একই দিনে পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইস ডে। বসন্তের বাসন্তী আর ভালোবাসার লাল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল তাই। উন্মাতাল হাওয়ায় ভালোবাসার পরশে প্রেমিক যুগলদের কাটল অন্যরকম একটা দিন। সারা দিন ঘোরাঘুরি, গোলাপ বিনিময় আর প্রেমময় বাহুর বন্ধনে শাহবাগ, টিএসসি, ফুলার রোড, নিলক্ষেত, ধানমন্ডি হয়ে উঠেছিল প্রেমকানন।
পহেলা ফাল্গুনের দিনটি নগরে বসন্ত উৎসব এ দিনের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি অনুষ্ঠিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এক বছর বিরতি দিয়ে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনটি ফিরেছে চারুকলায়। ২৮ বছরের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটেছিল ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারিকালে নগরজুড়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে উৎসব আয়োজন করা যায়নি
মঙ্গলবার সকালে নানা বাদ্যযন্ত্রে ধ্রুপদ রাগ বিহারে ঝংকার তুললেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। লুম্বিনী তালুকদার, অব্যয়, ঋদ্ধি ও স্মরণিকা সাহার সঙ্গে পাখোয়াজে সংগত করেন প্রশান্ত ভৌমিক। সমবেত এ বাদ্যযন্ত্র ও রাগাশ্রয়ী সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্ত উৎসবের
অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি। একক সংগীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, প্রিয়াংকা গোপ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও সুচি দেবনাথ। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে গীতাঞ্জলি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা ও বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (ওয়াইজঘাট)। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে সুরঙ্গমা, ধৃতি নর্তনালয়, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, নৃত্যম, ভাবনা, গৌড়ীয় নৃত্য সারথী, নৃত্যনন্দন, সাধনা সংস্কৃতি মন্ডল ও স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীরা। এ ছাড়াও নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তা দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় তাদের চিরায়ত সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে।
বসন্ত উৎসবের সকাল-পর্বে বসন্ত কথন পর্বে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সবাইকে তিনি বসন্ত উৎসবের ভালোবাসা জানান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান, আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঋতুভিত্তিক এসব আয়োজনের মাধ্যমে মানবিক সম্পর্কের উন্নয়ন যেন হয়।
জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, সমাজের ভেতরে বাহিরে যত দীন হচ্ছে মানুষও জীবনে-মননে ততই হতশ্রী হচ্ছে। বর্ষা বসন্তে তবু মানুষ বিমনা হয়, অজান্তে উৎফুল্ল হয়। কেউ হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে বাসন্তী রঙ বসনও তুলে নেয়। কিন্তু সবাই মিলে বসন্ত বরণ হয় না। সবার মিলবার এই ক্ষেত্রটি আমরা তৈরি করতে চেয়েছি। প্রকৃতির সুরে রঙে আমরা আমাদের এক করে নিতে চেয়ে পহেলা ফাল্গুন একত্র হই। বসন্ত উৎসব তারুণ্যের উৎসব।
অতীতের মতো এবারও উত্তরার ৩নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি রোড বঙ্গবন্ধু মুক্ত মঞ্চ ও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিকাল থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
চারুকলা অনুষদের বিকালের পর্বে শুরুতে বেঙ্গল মিউজিকের শিল্পীরা বসন্ত রাগের ধ্রুপদ খেয়াল পরিবেশন করেন। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সুরধ্বনি, সুরের ধারা, ভিন্নধারা, উজান, সুরবিহার, নিবেদন, পঞ্চভাস্কর, সুরসপ্তক।
দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ত্রিশাল (ক্ষুদ্র জাতি নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতালদের পরিবেশনা), সুরবিহার, পাহাড়ি রং (নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তা মারমা সম্প্রদায়ের পরিবেশন), কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, সৌন্দর্য্য প্রিয়দর্শিনী, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস্ (ওয়াইজঘাট), ধ্রুপদ কলা কেন্দ্র, নবচেতনা, আঙ্গীকাম, জাগো আর্ট সেন্টার, ধ্রুপদী শিক্ষাকেন্দ্র, নৃক্কন ফারফরমিং আর্ট সেন্টার, নৃত্যালোক, ঝংকার, নৃত্যমঞ্চ, নন্দন কলা কেন্দ্র, ভোরের পাখি নৃত্যাঙ্গন, বকুল নৃত্যালয়, নিখন রায়, পরশমনি, সৃষ্টিশীল একাডেমি, পরম্পরা নৃত্যালয়, সুরধ্বনি বিদ্যাপাঠ, নৃত্যচন্দ ও নৃত্যসুর।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন-অনিমা মুক্তি গমেজ, অনিমা রায়, নিলয় আকাশ, মহাদেব ঘোষ, বিশ্বজিৎ রায়, ফেরদৌসি কাকলি, জিনাত ফেরদৌস, নুসরাত বিনতে নূর, মামুন জাহিদ খান, রিফাত জাহান মিতু, ইন্দ্রানী সরকার, জান্নাতুল ফেরদৌস লাকী, তাপস ঘোষ, মীম, সন্ধ্যা রায় ভাবনা, সরদার রহমতুল্লাহ, শান্তা সরকার, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল হালিম খান, ফারজানা ইভা, তামান্না নিগার তুলি, আসিফ ইকবাল সৌরভ, তানভির আলম সজিব, ইয়াসমিন মুস্তারি, নিশি কাওসার, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, আবিদা রহমান সেতু, মাহজাবিন রহমান শাওলী, মিরা মন্ডল, এসএম মেজবা, শিমুল সাহা, পল্লব গমেজ, সুরাইয়া পারভিন, সমর বড়ুয়া, বর্ষা রাহা, তাসমিয়া হোসেন বর্ষা, সাথী সরকার, মারুফ হোসেন, রত্না সরকার ও অনিন্দিতা খান।
একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন-রফিকুল ইসললাম, ইকবাল খোরশেদ জাফর, বেলায়েত হোসেন, রেজীনা ওয়ালী লিনা, মাসকুর এ সাত্তার কল্লোল, পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আজিজুল বাশার মাসুম, তামান্না সারোয়ার নিপা ও সুপ্রভা সেবতি।