ের। এছাড়া ১০৪টি বিদ্যালয়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং ৬৭টি বিদ্যালয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে একটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ১০টি বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সময়ের আলোকে বলেন, ‘আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে আমরা বেশ কিছু ভালো কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষার মান কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষার মান নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন তোলা হয়। আমরা এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি কীভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ভবন ও পরিবেশ আরও কীভাবে সুন্দর করা যায় সে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তার আলোকেই প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগরীর স্কুল ভবনগুলো ও প্রাঙ্গণ দৃষ্টিনন্দন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে যে ধারণা রয়েছে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। প্রথম ফেইজে এ কার্যক্রম ঢাকার স্কুলে করা হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই করা হবে।’

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-প্রাথমিক শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৪টির বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ করা, ১৭৭টি বিদ্যালয়ের ১ হাজার ১৬৭টি কক্ষের অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা, উত্তরায় ৩টি এবং পূর্বাচলে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটানো, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, উচ্চশিক্ষা এবং পরিপূর্ণ উন্নতির ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিতসহ শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা হবে।

জানা যায়, ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন হয়। প্রথমে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থ সরকার বহন করবে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উল্লেখ করা হলেও কাজ শেষ হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়- উভয়ই বাড়ানো হয়েছে। মূলত মহামারি করোনার কারণে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রেট শিডিউল পরিবর্তন করা হয়। এতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজে দেরি হয়। এ কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয় এবং ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এখন ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ কতদিন বাড়ানো হবে সেটিও এখন ঠিক হয়নি। কারণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত হলেও কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০০টি বিদ্যালয় ভবন পুনর্নির্মাণ ও মেরামত করার লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

নতুন আঙ্গিকে আসছে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও খাদ্য কার্যক্রম
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আরেকটি বড় কাজ করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায়। বিদ্যালয়গুলোতে পিইডিপির আওতায় শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও খাদ্য কার্যক্রম চলে। এ প্রকল্প মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এবং এর চতুর্থ ফেজের কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমও চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যেত, কিন্তু করোনার কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটায় আগামী জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ কাজকে কীভাবে ভালোমতো শেষ করা যায় সেটা নিয়েও তৎপর রয়েছে মন্ত্রণালয়। কারণ এ প্রকল্পের কাজে প্রচুর বিদেশি ফান্ড রয়েছে। দেখা যায় অনেক প্রকল্পেই কাজ শেষ না হওয়ার কারণে প্রকল্পের টাকা ফেরত যায়। তবে এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তেমনটি হচ্ছে না। এ প্রকল্পের কাজ পুরোটাই সফলভাবে করা হচ্ছে।

এছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলের কার্যক্রম শেষ হলে আবার নতুন করে এবং নতুন আঙ্গিকে চালু করবে, যাতে মিড-ডে মিলে শিশুদের পুষ্টির দিক বিবেচনা করে আরও নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করা যায়। এটা প্রস্তুতের কাজ চলছে। পিইডিপি-৫-এর আওতায় এই মিড-ডে মিল পরিচালনা করা হবে। এর প্রথম ফেজে দেড়শ উপজেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব উপজেলার প্রত্যেক স্কুলের সব শিশু মিড-ডে মিল পাবে। একেক দিন একেক রকম খাবার দেওয়া হবে। খাবারের মধ্যে থাকবে ডিম, দুধ, পাউরুটি, কলা, মৌসুমি ফল। ইতিমধ্যে এ প্রকল্প নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রাথমিকের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। প্রধান উপদেষ্টা এটা অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে দ্রুত পাস করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রকল্প পাস হয়ে গেলে এ কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রাথমিকের আরও কিছু ভালো খবর
প্রাথমিকের আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৯৫০ কোটি টাকার একটি ফান্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে পাস হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তিনি তার কাজ বুঝে নিয়েছেন। অর্থাৎ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

আরও জানা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এক বছরের বদলে দুই বছর করা হচ্ছে। সুতরাং প্রি-প্রাইমারিতে এখন দুটি বছর যুক্ত হতে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারুকলার শিক্ষকের পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটাও প্রথমে ক্লাস্টারভিত্তিক করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশের স্কুলে এ পদ সৃষ্টি করা হবে। চারুকলার শিক্ষকের পদও ৫ হাজারের অধিক হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে এতগুলো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য জেলাভিত্তিক পরিদর্শন টিম তৈরি করা হচ্ছে। তারা কী পরিদর্শন করবে, তাদের কাজ কী হবে তার দিকনির্দেশনাও তৈরি করা হয়েছে।

প্রাথমিকের শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট আছে। যারা অবহেলিত বা পথশিশু রয়েছে তাদের লক্ষ্য করে ওই ট্রাস্টের অধীনে কিছু স্কুল পরিচালনা করা হয়। সকাল, দুপুর বা সন্ধ্যা যখন এসব শিশুকে একত্রে পাওয়া যাবে বা একত্র করা যাবে তখন সেখানে এ স্কুল পরিচালনা করা হবে। এটা অনেকটা ভাসমান স্কুলের মতো। এসব স্কুল পরিচালনার জন্য ওই শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করে। এ ট্রাস্ট অনেক দিন ধরেই অকার্যকর অবস্থায় ছিল। একে আবার সচল করা হচ্ছে। এসব স্কুলের শিক্ষকরা মূলত ওই ট্রাস্টের অধীনে নিয়োগ পায়। এ ট্রাস্টে অনুদান দেয় সরকার। এছাড়া ট্রাস্টেরও নিজস্ব তহবিল রয়েছে। এ দুই খাতের অর্থে স্কুলের খরচ বহন করা হবে।